Take a fresh look at your lifestyle.

শিখতে না পারার ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা, রয়েছে ঝরে পড়ার শঙ্কাও

121

করোনাভাইরাস মাহামারির কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নিয়মিত পড়াশোনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এক গবেষণার তথ্য বলছে, প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এখন নিয়মিত পড়ালেখার চর্চায় নেই। তারা শিখতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এটি ঠেকানো না গেলে তাদের শিখন সক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকিই কেবল নয়, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিও তৈরি হবে।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একবছর সময় ধরে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করেছে। সোমবার (১০ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় উঠে এসেছে, একবছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়ালেখায় আগ্রহ হারাচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে শিখতে না পারার ঝুঁকিতে। শহুরে অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি— ছেলেদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ও মেয়েদের মধ্যে ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে আবার অতিদরিদ্র পরিবার থেকে আসা ছেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকা এসব শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফিরতে আগ্রহী। তবে স্কুলে ফিরিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট নয়, তাদের জন্য ‘রিকভারি ক্লাস’সহ বাড়তি কর্মসূচি নিতে হবে। সেটি নিতে ব্যর্থ হলে শিখতে না পারার ঝুঁকিতে থাকা এসব শিক্ষার্থীর শেখার সক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে শিশু-কিশোররা যে স্কুলে যেতে পারছে না, এ বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য সারাদেশে প্রাথমিকের ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট-কোচিংয়ে যাচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ৬১ শতাংশ। এছাড়া এই সময়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মধ্যে রাখার জন্য মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে পড়ানোর চেষ্টাও চলছে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পড়তে বসানোর মূল দায়িত্ব পালন করছেন মায়েরা।
গবেষণায় খরচ বাড়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে। শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত পড়ালেকায় অভিভাবকদের শিক্ষা খরচ বেড়েছে। এ খরচ গ্রামীণ পর্যায়ে বেড়েছে ১১ শতাংশ, শহর পর্যায়ে বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

গবেষণায় পড়াশোনায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষার খরচ বেড়ে পাওয়া, স্কুল খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার মতো বিষয়েগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। এসময় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিনও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ড. মতিন বলেন, স্কুলগামী শিশুদের বড় একটি অংশ শেখার সক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ফলে এসব শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। ঘাটতি পুষিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি কিছু উদ্যোগ নিতে হবে, যেন এই শিশুদের শেখার যে ঘাটতি সেটি পূরণ হয় এবং পরিস্থিতির সঙ্গে শিশুদের মানিয়ে ওঠা সহজ হয়।

ড. জিল্লুর বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আমরা যে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি, সেখান থেকে পিপিআরসি-বিআইজিডি দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সুপারিশ করছে, যেন শিশুদের মধ্যে শিখন প্রক্রিয়া ও উদ্যমের ঘাটতি রোধ করা যায়। এর জন্য নিয়মিত ক্লাসের বাইরেও কর্মসূচি নিতে হবে। সেটি না করতে পারলে আমাদের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ কেবল শিক্ষা থেকে ঝরেই পড়বে না, তারা অদক্ষও হয়ে উঠবে।

গবেষণার সূত্র ধরে নীতিমালা বিষয়ক ‍সুপারিশ তুলে ধরে ড. জিল্লুর বলেন, শিক্ষা খাতে অভিভাবকদের বাড়তি খরচ নিয়ে শঙ্কার বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দিতে পারে।- সারাবাংলা

Comments are closed.