অবসরেও থেমে নেই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক নূরুল আলম
বিদ্যালয়টি সারা বাংলাদেশের রোল মডেলে পরিণত হয়। বিভিন্ন পর্যায়ে সুধীজন, কর্মকর্তা, ২৭ দেশের পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, মতবিনিময় পরিদর্শক দল ও ইউনিসেফের কর্মকর্তারা বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে অভিভূত হন। তারা এই বিদ্যালয়কে অনুকরণীয়, অনুস্মরণীয়, আশ্চর্যজনক ও ফুটন্ত ফুল বলে উল্লেখ করেন।
১৯৭৩ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নূরুল আলম। ১৯৮০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকালে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ছিল মাত্র ১২৫ জন। ক্ষুদ্র পরিসরে জরাজীর্ণ ঘর, অপ্রতুল আসবাবপত্র, শিক্ষাসহায়ক অপরিবেশ তাকে হকচকিত করে।
কিন্তু তার নিবেদিতপ্রাণ নিঃস্বার্থ কর্মচাঞ্চল্যে অল্প দিনেই বিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হতে শুরু করে। শিক্ষক বিভাগীয় ও প্রশাসনিক অন্য কর্মকর্তাদের সহমর্মিতা ও উপদেশে নূরুল আলম দিনে দিনে শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশগত উন্নতি সাধনে সক্ষম হন।
তার কর্মপ্রেরণার ফলস্বরূপ বিদ্যালয়টি বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। যেমন প্রধান শিক্ষকের জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, বিদ্যালয়ের জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, ম্যানেজিং কমিটির জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন। এ ছাড়া রচনা প্রতিযোগিতা, একক অভিনয়, হাতের লেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে বিদ্যালয়টি।
বিদ্যালয়টির পাশাপাশি নূরুল আলম নিজেও একাধিকবার জেলা, উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও তিনি পুরস্কার লাভ করেন। পরে শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০১৩ গাইবান্ধার মধ্য ধানঘড়ায় আমার বাংলা বিদ্যাপিঠ নামের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটিও তার ছোঁয়ায় সুনাম ও সুখ্যাতির সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
আমার বাংলা বিদ্যাপীঠের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাসুদ কবির তুষার বলেন, নুরুল আলম স্যারের গুণের শেষ নেই। তিনি অসংখ্য গুণের অধিকারী। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব। তার প্রতিষ্ঠান ও তিনি নিজেই একাধিক জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনসহ গণমাধ্যমের কাছেও পেয়েছেন সম্মাননা।
একান্তভাবে কথা হয় শিক্ষক নুরুল আলমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। শিক্ষক দিবসটা হচ্ছে শিক্ষক জাতিকে অনুধাবন করার একটা দিবস। শিক্ষকদের দাবি, প্রয়োজন, জাতিকে কীভাবে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলবে, শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। এগুলোই শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক। তার অনুপ্রেরণায় আমি শিক্ষকতা পেশায় আসি। আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করে তাদের অনুভূতি উপলব্ধি করে তাদের মতো করে শেখানোটায় শিক্ষকতা। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আমি আমার জীবনে সফলতা পেয়েছি এবং ছাত্র-ছাত্রীরা সব সময় ভালো ফলাফল করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ কারণে শিবরাম স্কুলকে আমি একটি মডেল স্কুলে পরিণত করতে পেরেছিলাম। এ কারণে অসংখ্য পুরস্কার আমি পেয়েছি। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআর থেকে আমি পুরস্কার পেয়েছিলাম।
অবসরের পর আমি আমার বাংলা বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের আমি শিক্ষাদান করে আসছি।
গত ৫ তারিখ ছিল বিশ্ব শিক্ষক দিবস। সব শিক্ষকের কাছে অনুরোধ, আসুন আমরা নিবেদিতপ্রাণে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করি। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী তৈরি করে জাতিকে উপহার দিই।
সূত্র: ঢা.পি
Comments are closed.