প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষক এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে খুব একটা ভাবার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। বিষেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার বা শিক্ষকদের উন্নয়ন, মেধার বিকাশ সাধনে কার্যকর উপায় ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝেও ভাবনার ঘাটতি দেখা যায়। আবার দুচারজন এটি নিয়ে ভাবলেও তাদের ভাবনাগুলো ঠিক যায়গা মতো পৌঁছায় বলে বাস্তবে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষক নিয়ে ভাবেন এমন একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের লেখা ধারাবাহিক প্রকাশের নিমিত্তে আজকে তুলে ধরা হলো প্রথম পর্ব- (এখানে প্রথম পর্ব হলেও মূলত এটি তার দ্বিতীয় পর্ব)
#শুভ্র_চিন্তা_০২ (চলুন, নিজেকে আবিষ্কার করি)
‘শিক্ষক’ শব্দটি শুনলেই আমাদের মানসপটে একটি আদর্শের প্রতিকৃতি ভেসে ওঠে। শিক্ষক মানেই সাদা মনের মানুষ, শিক্ষক মানেই সমাজে আলো ছড়ানোর কারিগরি, শিক্ষক মানেই সমাজসংস্কারক আর শিক্ষক মানেই শ্বেতশুভ্র ব্যক্তিত্বের অনন্য প্রতীক। আমরা শিক্ষক শব্দটিকে বহুভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে দেখি। এমনকি ইংরেজি Teacher শব্দটির প্রতিটি বর্ণ দিয়ে আলাদা আলাদা অর্থবোধক শব্দ তৈরি করার উদাহরণও আমরা হরহামেশা লক্ষ্য করি।
ঘুম থেকে উঠেই জনৈক অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক সহকর্মীর একটি স্ট্যাটাস দেখে বেশ মর্মাহত ও ব্যথিত হলাম। এমন অঘটন শুধু আজ নয়; আমরা প্রায়শই ফেইসবুকের পাতায় দেখি, যা আমাদের পেশাসত্ত্বাকে সংকুচিত করে। কেউ কারও কন্টেন্ট হুবহু নকল করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে, কেউ আবার অন্যের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছবি ক্রেডিট ছাড়াই নিজের নামে ব্যবহার করছেন। সাথে সাথে আবার ধরাও পড়ছেন। তখন শিক্ষক হিসেবে আমি আরও বেশি লজ্জিত হই, নিজের মাঝে মুখ লুকাই।
অভিযোগ,অনুযোগ আর বিয়োজকের কথার সুর ঘুরিয়ে এবার একটু আপনার দিকে যাই। কেন আপনি নিজেকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখছেন? কেনই বা আপনার আমিত্বকে অন্যের কাছে অথর্ব, নিকাম্মা আর অকালকুষ্মাণ্ড হিসেবে তুলে ধরছেন?
মনে রাখবেন- স্রষ্টা প্রতিটি মানুষকে তার অন্তর্নিহিত একটি প্রচ্ছন্ন শক্তি দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। শুধু দরকার একটু ঘষেমেজে, একটু চর্চা করে, একটু আন্তরিক চেষ্টা করে প্রচ্ছন্ন শক্তিকে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে বের করে আনা। আপনার মাঝে থাকা ঐশ্বরিক ক্ষমতাশক্তির যে অস্তিত্ব আছে তা যদি কাজে লাগান তাহলে আপনি চাইলেই পাথরে ফুল ফোটাতে পারবেন, আকাশের তারা পেড়ে মতো করে মালা গাঁথতে পারবেন, হিমালয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে সমতলে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপন করতে পারবেন। আপনার স্বপ্ন হাতের মুঠোয় এসে নিজেই ধরা দিবে।
আপনি সাফল্যকে তখন অনায়াসে ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। তাহলে কেন এই প্রবণতা? কেন নিজেকে জাতির সামনে ছোট করে তুলে ধরা? কেন নিজের স্রষ্টাপ্রদত্ত শক্তিকে দমিয়ে রাখা? কেনইবা ‘শিক্ষক’ শব্দটিকে জাতির কাছে হেয় করা?
চলুন, নিজেকে আবিষ্কার করি। সক্রেটিস এঁর বিখ্যাত উক্তি Know thyself আমরা সবাই জানি। সুতরাং আমাদেরকে নিজের প্রতিভায় ভর করে শক্ত মেরুদণ্ডে দাঁড়াতে হবে; তাহলে নিজের মাঝে জাতির শিক্ষক ব্যক্তিত্বটিকে স্পষ্ট দেখতে পাবো।
চলুন কিছু সফল মনীষীদের দিকে তাকাই। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন- “সম্পন্ন করার আগে সবকিছুই অসম্ভব মনে হয়” আর বিখ্যাত দার্শনিক ক্লাইভ জেমস বলেছেন-“বিখ্যাত না হয়ে জীবন কাটালেও সুন্দর জীবন কাটানো সম্ভব, কিন্তু জীবনের মত জীবন না কাটিয়ে বিখ্যাত হওয়া কখনও সুন্দর জীবন হতে পারে না”
সুতরাং অসম্ভবের সকল দেয়াল ভেঙে গড়ে তুলবে সাফল্যের পাহাড়। স্বপ্নকে পুঁজি করে পথ চলবো। ওয়াল্ট ডিজনি বলেছেন-“যদি স্বপ্ন দেখতে পারো, তবে তা বাস্তবায়নও করতে পারবে”। বাঙালি জাতির বিজয়ের ইতিহাস অনেক। সুতরাং আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এর বিখ্যাত উক্তি দিয়েই এই লেখা শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন-“মানুষ পরাজয়ের জন্য সৃষ্টি হয়নি। তাকে হয়তো ধ্বংস করা যায়, কিন্তু হারানো যায় না।”
অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদান্তে-
আহমাদ_হোসাইন
সিনিয়র শিক্ষক
গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুল রাজশাহী
সাপ্তাহিক সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা
পাক্ষিক সেরা উদ্ভাবক
সেরা অনলাইন পারফর্মার
ICT4E জেলা এ্যাম্বাসেরড, রাজশাহী
ইমেইল: banglasir7@gmail.com