এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসির) মাধ্যমে নিয়োগ পাচ্ছেন সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ২১৫৫ জন সহকারী শিক্ষক। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দু’টি ভেরিফিকেশন রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হলেই সুপারিশকৃত প্রার্থীদের নিজ নিজ পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতঃপূর্বে সরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকের পদ শূন্য হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশির) মাধ্যমে এই পদে নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু এতে নানা ধরনের তদবির এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আসায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পিএসসির মাধ্যমেই সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যে পিএসসির মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদনের সময় দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে পদের সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়। শিক্ষক নিয়োগের সংখ্যা উল্লেখ করে বলা হয় বাংলা বিষয়ে ৩৬৫ জন, ইংরেজিতে ১০৬ জন, গণিতে ২০৫ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ৮৩ জন, ভৌতবিজ্ঞানে ১০ জন, জীববিজ্ঞানে ১১৮ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ৮ জন, ভূগোলে ৫৪ জন, চারুকলায় ৯২ জন, শারীরিক শিক্ষায় ৯৩ জন, ধর্মে ১৭২ জন এবং কৃষি শিক্ষা বিষয়ে ৭২ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
পিএসসির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নির্ধারিত পদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আবেদন জমা পড়ে। ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এমসিকিউ লিখিত পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয় এবং একই বছরের ২৯ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশ হয়। এমসিকিউ পরীক্ষায় মোট ৭ হাজার ১৬১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। পরে এই উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে মৌখিক পরীক্ষায় ১২টি বিষয়ে ২ হাজার ১৫৫টি পদের জন্য সুপারিশ করে ফল প্রকাশ করে কমিশন। মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর।
এ দিকে পিএসসির সুপারিশকৃত প্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আমরা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পরেও কেটে গেছে ৯ মাস। আমাদের আশা ছিল এক-দুই মাসের মধ্যেই হয়তো চূড়ান্তভাবে নিয়োগের চিঠি পাবো। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ের পরেও বলা হচ্ছে আরো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আরো অপেক্ষা করতে হবে। ফলে আমাদের মনে নানা ধরনের সন্দেহ আর সংশয় কাজ করছে।
রাইসুল (ছদ্মনাম) নামের এক প্রার্র্থী নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকর উদ্যোগের অপেক্ষায় রয়েছি। কেননা তারাই মূলত আমাদের নিয়োগ কার্যক্রম দেখভাল করছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও নিয়োগের কার্যক্রমের বিলম্বের কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমরা পাচ্ছি না। অবশ্য এরই মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রণায়ের মাধ্যমে প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর সব প্রার্থীদেরই স্বাস্থ্য পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে।
পিএসসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের এই জটিলতার বিষয়ে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (সরকারি মাধ্যমিক-১) আলমগীর হুছাইন নয়া দিগন্তকে জানান, পিএসসির মাধ্যমে সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষক নিয়োগ এই প্রথমবারের মতো হচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা নেই। তবে কাজের ক্ষেত্রে একটু সময় বেশি লাগছে। অবশ্য এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। পিএসসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে কাজ সেগুলো শেষ হয়েছে। এখন শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি ভেরিফিকেশন রিপোর্টের অপেক্ষা। আমাদের কাছে যতদূর খবর আছে তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে এনএসআই এর রিপোর্ট পেতে একটু সময় লাগছে। এ দুটি রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসার পরেই সুপারিশকৃত প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে সময় ও তারিখ জানানো যাবে।
অন্য দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চাহিদার আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুটি রিপোর্ট দেয়ার কথা। এরই মধ্যে পুলিশের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট জমা হয়েছে। এখন শুধু বাকি একটি অর্থাৎ এনএসআইর মাধ্যমে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট জমা হলেই দুটি রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে। আর এই রিপোর্টটিও শিগগিরই চলে আসবে বলে আশা করছি।
Comments are closed.