শিক্ষা উপকরণ কী, শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও ব্যবহার [Latest-2021]
ভূমিকা:
আপনি কোন একটা আলোচনা সভায় গেছেন। সেখানে প্রাচীন রোমের ইতিহাস বলা হচ্ছে। বক্তা একের পর এক ঘটনা বলে যাচ্ছেন আর উপস্থিত দর্শকরা তা শুনছেন। আপনি আরেকদিন একই ধরনের আরেকটা আলোচনা সভায় গেলেন যেখানে প্রাচীন গ্রীসের ইতিহাস বলা হচ্ছে। এখানে গ্রীসের ইতিহাস বলার সাথে সাথে সে সময়ের বিভিন্ন ছবি, ব্যবহৃত সামগ্রী, ভিডিও ইত্যাদি দেখানো হচ্ছে। এখন এই দুইটা আলোচনা সভার কোনটা আপনার কাছে বেশি আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য হবে এবং বেশিদিন মনে থাকবে?
কোন বিষয় বর্ণনার পাশাপশি এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি, শব্দ বা ভিডিও ইত্যাদি দেখানো হলে সে বিষয় বোঝা সহজ হয় এবং বেশিক্ষণ মনে থাকে।
কারণ আমরা যখন কোন বিষয় পড়ি বা শুনি তখন আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের একটা মাত্র ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার হয়।
কিন্তু যখন এর সাথে বিভিন্ন ধরনের ছবি, শব্দ বা ভিডিও যোগ করা হয় তখন একাধিক ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার হয়।
ফলে সে বিষয়টি সহজে বোঝা যায় এবং মনে রাখাও সহজ হয়। যেমন- শিশুকে যদি আম দেখিয়ে আম চিনতে শেখানো হয় তাহলে আম সম্পর্কে তার জ্ঞান পরিপূর্ণ হবে না।
প্রকৃতপক্ষে আমটি স্পর্শ করার প্রয়োজন আছে, তার গন্ধ জানার প্রয়োজন আছে, স্বাদ গ্রহণ করারও প্রয়োজন রয়েছে।
এভাবে যদি আমটিকে চোখ, হাত, ত্বক, নাক, জিহ্বা প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শে আনা যায় তবেই আমটি সম্পর্কে তার পূর্ণ জ্ঞান হবে।
অতএব শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানের জন্য একই সঙ্গে বিভিন্ন ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে পারলে শিখন সার্থক হয়।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষোপকরণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষোপকরণ থাকলেই যে তা সকল শিক্ষার্থীর শিখনে সহায়ক হবে এমন নাও হতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে এমন শ্রেণিকক্ষে শিখন শেখানো কার্যক্রমে একটা পোস্টার ব্যবহার করা হয়, তবে তা অন্য শিক্ষার্থীদের শিখনের জন্য সহায়ক হলেও ঐ শিক্ষার্থীর জন্য সহায়ক নয়।
তাই শিক্ষা উপকরণ নির্বাচন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা ও চাহিদাকে বিবেচনা করা দরকার। এ পাঠে শিক্ষোপকরণ কী, এর প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষোপকরণের ধরন এবং শিক্ষার্থীদের ভিন্নতা ও চাহিদা অনুসারে শিক্ষোপকরণ তৈরি, সংগ্রহ, ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
শিক্ষা উপকরণ কী?
যেসব বস্তু বা কৌশল ব্যবহার করলে শিখনের বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য বুঝতে সহায়ক হয়, শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে কার্যকর করে তোলা যায় তাই শিক্ষা উপকরণ বা শিক্ষা সহায়ক উপকরণ। যেমন- পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য ম্যাপ বা গ্লোব ব্যবহার করা, আদিবাসীদের সংস্কৃতি সম্পর্কে পড়াতে তাদের পোশাক, বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের ছবি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য বোঝা সহজ হয় এবং অনেকটা মূর্ত হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ
বহু প্রকার উপকরণ শিখন শেখানো কাজে ব্যবহার করা হয়।
যেমন- শিক্ষক উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দিতে চাইলে বাস্তব উপকরণ হিসেবে লতাপাতা, ফুল, ফল ও নানা ধরনের উদ্ভিদ ব্যবহার করেন।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কল্পনা করে কিছু বুঝতে হয়না। তবে কোনো কোনো পাঠে বাস্তবের অভাব পূরণের জন্য চিত্র, ছবি, চার্ট, নকশা, মানচিত্র, মডেল ইত্যাদি বিকল্প বস্তু ব্যবহার করা হয়।
যেখানে এ ধরনের উপকরণের সাহায্য গ্রহণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়।
শিখন শেখানো কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণকে সাধারণভাবে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–
(ক) শ্রবণযোগ্য উপকরণ: যেসব উপকরণ শিখনের বিষয়বস্তুকে শ্রবণযোগ্য করে তোলে অর্থাৎ আমরা আমাদের কান দিয়ে শুনতে পাই। যেমন- রেডিও, টেপ রেকর্ডার, অডিও ক্যাসেট, সিডি প্লেয়ার, মাইক্রোফোন ইত্যাদি।
(খ) দর্শনযোগ্য উপকরণ: যেসব উপকরণ শিখনের বিষয়বস্তুকে দর্শনগ্রাহ্য করে তোলে অর্থাৎ আমাদের চোখ দিয়ে দেখতে পাই।
যেমন- পোস্টার, ছবি, চার্ট, গ্লোব, বিভিন্ন মডেল, ম্যাপ, ম্যাগাজিন ,জার্নাল, বিভিন্ন প্রকার বোর্ড, পাঠ্যপুস্তক, পত্র-পত্রিকা, স্লাইড প্রজেক্টর, ওভারহেড প্রজেক্টর ইত্যাদি।
(গ) শ্রবণ–দর্শনযোগ্য উপকরণ: যেসব উপকরণ শিখনের বিষয়বস্তুকে একইসাথে শ্রবণ ও দর্শনগ্রাহ্য করে তোলে অর্থাৎ চোখ ও কানের ব্যবহার করে আমরা বুঝতে পারি। যেমন- টেলিভিশন, চলচিত্র, ডিভিডি, মনিটর, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি।
শিক্ষা উপকরণের প্রয়োজনীয়তা
বিষয়বস্তু সহজ ও বোধগম্য করে: শিখন শেখানো কাজে উপকরণের ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের ধারণা সুস্পষ্ট হয়।
বিষয়বস্তুকে মূর্ত করে: উপকরণ ব্যবহার করলে শ্রবণ-দর্শন ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারের ফলে সুস্পষ্ট ও মূর্ত হয়ে ওঠে। ফলে শিখনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার মাত্রা প্রসারিত হয় এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা লাভে সহায়ক হয়।
শিখন দীর্ঘস্থায়ী করে: উপকরণ ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা দেখে ও শুনে শেখার সুযোগ পায়। এতে মুখ¯থকরার প্রবণতা কমে আসে এবং বিষয়বস্তু বুঝে আয়ত্ত করে। ফলে শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
চিন্তা ও মননশক্তির বিকাশ: শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থীদের ভাবনাকে উদ্দীপ্ত করে। এটি তাদের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ইত্যাদি দক্ষতার বিকাশ ঘটায়।
পাঠে আগ্রহ সৃষ্টি: শিক্ষা উপকরণ শ্রেণিকক্ষের একঘেয়েমিভাব দূর করে পাঠকে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা নিয়ে আসে। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীর মনে সঞ্চার করে উদ্যম ও অনুপ্রেরণা, যা তাকে পাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
পাঠ উপস্থাপনের সময় ও শ্রম লাঘব: বলা হয় একটি চমৎকার ছবি হাজার পৃষ্ঠার বর্ণনার চেয়ে অধিক কার্যকর। ফলে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করলে শিক্ষক খুব কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে পাঠের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের মনে গেঁথে দিতে পারেন এবং শিক্ষার্থীর আচরণে বাঞ্চিত পরিবর্তন আনয়ন করতে পারেন।
শিক্ষা উপকরণ নির্বাচন
শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থীদের শিখনে সহায়তা করে। তবে এজন্য সঠিক উপকরণ নির্বাচন করা দরকার। যেমন- পূর্বের উদাহরণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য পোস্টার কোনো কার্যকর উপকরণ নয়।
আবার শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য অডিও রেকর্ড বা শ্রবণযোগ্য উপকরণ শিখনে সহায়ক নয়।
একইভাবে সব বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য সকল উপকরণ উপযুক্ত নয়। তাই শিক্ষার্থীর চাহিদা বুঝে সঠিক উপকরণ নির্বাচন করা প্রয়োজন।
শিক্ষা উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন তা নিম্মরূপ:
শিক্ষার্থীর বয়স ও গ্রহণ ক্ষমতা: শিক্ষার্থীর বয়সের কারণে তাদের বোধগম্যতার ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- একটু বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রাফ, পরিসংখ্যান ইত্যাদি বোধগম্য হলেও খুব ছোট শিশুদের কাছে তা বোধগম্য নয়।
তারা ছবি, ভিডিও ইত্যাদি ভালো বোঝে। তবে শিশুদের জন্য ব্যবহৃত ছবিও জটিল না হয়ে সহজ হওয়া প্রয়োজন।
আবার একই বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সবার বোঝার ক্ষমতা এক নয়। এরূপ ক্ষেত্রে সকল শিশু বুঝতে সক্ষম এমনউপকরণ কিংবা তাদের বোধগম্যতার স্তর অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ নির্বাচন করা যায়।
শিক্ষার্থীর বিশেষ চাহিদা বিবেচনা: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা থাকতে পারে। যেমন- দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা ইত্যাদি।
এ ধরনের প্রতিবন্ধিতা থাকলে শিক্ষার্থীর বিশেষ চাহিদা তৈরি হয়। যেমন- যার দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা রয়েছে তাকে যদি বর্ণনা শোনানো বা উপকরণ স্পর্শ করানো যায় তাহলে তার পক্ষে বিষয়বস্তু অনুধাবন করা সহজ হয়।
আবার শ্রবণ প্রতিবন্ধী হলে তাকে বিষয়টি দেখানো হলে তার পক্ষে বোঝা সহজ হয়। এভাবে শিক্ষার্থীদের চাহিদার প্রতি সাড়া দিয়ে উপকরণ নির্বাচন করা দরকার।
শিক্ষার্থীর ভিন্নতা বিবেচনা: বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বেআমরা জেনেছি যে শিক্ষার্থীদের সবার শেখার ধরন এক নয়।
কেউ ছন্দ, গান, নাচ ইত্যাদি পছন্দ করে, কেউ গল্প পছন্দ করে, কেউবা বর্ণনা পছন্দ করে।
সুতরাং শিক্ষা উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এগুলো বিবেচনা করা দরকার। নির্বাচিত উপকরণ যেন শিক্ষার্থীদের বহুমুখী চাহিদার প্রতি সাড়া দিতে সক্ষম হয়।
আকর্ষণ: নির্বাচিত উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হওয়া দরকার। তবে তা এমন হবে না যাতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিষয়বস্তু থেকে উপকরণে চলে যায়।
বিষয়সংশ্লিষ্ট ও শিখনফল অর্জনে সহায়ক: উপকরণ ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো পাঠের বিষয়কে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করে তোলা।
তাই নির্বাচিত উপকরণ অবশ্যই পাঠের বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত এবং পাঠের শিখনফল অর্জনে সহায়ক হবে।
পাশাপাশি উপকরণের মাধ্যমে প্রদত্ত বার্তা সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পাঠের বিষয়সংশ্লিষ্ট নয় এবং ভুল বার্তা প্রদান করে এমন উপকরণ যতই আকর্ষণীয় এবং শিক্ষার্থীর চাহিদা ও ভিন্নতাকে বিবেচনা করুক না কেন শিখনের ক্ষেত্রে তা মূল্যহীন।
সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্য: নির্বাচিত উপকরণ সহজলভ্য হওয়া দরকার। তা না হলে উপকরণ সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এ কারণে উপকরণ স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত এবং স্বল্পমূল্যে উপকরণ দিয়ে তৈরি হলে ভালো হয়। এতে করে অল্প চেষ্টাতেই প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা যায়।
সহজে ব্যবহার ও সংরক্ষণের সুবিধা: নির্বাচিত উপকরণ সহজে ব্যবহারযোগ্য হতে হবে। ধরা যাক, একজন শিক্ষক তার পাঠ পরিকল্পনায় লিখেছেন যে তিনি মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করবেন, অথচ তার মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের দক্ষতা নেই।
তাহলে পাঠের জন্য এ ধরনের উপকরণ নির্বাচন নিরর্থক। একইভাবে নির্বাচিত উপকরণ ব্যবহারের পরে সহজে সংরক্ষণযোগ্য হতে হবে। তা নাহলে পরবর্তীতে শিক্ষক এ ধরনের উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহী হবে না।
নিরাপদ: শিক্ষোপকরণ যেহেতু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কে ব্যবহার ও নাড়াচাড়া করতে হয়, তাই এটি ব্যবহারের জন্য নিরাপদ হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে ধরনের উপকরণ দিয়ে বিপদ ঘটতে পারে, যেমন- ধারালো উপকরণে কেটে যাওয়া, বৈদ্যুতিক শক খাওয়া ইত্যাদি পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।
শ্রেণিকক্ষে দর্শন ও শ্রবণযোগ্য: উপকরণ এমন হবে যেন তা শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শন ও শ্রবণযোগ্য হয়। এ কারণে ব্যবহৃত ছবি বা লেখার আকৃতি বড় হতেহবে এবং ব্যবহৃত শব্দ স্পষ্ট ও উচস্বর সংবলিত হবে।
কৌতূহল ও চিন্তা উদ্দীপক: নির্বাচিত উপকরণ এমন হবে যেন তা বিষয়বস্তুর প্রতি শিক্ষার্থীদের কৌতূহল জাগায় এবং তাদেরকে বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে উদ্দীপ্ত করে।
এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে বিষয়সংশ্লিষ্ট উপযোগী উপকরণ নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনের সময় লক্ষ রাখতে হবে উপকরণটি আকর্ষণীয় ও সঠিক কি না। এটি সহজলভ্য এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য কি না এবং স্বল্পমূল্যবা বিনামূল্যে পাওয়া যায় কি না।
শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহঃ
শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহারের আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখতে হয়। নানা উপায়ে উপকরণ সংগ্রহ করা যায়।
নিম্নে উপকরণ সংগ্রহের উৎস অনুযায়ী সংগ্রহ প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো-
(ক) সরকারের শিক্ষা বিভাগ : সরকারের শিক্ষা বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ পাওয়া যায়।
যেমন- জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক নির্দেশিকা পাওয়া যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পাঠ্যপুস্তক, লেখার খাতা, চার্ট, ক্যালেন্ডার, পোস্টার, ফ্লাশকার্ড, খেলনাসামগ্রী ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়।
এ সকল সামগ্রী যথাসময়ে সংগ্রহ করে বিদ্যালয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
(খ) উন্নয়ন সংস্থা / বেসরকারি সংস্থা: জাতিসংঘের শিক্ষা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা ইউনেস্কো ও ইউনিসেফ কর্তৃক মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বিতরণ করা হয়।
ইউনেস্কো শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন পোস্টার, শিক্ষক সহায়িকা, অ্যাডভোকেসি গাইড ইত্যাদি তৈরি করে।
অনুরূপ ইউনিসেফও বিভিন্ন পোস্টার, শিক্ষক সহায়িকা, গল্পের বই, চার্ট, ফ্লাশকার্ড, খেলনাসামগ্রী ইত্যাদি বিতরণ করে।
এসব সংস্থার অফিসে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ের জন্য এসব উপকরণ সংগ্রহ করা যায়।
এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা, যেমন ইংলিশ ইন অ্যাকশন ইংরেজি শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপশি শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন, অডিও স্পিকার, স্টোরেজ ডিভাইস কার্ড ইত্যাদি সরবরাহ করে।
একইভাবে অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাও মাঝেমাঝে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে। যথাসময়ে খোঁজখবর নিয়ে বিদ্যালয়ের জন্যএসব উপকরণ সংগ্রহ করে রাখা যায়।
(গ) স্থানীয় দাতা : স্থানীয় দাতা যেমন- দানশীল ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সদস্যরা বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সরবরারহ করেন।
অনেক ক্ষেত্রে তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ের চাহিদা সম্পর্কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা যায়।
(ঘ) শিক্ষক–শিক্ষার্থী: শিক্ষক বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে নানা ধরনের শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ করতে পারেন।
আবার নিজেই কিংবা শিক্ষার্থীদের সহায়তায় আশাপাশ থেকে শিমের বিচি, তেঁতুলের বিচি, নুড়ি পাথর বাঁশের কাঠি, মাটির মার্বেল, বাস্তব নমুনা ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিভিন্ন উপকরণ, যেমন- মানচিত্র, পোস্টার, ছবি, পুরাতন মুদ্রা, ডাকটিকিট ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারেন।
পুরাতন ক্যালেন্ডার, ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকা থেকে প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাদ্যশস্য ও ফলমূল, যেমন- ধান, চাল, গম, ডাল, বরই, তেঁতুল ইত্যাদি সংগ্রহ করা যায়। পুরাতন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যেমন- বাল্ব, রেডিও, ইস্ত্রি, ব্যাটারি ইত্যাদি উপকরণ হিসেবে সংগ্রহ করা যায়।
(ঙ) অভিভাবকদের মাধ্যমে: শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যখন বিভিন্ন উপলক্ষ্য, যেমন- মা সমাবেশ ও অভিভাবক দিবস ইত্যাদিতে বিদ্যালয়ে আসে তখন মা ও অভিবাবকদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের নিকট থেকেও নানা ধরনের শিক্ষাউপকরণ সংগ্রহ করা যায়।
প্রয়োজনে তাদের দিয়ে বিদ্যালয়ে বসেই বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করানো যায়। স্থানীয় সহজলভ্য বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এসব শিক্ষা উপকরণ তৈরি করানো যায়।
শিক্ষা উপকরণ তৈরি
শিখন শেখানো কার্যক্রমের জন্য নানা ধরনের উপকরণ দরকার হয়।
এর অনেকগুলো আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে কাজ চালাই।
কিন্তু তারপরও অনেক উপকরণ দরকার হয়, যেগুলো আমরা কোথাও থেকে সংগ্রহ করতে পারি না। এর মধ্যে কিছু উপকরণ হয়তো বাজার থেকে কিনে নেয়া যেতে পারে।
কিন্তু আমাদের দেশে বিদ্যালয়গুলোর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে উন্নত ও দামি উপকরণাদির কথা চিন্তাই করা যায় না।
এ ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য উপকরণের অভাব পূরণের জন্য অনেক সময় শিক্ষক শিক্ষার্থীর সহায়তায় স্বল্পমূল্য বা বিনা মূল্যের কাঁচামাল ব্যবহার করে নিজ হাতে আকর্ষণীয় যন্ত্রপাতি, মডেল ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি করে নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে অধিকাংশ কাঁচামাল পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করা যায়। বিদ্যালয় ও পরিবেশের অব্যবহৃত পরিত্যক্ত জিনিসগুলোকে এ ধরনের উপকরণ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
সহজলভ্য ও হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন কাঁচামাল দিয়ে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা যায়।
যেমন- মাটি বা কাগজের মন্ড দিয়ে বিভিন্ন প্রাণী, পর্বত, ফলমূল ইত্যাদি তৈরি করা যায়। কাঠ, বাঁশের কাঠি ইত্যাদি দিয়ে অ্যাবাকাস, পরিমাপের মডেল, যেমন- রুলার কম্পাস ও জ্যামিতিক আকৃতি তৈরি করা যায়।
আর্ট পেপার, পোস্টার পেপার কিংবা পুরনো ক্যালেন্ডারের উল্টো পিঠে পেন্সিল, কালি ও রঙের উপযুক্ত ব্যবহার করে চার্ট, নকশা, ছবি, ছক, কার্টুন ইত্যাদি অঙ্কন করা যায়।
পানীয় বোতলের অব্যবহৃত মুখটি গণিতে গণনার কাজে, কর্কের ভেতর সাইন পেন দিয়ে সংখ্যা প্রতীক, ইংরেজি বা বাংলা বর্ণমালা লিখে শিক্ষোপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
পানীয় পান করার স্ট্র গণনার কাজে, সংখ্যা প্রতীক তৈরির কাজে, জ্যামিতিক আকৃতি ‣তরির কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মসুর ডাল, ধান ইত্যাদি আর্টপেপারে গাম দিয়ে লাগিয়ে মানচিত্র, সংখ্যা প্রতীক, বর্ণমালা লিখে আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া শিকড়, বাকল, দড়ি, তুষ, খড়, নারিকেলের মালা, ছোবড়া, পাট, আঁশ, পুরনো কাপড়, শামুক, ফোম, খালি বাক্স ইত্যাদি নানা রকমের উপকরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।
পাঠ সংশ্লিষ্ট ছবি পাঠ্যপুস্তক থেকে আর্ট পেপার, পোস্টার পেপার কিংবা পুরনো ক্যালেন্ডারের উল্টো পিঠে অঙ্কন করে ব্যবহার করা যায়।
তা ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের পাঠসংশ্লিষ্ট চার্টও তৈরি করা যায়। পত্রপত্রিকার ছবি কেটে আর্ট পেপার বা পোস্টার কাগজে সাজিয়ে সুন্দর পোস্টার বা চার্ট তৈরি করা যায়।
তবে পোস্টার বা চার্ট তৈরির সময় যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে তা হলো-
(১) পোস্টার/চার্টের চারদিকে মার্জিন থাকবে
(২) প্রতিটি পোস্টার/চার্টের একটি শিরোনাম থাকবে
(৩) ব্যবহৃত ছবি বা নকশার পরিচিতি থাকবে
(৪) ছবি ও লেখাগুলো যথাসম্ভব বড় হবে
(৫) বিভিন্ন স্থানে উপযুক্ত রঙের ব্যবহার করতে হবে
(৬) বিষয়বস্তু ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হবে
উপকরণ তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করার পর শিক্ষক নিজেই এসব উপকরণ তৈরি করতে পারেন।
আবার শিক্ষার্থীদের সহায়তায়ও বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে পারেন।
শিক্ষার্থীদের দিয়ে উপকরণ তৈরির আগে শিক্ষক তার কী উপকরণ দরকার, কী উদ্দেশ্যে ও কাদের জন্য এসব উপকরণ তৈরি করা হবে, এর জন্য কী কাঁচামাল প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে একটা পরিকল্পনা করে নিবেন।
এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী উপকরণ তৈরির জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিবেন। শিক্ষার্থীরা উপকরণ তৈরির সময় ঘুরেঘুরে তাদের কাজ পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিবেন।
শিশুদের নিজ হাতে উপকরণ তৈরি ও ব্যবহার করার বাস্তব অভিজ্ঞতার মূল্য রয়েছে। এর ফলে-
(১) পরিবেশের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচিতি ঘটে
(২) শিক্ষার্থীরা শ্রমের প্রতি মর্যাদাশীল ও আত্মবিশ্বাসী হয়
(৩) শিক্ষার্থীদের সূক্ষপেশীর বিকাশ ঘটে
(৪) সবাই মিলেমিশে কাজ করতে গিয়ে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও অন্যান্য সামাজিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে।
(৫) শিক্ষার্থী নির্মাণমূলক দক্ষতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে
(৬) শিক্ষার্থীর সৃজনী প্রতিভার বিকাশ ঘটে ;
(৭) উপকরণ তৈরি করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দ লাভ করে
(৮) শিক্ষকের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয় এবং
(৯) নিজেরা তৈরি করে বলে এসব উপকরণ ব্যবহার করে পরিচালিত পাঠে অধিক মনোযোগি হয় এবং এক ধরনের অংশীদারিত্ববোধ তৈরি হয়।
উপরিউক্ত কারণে শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে শিশুদের অংশগ্রহণ রাখা দরকার। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, এসব উপকরণ তৈরি করতে গিয়ে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার
শ্রেণিকক্ষে শিখন শেখানো কাজকে ফলপ্রসূ ও সার্থক করার জন্য শিক্ষোপকরণ ব্যবহার করা হয়।
পাঠসংশ্লিষ্ট উপকরণ ব্যবহারে পাঠের বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় হয় এবং শিক্ষার্থীদের নিকট বক্তব্য সুস্পষ্ট হয়।
তাই সার্থক ও ফলপ্রসূভাবে শিখনশেখানো কাজ পরিচালনার লক্ষ্যেসঠিক নিয়মে উপকরণ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
এ জন্য নিচের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া দরকার-
শিক্ষকের প্রস্তুতি: নির্বাচিত উপকরণ ব্যবহারের পূর্বে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
অর্থাৎ উপকরণটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে এবং এর ব্যবহার কে․শল অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আয়ত্ত করতে হবে যেন শ্রেণিকক্ষে কোনো প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন না হয়।
অনেক সময় শিক্ষককে চার্ট, মানচিত্র, ছবি, চিত্র ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়। শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা যেন সহজে সেগুলো দেখতে পায় সেভাবে টাঙানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি: কী উপকরণ কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে, এ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা কীভাবে তাদের শিখনে সহায়তা করবে, কোথায় এর প্রয়োগ ঘটাতে পারবে তা বিস্তারিত শিক্ষার্থীদের অবহিত করতে হবে।
উপস্থাপন: শিক্ষক যেসব উপকরণ শ্রেণিতে নিয়ে যাবেন সেগুলো যেন সঠিকভাবে ব্যবহার বা প্রদর্শন করতে পারেন। উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করা প্রয়োজন-
(ক) শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেই শিক্ষা উপকরণ প্রদর্শন করবেন না। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কথা না শুনে উপকরণ দেখার প্রতি বেশি কৌতূহলী হয়ে উঠবে।
(খ) শ্রেণি কার্যক্রম চলার সময় যখন শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের প্রয়োজন হবে তখন তা প্রদর্শন করুন। যে ধারণা দেয়ার জন্য বা যে প্রসঙ্গে শিক্ষা উপকরণটি ব্যবহার করার কথা তা শেষ হলে উপকরণটি সরিয়ে ফেলুন। অর্থাৎ অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার পূর্বে উপকরণ সরিয়ে ফেলতে হবে।
(গ) উপকরণটি এমন স্থানে প্রদর্শন করুন যেন শ্রেণির সবাই তা দেখতে পায়। উপকরণ ছোট হলে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে দেখান।
(ঘ) যেসব শিক্ষার্থী দেখতে পায় না (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী) তাদেরকে উপকরণ সম্পর্কে বর্ণনা করুন যেন তারা উপকরণটি সম্পর্কে ধারণা পায়।
যেসব উপকরণের ত্রিমাত্রিক অবয়ব আছে যেমন গ্লোব, খেলনা ইত্যাদি তাদের ধরে দেখতে দিন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা স্পর্শের মাধ্যমে শিক্ষা উপকরণ হতে প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ করে। তাই বিভিন্ন কে․শল ব্যবহার করে যতটা সম্ভব উপকরণকে অ্যাম্বুশ করা প্রয়োজন।
(এসংক্রান্ত বিস্তারিত পেশাগত শিক্ষা-২ বইয়ের প্রথম খন্ডে (একীভূত শিক্ষা অধ্যায়ে) আলোচনা করা হয়েছে।
(ঙ) আবার শ্রবণযোগ্য (অডিও) উপকরণ ব্যবহার করলে শ্রেণিকক্ষে যদি শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী থাকে তবে সহায়ক দর্শনযোগ্য কোন উপকরণ ব্যবহার করুন অথবা ইশারা (অঙ্গভঙ্গির) মাধ্যমে সেটি বোঝানোর চেষ্টা করুন।
(চ) শিক্ষার্থীদের চাহিদার ভিন্নতার প্রতি লক্ষ্য রেখে একই বিষয়ের জন্য একাধিক ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।
(ছ) শ্রেণির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাশাপশি অন্য শিক্ষার্থীদেরও উপকরণ ধরে দেখার সুযোগ দিন। এতে উপকরণ ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের কৌতূহল ও চিন্তার উদ্রেক হবে।
(জ) উপকরণ প্রদর্শনের পাশাপাশি ছোট ছোট প্রশ্ন করুন যেন প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি করতে পারে।
(ঝ) উপকরণ প্রদর্শনে শিশুদের যুক্ত করুন এবং তাদের সহায়তা নিন। এতে উপকরণের প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি হবে।
উপকরণের কার্যকারিতা মূল্যায়ন: যে উদ্দেশ্যে উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে কি না তা মূল্যায়ন করে দেখতে হবে। নির্দিষ্ট বিষয়ে পাঠ উপস্থাপনের সময় কোন উপকরণটি সবচেয়ে
কার্যকর তা দেখতে হবে। পরবর্তীতে কোনো উপকরণ ব্যবহারে অসুবিধা দেখা দিলে প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক উপকরণ নির্বাচন ও ব্যবহারে সচেষ্ট হতে হবে।
শিক্ষা সহায়ক উপকরণ সংরক্ষণ
বিদ্যালয়ে শিক্ষাউপকরণের গুরুত্ব অনেক বেশি। বারবার এসব উপকরণ সংগ্রহ বা তৈরি করা সম্ভব নয়।
সে জন্য ব্যবহারের পরপরই এগুলো নষ্ট না করে যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। যাতে প্রয়োজনের সময় ঠিকভাবে পাওয়া যায় এবং বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়। এ কাজে শিক্ষকের ভূমিকা অগ্রগণ্য। যেমন-
(ক) মানচিত্র, চার্ট, ছবি ইত্যাদি উপকরণ শ্রেণি, বিষয় ও পাঠ অনুযায়ী কাঠের স্ট্যান্ডে গুটিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
(খ) কাঠের তাকে, টিন বা প্লাস্টিকের কে․টায় শিমের বিচি, তেঁতুলের বিচি, মার্বেল, গুলতি,চাকতি, নুড়িপাথর ইত্যাদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। এ ক্ষেত্রে কোন কৌটায় কী উপকরণ রাখা আছে তা স্পষ্ট করে লিখে রাখতে হবে।
(গ) ওষুধ বা সাবানের খালি কার্টুনে বাঁশ বা কাঠের তৈরি দশকের বান্ডিল, বিভিন্ন মডেল ইত্যাদি সংরক্ষণ
(ঘ) পোস্টার পেপার বা পুরনো ক্যালেন্ডারে অঙ্কিত চার্ট, ছবি ইত্যাদি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা যায়।
(ঙ) অপেক্ষাকৃত মূল্যবান শিক্ষাউপকরণ, যেমন-যন্ত্রপাতি, রেডিও, ক্যাসেট, সহায়ক পুস্তক ইত্যাদি আলমারিতে সংরক্ষণ করা ভালো।
(চ) বিদ্যালয় গৃহের পাকা দালানে সিলিং বাক্সে বা টিনের ঘরের পাটাতনে উপকরণ রাখা যায়। সম্ভব হলে একটি পৃথক কক্ষে উপকরণ কর্নার তৈরি করে শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক উপকরণ সাজিয়ে রাখা যায়।
(ছ) সংরক্ষিত উপকরণগুলো মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করতে হবে। এ কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে হবে।
শিখন শেখানোর কাজে উপকরণের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে যথাযথ উপকরণ নির্বাচন ও তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে উপকরণ ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। তাছাড়া ব্যবহৃত উপকরণের মাধ্যমে যেন শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও ভিন্নতার প্রতি সাড়া দেয়া হয় সেটিও লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়।
ডিপিএড এর অন্যান্য পোস্ট দেখুন
Comments are closed.