Customize Consent Preferences

We use cookies to help you navigate efficiently and perform certain functions. You will find detailed information about all cookies under each consent category below.

The cookies that are categorized as "Necessary" are stored on your browser as they are essential for enabling the basic functionalities of the site. ... 

Always Active

Necessary cookies are required to enable the basic features of this site, such as providing secure log-in or adjusting your consent preferences. These cookies do not store any personally identifiable data.

No cookies to display.

Functional cookies help perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collecting feedback, and other third-party features.

No cookies to display.

Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics such as the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.

No cookies to display.

Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.

No cookies to display.

Advertisement cookies are used to provide visitors with customized advertisements based on the pages you visited previously and to analyze the effectiveness of the ad campaigns.

No cookies to display.

Take a fresh look at your lifestyle.

দারিদ্র্য বা দরিদ্রতা কী, প্রভাব, কারণ ও প্রতিকার, সহায়কের ভূমিকা

7,039

দারিদ্র্য বা দরিদ্রতা

দারিদ্র্য বা দরিদ্রতা কি: দারিদ্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অনেকটাই জটিল বিষয় বলে মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীগণ। তাঁরা দেশ, কাল, পাত্রভেদ, সমাজের কাঠামো, ভৌগলিক অবস্থান, ঐতিহ্য, প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় দারিদ্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে থাকেন। এটি মূলত আর্থ -সামাজিক অবস্থার নাম।

 

সমাজ বিজ্ঞানী জন এল জিলিনের মতে, সমাজ নির্ধারিত জীবন মাত্রার মান বজায় রাখতে অপারগতাই দারিদ্র্য বা দরিদ্রতা

অসকার লিউসের মতে, দারিদ্র্য হলো সাংস্কৃতিক দৈনতা।

প্রকৃত পক্ষে আমি যদি বলি, যে সব লোক জীবনের মৌল চাহিদাগুলো পূরণে অক্ষম তারাই দরিদ্র আর এ অবস্থাই দারিদ্র্য। তাহলে এর পাল্টা প্রশ্ন দাড়াবে মৌলিক চাহিদা কী পরিমাণ বা কতটুকু না থাকলে তাকে দরিদ্র বলা যেতে পারে? কী মানের কী প্রকারের কখন কখন ইত্যাদি প্রশ্ন দানা বাধবে। আবার সমাজ ভেদে পার্থক্য আসবে।

সুতরাং সমাজ বিজ্ঞানীগণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলেন, দরিদ্র হলো সেই ব্যক্তি যে তার আর্থিক সামর্থের অভাবে নিতান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিতসা ব্যবস্থা পূরণে অর্থাত মৌলিক চাহিদা পূরণে অপারগ তারা দরিদ্র।

কিন্তু এর বাহিরে অন্যান্য চাহিদাকে এখানে ধরা হয় না। যেমন স্বাধীনতা, আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা ইত্যাদিকে এখানে যুক্ত করেননি। যদিও উপরের চাহিদার চেয়ে এসকল চাহিদা কম প্রয়োজনীয় নয়। সুতরাং আমরা দারিদ্রের একটা স্ট্যান্ডার্ড সংজ্ঞা দাড় করাতে পারি নিম্মোক্তভাবে- মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম যা প্রয়োজন তা না থাকাই দারিদ্র্য বা দরিদ্রতা

 

দারিদ্রের প্রভাব / দারিদ্রের কারণে যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়

১.   দারিদ্র্য নানা ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপ বা বিভিন্ন অপরাধের অন্যতম কারণ,

২.   দারিদ্র্য পুষ্টিহীনতাসহ অনেক রোগ-ব্যাধির জন্য দায়ি,

৩.   দারিদ্র্য নিরক্ষরতার জন্য দায়ি,

৪.   দারিদ্র্য পারিবারিক ভাঙ্গনের জন্য দায়ি (অভাবে অনেক পরিবার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়েছে।),

৫.   ইহা মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করে,

৬.   হীন্যমন্যতা তৈরি ও হতাশায় ভুগায়,

৭.   অন্যের কৃপা প্রার্থী বিশেষত ভিক্ষা ও দান গ্রহণে বাধ্য করে,

৮.  দারিদ্র্য বিশেষত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য এতোই ব্যস্ত রাখে যে তার সুকুমার প্রবৃতি,  সৃষ্টিশীলতা বা সৃজনশীলতা, প্রতিভাকে বিকাশ ঘটাতে বাধা প্রদান করে,

দারিদ্র্যগত এসকল সমস্যাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে।

.   অর্থনীতি ও জীবন যাত্রার উপর প্রভাব : এর প্রভাবে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় অভাব পূরণে ব্যর্থ হয়। নিরক্ষরতা, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগায়, কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারত্ব তৈরি করে, দক্ষ শ্রমিককে কাজে লাগানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।

.   সামাজিক প্রভাব : মূল্যবোধের সংকট, নৈতিক অধ:পতন, সামাজিক নিয়ন্ত্রণহীনতা ও বিশৃংখলা, অপরাধ প্রবণতা, সামাজিক অনাচার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তিসহ বুদ্ধির মুক্ত চর্চা, মননশীলতার চর্চা, জ্ঞান বিজ্ঞানের অনুশীলন ও তার প্রয়োগ, সামাজিক উতকর্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রয়োগ দারুণভাবে অনুপস্থিত থাকছে।

.   মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে আস্থাহীনতা, হতাশা, উদ্দ্যেমশীলতা লোপ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, মানসিক বৈকল্য, কর্মবিমুখতা, উত্তেজনা, অসন্তোষ, অলসতা ইত্যাদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলছে।

এ বিষয়ে জর্জ বার্নার্ড শ বলেন, The greatest course of poverty it that is destroy’s the will power of the poor until they become the most ardent supporters of their own poverty.’

 

 

রিদ্রতার কারণ

১। নিরক্ষরতা, ২। নারী নির্যাতন, ৩। ঝড়ে পড়া শিশু, ৪। পুষ্টিহীনতা, ৫। নারীর ক্ষমতায়ন না হওয়া, ৬। বাল্যবিবাহ, ৭। যৌতুক, ৮। ইভটিজিং, ৯। মাদকাশক্তি, ১০। শিশু শ্রম, ১১। জম্ম নিবন্ধন না করা, ১২। শিক্ষার অভাব, ১৩। বৃক্ষরোপণ না করা, ১৪। স্যানিটেশনের অভাব, ১৫। জম্ম নিয়ন্ত্রণ না করা, ১৬। অনুন্নত চিকিতসা ব্যবস্থা, ১৭। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ১৮। দক্ষ জনশক্তির অভাব, ১৯। অলসতা, ২০। কর্মসংস্থানের অভাব, ২১। বেকারত্ব, ২২। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ২৩। জ্ঞান চর্চার অভাব/ গণগবেষণার অভাব, ২৪। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ২৫। যোগ্য নেতৃত্বের অভাব,

২৬। ন্যয় বিচার না থাকা, ২৭। দূর্নীতি, ২৮। মূল্যবোধের অবক্ষয়, ২৯। অসচেতনতা, ৩০। মামলাবাজী, ৩১। সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনের অভাব, ৩২। ক্ষদ্র ঋণ ও এনজিও, ৩৩। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ৩৪। অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা, ৩৫। মহাজনী ঋণ প্রথা, ৩৬। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বোগতি, ৩৭। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, ৩৮। নারী পুরুষের বৈষম্য/জেন্ডার বৈষম্য, ৩৯। বহুবিবাহ, ৪০। অনুন্নত তথ্য প্রযুক্তি, ৪১। সিন্ডিকেট, ৪২। পরিবেশ দূষণ, ৪৩। এম এল এম কম্পানী, ৪৪। সরকারী উদ্দ্যেগের অভাব, ৪৫। এম এন সি / বহুজাতীক কম্পানী, ৪৬। পরনির্ভরশীলতা, ৪৭। শত্রুতা, ৪৮। স্বার্থপরতা, ৪৯। হিংসা,

৫০। পরশ্রীকাতরতা, ৫১। ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো, ৫২।  উম্মুক্ত বাজেট না করা, ৫৩। স্থানীয় সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকা, ৫৪। ওয়ার্ডসভা না করা, ৫৫। কর না দেয়া, ৫৬। স্থানীয় উদ্দ্যেগের অভাব, ৫৭। মধ্যসত্বভোগিদের দৌরাত্ব, ৫৮। বিদ্যুত সমস্যা, ৫৯। একতার অভাব, ৬০। সমন্বয়ের অভাব, ৬১। স্বজনপ্রীতি (রাজনীতি ও চাকুরির ক্ষেত্রে), ৬২। সুস্থ সংস্কৃতি বা বিনোদনের অভাব, ৬৩। আত্মমর্যাদার অভাব, ৬৪। দরিদ্রদের সমতার অভাব, ৬৫। ক্ষমতার অপব্যবহার, ৬৬। সংগঠনের ও সংগঠিত হবার অভাব, ৬৭। প্রভাবশালীদের  চক্রান্ত, ৬৮। কোন্দল, ৬৯। সংগঠন বা সমাজে স্বাধীন চিন্তার চর্চার অভাব,

৭০। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকা, ৭১। সুশাসনের অভাব, ৭২। ঐতিহাসিক কারণ বা ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ-নিপীরণ, ৭৩। ক্ষমতা ও সম্পদের অসম বন্টন, ৭৪। শিল্পায়নের অভাব, ৭৫। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ৭৬। ত্রুটিপূর্ণ প্রশাসন, ৭৭। সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, ৭৮। ব্যয়বহুল সামাজিক অনুষ্ঠান, ৭৯। সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটিপূর্ণ বন্টন ব্যবস্থা, ৮০। আচার-বিশ্বাস, রক্ষণশীলতার প্রভাব, ৮১। বৈজ্ঞানীক চিন্তার অভাব

(দরিত্রতা বৃদ্ধির বা সৃষ্টির যে কারণগুলো এখানে বিবৃত হয়েছে তা আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সাথে দশ থেকে বারো ঘন্টার আলোচনার ফল। তাছাড়া এসব চিন্তা ভাবনা করতে আগ্রহী করতে বা সৃজনশীলতা ঘটাতে প্রায় বায়াত্তর ঘন্টা করে তাদের পিছনে শ্রম দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন পুস্তকের সহায়তা নেয়া হয়েছে। )

 

সামাজিক গবেষক ক্লারেন্স মেলোনি (C. Maloney, Behaviour and Poverty in Bangladesh-1986) বাংলাদেশের দারিদ্র্য এর পিছনে উপরোক্ত কারণগুলোকে অস্বীকার না করলেও বিশেষ কিছু কারণকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলেছেন তা হলো- আমাদের স্বভাব, খাসলাত, ধ্যান-ধারণা, রেওয়াজ-প্রথা ও মনমানসিকতা। আরও কিছু কারণ আছে যা হলো- আমাদের সমাজের অযৌক্তিক দয়া দাক্ষিণ্য, অযৌক্তিকভাবে কারো কাছ হতে কিছু পাবার আশা, অযৌক্তিক সামাজিকরণ, অযৌক্তিক মুরব্বী-খাতক বা দাতা গ্রহীতা সম্পর্ক, বিশেষ ধরণের ব্যক্তিকেন্দ্রীকতা, বিশেষ ধরণের জ্ঞাতী সম্পর্ক, দূর্ণীতিমুলক আচরণ ইত্যাদি।

 

দারিদ্র্য দূর করার পথ উপায়

          ১। কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, ২। শিল্পায়ন, ৩। দরিদ্র মানুষের সচেতনতা, ৪। সম্পদের সুষম বন্টন, ৫। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ৬। কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠা বা কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠায় সরকারের সহযোগিতা করা বা কুটির শিল্পে যা আছে তার সতব্যবহার করা, ৭। শিক্ষা বিস্তার, ৮। অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করা, ৯। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম সদ্বব্যবহার, ১০। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি প্রবর্তন, ১১। কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূরীকরণ, ১২। আয় উপার্জনে দরিদ্রদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং ঋণের টাকা স-ুপথে ব্যবহার করছে কি-না তার কঠোর মনিটরিং, ১৩। ব্যপক হারে ঋণ দেয়ার বদলে তাদেরকে যে কোন কাজে দক্ষ করে গড়ে তোলা, ১৪। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করে বা তত্ত্বিক শিক্ষার বদলে ব্যবহারিক ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর করে তোলা, ১৫। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দূর্যোগ আসলে যেন বিকল্প হিসাবে অন্য সময়ে পর্যাপ্ত খাদ্য উতপাদন করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ। (বিষয়গুলো উপরে বর্ণিত ব্যক্তিগণের বিবেচনা প্রসুত এবং চিন্তার ফল)

 

দারিদ্র্য তৈরির পিছনে যে কারণগুলো কাজ করছে সে সবের সমাধারনই হবে দারিদ্র্য দূর করার কার্যকর উপায়।

 

দারিদ্র্য দূর করার জন্য একজন সমাজকর্মী বা সহায়কের ভূমিকা

১.   দরিদ্রদের সমস্যা চিহ্নিতকরণে সহায়তা করবেন;

২.   দরিদ্র ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণনাধীন ও নিয়ন্ত্রয়ণ বহির্ভূত সম্পদ চিহ্নিতকরণ করবেন তাঁদের সাথে নিয়ে;

৩.   প্রদত্ত ও সৃষ্ট সম্পদের সদ্ব্যবহার;

৪.   উদঘাটন ও আবিষ্কার;

৫.   মানবিক ভূমিকার বিকাশ সাধন ও তাতে সংযোগ সাধন;

৬.   উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাজমান সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধক উতপাটন;

তবে সকল কার্যক্রমের সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমাধান ইত্যাদি কার্য সমাধান করবেন দারিদ্র্যপীরিত এলাকার জনগণ। সহায়কগণ শুধু তাতে অংশগ্রহণ করে পথ ঠিক রাখবেন।

Comments are closed.