Take a fresh look at your lifestyle.

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা কী? প্রকিয়াসমূহ আলোচনা কর।

0 661

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা কী? প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য বৈজ্ঞানিক প্রকিয়াসমূহ আলোচনা কর।

 

প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা

 

বিজ্ঞান মুখস্ত করার বিষয় নয়। বিজ্ঞানকে জানতে ও বুঝতে হলে হাতে-কলমে  কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা ও সামর্থ্যরে উপর ভিত্তি করে কোন পাঠটি  কখন, কীভাবে, কোন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে পাঠদান করতে হবে সেটা জানার দায়িত্ব শিক্ষকের।

শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হলে তাদের মাঝে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা জানা প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ভীতি দূর করতে হলে পাঠটি সহজ ও আকর্ষনীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

এ জন্য প্রাথমিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা অনুসরণ করা দরকার। যাতে, বিজ্ঞান শিখনের ক্ষেত্রে পূর্বানুমান, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপকরণ, শ্রেণিকরণ, পরীক্ষণ, ব্যাখ্যাকরণ, অনুমিতকরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে। এখানে আমরা বিজ্ঞানের প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতাসমূহ এবং ব্যবহার নিয়ে আমরা জানব।

 

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাসমূহের ধরন:

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাসমূহ দু’ধরনের – বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়ারকরণ দক্ষতা ও ব্যবহারিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা।

বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা হচ্ছে যেখানে প্রধানত বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের দরকার হয়। যেমন-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা বা গাণিতিক হিসাব করা।

আর ব্যবহারিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা হলো যেখানে হাতেকলমে কাজের দরকার হয়। যেমন: কোন কিছুর দৈর্ঘ্য মাপা।

ব্যবহারিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতার ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজেরও দরকার হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে হাতে কলমে কাজের গুরুত্ব বেশি। ব্যবহারিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতাকে সাধারণভাবে দু’ভাগে ভাগ করা হয়- মৌলিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা ও সমন্বিত প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা। মৌলিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা: মৌলিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতাগুলো অপেক্ষাকৃত সরল; এ ধরনের দক্ষতা অর্জন অন্য দক্ষতা অর্জনের বা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে না।

পর্যবেক্ষণ, পরিমাপকরণ,  শ্রেণিকরণ, সম্ভাব্য ব্যাখ্যাদান, অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এগুলো মৌলিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতার উদাহরণ। সমন্বিত প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা: এ ধরনের দক্ষতাগুলো সাধারণত একাধিক মৌলিক প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতার সমন্বয়ে গঠিত। পরীক্ষণ এরকম একটি দক্ষতা। পরীক্ষণ দক্ষতা অর্জন করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে অন্তত অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও চলক নিয়ন্ত্রণ এ দু’টি দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

 

বিজ্ঞানের প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতাসমূহ :

(ক) পূর্বানুমান :

বিজ্ঞানের মৌলিক দক্ষতাসমূহের মধ্যে পূর্বানুমান একটি। আমাদের  বিভিন্ন কাজ কর্মে আমরা পূর্বানুমান করে থাকি। পূর্বানুমান হলো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোন জানা তথ্যের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে  কী ঘটতে পারে তার পূর্বাভাস।

যেমন- সমুদ্র বা সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভ’মিকম্প হলে সুনামি হওয়ার আশংকা থাকে। অতীতে এ জাতীয় ঘটনা অনেক ঘটেছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, সুনামি হতে পারে, এটাই পূর্বানুমান। পূর্বানুমান কখনই অনুমান বা আন্দাজের বিষয় নয়, পূর্বানুমান অবশ্যই জানা তথ্যের  উপর ভিত্তি করে হতে হবে।

 

(খ) পর্যবেক্ষণ :

সাধারণভাবে আমরা পর্যবেক্ষণ বলতে বুঝি কোন কিছু মনোযোগ দিয়ে দেখা। আসলে তা নয়, পর্যবেক্ষণ হলো- সকল ইন্দ্র্রিয়গ্রাহ্য প্রত্যক্ষণ। অর্থাৎ ইন্দ্র্রিয়সমূহের প্রত্যক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে গভীরভাবে কোন কিছুর উদ্দেশ্যে দেখা।

যেমন- চোখ দিয়ে আকার-আকৃতি বা রং, নাক দিয়ে ঘ্রাণ, জিহ্বা দিয়ে স্বাদ (তিক্ততা, লবনাক্ততা), কান দিয়ে শোনা বা শব্দের তীব্রতা/ছন্দ প্রত্যক্ষ করা, স্পর্শ করে বস্তুর  গঠনশৈলী আকার আকৃতি ইত্যাদি নিণর্য় করতে পারা। শিক্ষকের দায়িত্ব হলো কোন বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার সময় শিক্ষার্থীদের সকল ইন্দ্র্রিয় ব্যবহারে সহায়তা করা। বিজ্ঞানের দক্ষতাসমূহের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।

(গ) শ্রেণিকরণ :

কোন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বস্তুকে একাধিক দলে বা শ্রেণিতে সাজানোকে শ্রেণিকরণ বলা হয়। দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুরা কোনো বৈশিষ্ট্যের/কাজের ভিত্তিতে বিভিন্ন বস্তুকে দু’টি ভাগে ভাগ করতে পারার কথা।

যেমন-কোন ফুলের ঘ্রাণ আছে আর কোন ফুলো ঘ্রাণ নেই। পক্ষান্তরে, ৩য়-৫ম শ্রেণির শিশুরা বস্তুসমূহকে অনেকগুলো শ্রেণিতে বিভক্ত করতে পারা উচিত। যেমন : উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের/আকারের ভিত্তিতে শ্রেণিকরণ করা-বিরুৎ, গুল্ম, বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ অথবা বড়, মাঝারি, ছোট জাতীয় উদ্ভিদ।

ঘ) পরিমাপ/মাপকরণ :

শিশুরা প্রথম অবস্থায় পরিমাপ যন্ত্রের সাহায্যে কোন কিছু মাপতে পারে না। তবে দু’জন সহপাঠীর মধ্যে কে লম্বা আর কে ছোট এ জাতীয় তুলনা তারা করতে পারে। শিক্ষার্থীরা আরও নির্ণয় করতে পারে দুটি বস্তুর মধ্যে কোনটি ভারী আর কোনটি হালকা। শিশুরা ছোট কোন কিছুর সাহায্যে বড় কিছু মাপতে শুরু করে।

যেমন- বই বা খাতা দিয়ে একটি বেঞ্চ বা টেবিল মাপা। যদিও এ পরিমাপ আদর্শ পরিমাপ নয় তবুও শিশুদের পরিমাপ শেখানোর জন্য এই ধরনের পরিমাপ দিয়েই শুরু করা ভালো। শিশুদের বলা যায় যে শ্রেণিকক্ষটি তোমার পায়ের পাতা দিয়ে মাপ। দেখ এটি তোমার কতটি পায়ের পাতার সমান লম্বা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষের দিকে শিশুকে স্কেল/ফিতা ব্যবহার করে মাপতে শেখানো যায়। মোট কথা  বস্তুসমূহকে তুলনা করার জন্য পরিমাপ করা হয়।

(ঙ) সম্ভাব্য ব্যাখ্যাদান :

বিজ্ঞানের প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতাগুলোর মধ্যে  ব্যাখ্যাদান  একটি আবশ্যকীয় দক্ষতা। কারণ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ কার্য সম্পাদনের সময় কি ঘটছে তা দেখে  সম্ভাব্য ব্যাখ্যা করা। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধারনা পরিষ্কার হওয়ার জন্য বিস্তারিত আলোচনা বা ব্যাখ্যাকরণ (Explanation) করা হয়ে থাকে।

আমরা যা পর্যবেক্ষণ করি তার একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা প্রদান করার চেস্টা করে থাকি। যেমন- নূহা নামের শিশুটি কুকুর দেখে কাঁদে এটি আপনার পর্যবেক্ষণ। কিন্তু সে কেন কাঁদে তা যদি বলেন তা হবে অনুমান মাত্র। আর যদি আপনি বলেন নূহা কুকুর দেখে ভয় পায়, তাই সে কাঁদে  তা হলে তা হবে সম্ভাব্য ব্যাখ্যাদান।

 

(চ) যোগাযোগ বা ফল প্রকাশ :

পর্যবেক্ষণ হতে পাওয়া উপাত্তকে কোন নির্দিষ্টরূপে লিপিবদ্ধ বা প্রকাশ করতে হয় । যাতে অন্যরা উপাত্তসমূহকে বুঝতে পারে অথবা পর্যবেক্ষণকারী নিজেই পরে কোন এক সময়ে তা বুঝতে পারে।

শিশুরা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করতে/ উপাত্ত উপস্থাপন করতে শেখে। সঠিক ছবি ও চিত্র আঁকা, সঠিক চার্ট ও লেখচিত্র (Graph) তৈরি, যথাযথ মডেল নির্মাণ এবং পরিষ্কার ভাষায় বর্ণনার মাধ্যমে শিশু কোন বস্তু বা ঘটনাকে প্রকাশ করতে পারে।

(ছ) পরীক্ষণ :

পরীক্ষণ হলো -‘কী ঘটবে’ তা দেখার জন্য কিছু একটা করা।

বায়ু স্থান দখল করে কিনা, তা পরীক্ষার জন্য লাগবে পানি ও  দুইটি বেলুন। প্রথমে পানি দিয়ে একটি বেলুন ভর্তি করুন। আপনি জানেন যে পানি একটি পদার্থ এবং জায়গা দখল করে; তাই পানিপূর্ণ বেলুনটি ফুলে উঠেছে।

এবার দ্বিতীয় বেলুনটি ফু দিয়ে বায়ু ভর্তি করুন; বায়ুপূর্ণ বেলুনটিও ফুলে উঠেছে। কেন? বায়ু বেলুনের ভিতরের জায়গা দখল করে বেলুনটিকে ফুলিয়ে তুলছে। কারণ বায়ু অবশ্যই জায়গা দখল করে। মূলতঃ অনুমিত সিদ্ধান্তকে প্রমাণ করার জন্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে হাতে কলমে প্রত্যক্ষভাবে অনুসন্ধান করার প্রক্রিয়াকে পরীক্ষণ বলে।

(জ) অনুমিত সিদ্ধান্ত :

কোন কিছু পরীক্ষা করার আগে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয় ‘কী ঘটতে পারে’? এর উত্তরের একাধিক উত্তর আসতে পারে। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন- জ্বলন্ত মোম বাতিকে গ্লাস দিয়ে ডেকে দিলে কী ঘটতে পারে? কেউ বলবে গ্লাসটি তাপে ফেঁটে যাবে।

কেউ বলবে গ্লাসের ভিতরে ধোঁয়া হয়ে কালো হয়ে যাবে আবার কেউ বলবে মোম বাতিটি নিভে যাবে। উপরের তিনটি ধারণা অবশ্যই তাদের অভিজ্ঞতা ও পূর্বজ্ঞান থেকে হয়ে থাকতে পারে। এখন এর উপর ভিত্তি করে পরীক্ষণ করে দেখা যেতে পারে সত্যিই তা ঘটে কিনা। এটি করলে কী ঘটবে এমন একটি ধারণা যা পরীক্ষা করার যোগ্য তাই অনুমিত সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞান পাঠের শিখন শেখানোর ক্ষেত্রে পূর্বানুমান, পর্যক্ষেণ, পরীক্ষণ, পরিমাপকরণ, শ্রেণিকরণ, ব্যাখ্যাকরণ ও যোগাযোগ বা ফল প্রকাশ ইত্যাদি এই প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে প্রক্রিয়াও ক্ষেত্র বিশেষ পদ্ধতি হতে পারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে কিছু কিছু প্রক্রিয়াকে পদ্ধতিও বলা হয়। যেমন-পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ পদ্ধতি। প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির মধ্যে খুব সামান্য পার্থক্য বলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের দরকার।

কোন একটি বিশেষ প্রক্রিয়া স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। পাঠের প্রয়োজনে যার ভূমিকা বেশি সেই তখন পদ্ধতি, আর পদ্ধতিকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন কৌশল/প্রক্রিয়া প্রয়োজন হয়।

যেমন-পরীক্ষণ প্রক্রিয়া বলতে  বুঝায়, অনুমিত সিদ্ধান্ত প্রমাণ করার জন্য হাতে-কলমে, যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে কোন সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।

কিন্তু পরীক্ষণ পদ্ধতি হল বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষাদান কৌশল/পদ্ধতি, যে পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করে পূর্বানুমান, পর্যবেক্ষণ, ব্যাখ্যাকরণ এর মাধ্যমে হাতে-কলমে নিখুঁতভাবে প্রকাশ করার দক্ষতা অর্জন/লাভ করা যায়। এভাবে পদ্ধতি ও কৌশল/দক্ষতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা প্রদান করুন।

How to bring innovation and creativity to develop education 25

Unlocking the Power of Digital Content: Strategies for Success

 

Leave A Reply