Customize Consent Preferences

We use cookies to help you navigate efficiently and perform certain functions. You will find detailed information about all cookies under each consent category below.

The cookies that are categorized as "Necessary" are stored on your browser as they are essential for enabling the basic functionalities of the site. ... 

Always Active

Necessary cookies are required to enable the basic features of this site, such as providing secure log-in or adjusting your consent preferences. These cookies do not store any personally identifiable data.

No cookies to display.

Functional cookies help perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collecting feedback, and other third-party features.

No cookies to display.

Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics such as the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.

No cookies to display.

Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.

No cookies to display.

Advertisement cookies are used to provide visitors with customized advertisements based on the pages you visited previously and to analyze the effectiveness of the ad campaigns.

No cookies to display.

Take a fresh look at your lifestyle.

গণগবেষণা : ক্ষমতাহীন মানুষের ক্ষমতা লাভের পথ

517

গণগবেষণা : ক্ষমতাহীন মানুষের ক্ষমতা লাভের পথ

গণগবেষণা একটি গবেষণা পদ্ধতি। এই গবেষণা পদ্ধতির মূল আলোচ্য বিষয় হল মানুষ ও তার সমাজ। মানব ইতিহাসের কোন এক পর্যায়ে মানুষ মিলিতভাবে গড়ে তুলেছিল মানুষের সমাজ।

সমাজের ভেতর মানুষে মানুষে নানারকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছু সম্পর্ক হয় সামাজিক, কিছু অর্থনৈতিক, কিছু রাজনৈতিক, কিছু সাংস্কৃতিক আরো নানারকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সমাজে মানুষে মানুষে তৈরী হয়েছে নানারকম ঐক্য, সাম্য। একইভাবে মানুষে মানুষে তৈরী হয়েছে হিংসাত্মক বিভেদ ও আকাশপাতাল বৈষম্য।

মানুষ মানুষের উপর চালিয়েছে অমানবিক শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ণ। নির্যাতিত মানুষ বিভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করেছে, রুখে দাঁড়িয়েছে শোষন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে।

আবার এই মানুষ সম্মিলিতভাবে তার সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছে বিভেদ বৈষম্যহীন সমাজ। প্রকৃতির (যেমন- ঝড়, ঝলোচ্ছাস, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদি) বিরুপতাকে মানুষ সবসময়ই মোকাবেলা করেছে সম্মিলিতভাবে।

অর্থ্যাত সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থেকেছে। এই লড়াইএ মানুষ তার মেধা, জ্ঞান ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়েছে । আবার মানুষের সমাজে মানুষ নিজেরাই বিভেদ-বৈষম্য সুষ্টি করেছে। মানুষই সম্মিলিতভাবে বিভেদ বৈষম্যকে প্রতিরোধ করে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে মানুষ তার মেধা, জ্ঞান ও সৃজন শক্তিকেই কাজে লাগিয়েছে ।

অর্থ্যাত মানুষের মূল শক্তি হল তার মেধা, জ্ঞান ও সৃজনশীলতা। মানুষের এই শক্তিগুলোই মানব সভ্যতা নির্মানে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে যা কিছু সহজ করেছে, যেমন- পোষাক-আশাক, ঘরবাড়ি, যানবাহন, নানারকম প্রযুক্তি রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার সহ হাজারো আবিষ্কার সবকিছুই মানুষের মেধা, জ্ঞান, সৃজনশীলতার ফসল।

মানুষ একটি সৃষ্টিশীল জীব এবং মানুষের সৃষ্টিশীলতাই তার আসল শক্তি। যে কোন কঠিন বা বিরুদ্ধ আর্থসামাজিক অবস্থাকেই মানুষ সৃষ্টিশীলভাবে মোকাবেলা করতে পারে।

গণগবেষণার মূল প্রেরণা মানুষের এই সৃজন ক্ষমতা। জ্ঞান, বুদ্ধিবৃত্তি ও সৃজনশক্তির বিকাশ ঘটলেই মানুষের মুক্তি ঘটে (মানুষের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাতিক মুক্তি ঘটে)। সকল মানুষের মধ্যে এই সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও মেধা রয়েছে । অনেক সময় ইতিবাচক পরিবেশের অভাব, মানসিকভাবে পরনির্ভরশীলতা বা উদ্যোগ নিতে অনিহার কারণে মানুষের সৃষ্টিশীলতার প্রয়োগ হয় না।

গণগবেষণা প্রতিটা মানুষের জ্ঞান ও সৃজনশক্তির স্বীকৃতি দেয়। গণগবেষণায় বলা হয়-

• সমাজে বসবাসরত প্রতিটি স্বাভাবিক মানুষই অনেক বিষয়ে জ্ঞানী। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি, যে যেখানে বাস করে, যে কাজ করে, যে সামাজিক সম্পর্কে সম্পর্কিত সে সকল বিষয়ে উক্ত ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে। তবে যে কোনো ব্যক্তির জানা সকল জ্ঞান সবসময় সক্রিয় থাকে না। যে ব্যক্তি যতো বেশি মাথার চর্চা করে সেই ব্যক্তির মধ্যে তার জানা বিষয়গুলো ততো বেশি পরিমাণে সক্রিয় থাকে।

• কোনো সত্যকে অনুশীলনের মধ্যদিয়ে উপলব্ধি করাই হলো জ্ঞান। জ্ঞানের বিষয়টি অর্জন করার বিষয়, এটা একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে স্থানান্তর করা যায় না। যে শিখতে চায় সেই শুধু শিখতে পারে, এই শেখার ক্ষেত্রে অন্য জ্ঞানী ব্যক্তি সহযোগিতা করতে পারে মাত্র।

• বিজ্ঞান বলছে : মানুষের জানা বিষয়গুলি তার মাথার ভেতর তিনটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে: (১) সক্রিয় জ্ঞান বা সচেতন জ্ঞান; (২) আধাচেতন জ্ঞান; এবং (৩) সুপ্ত জ্ঞান। অনেকে মিলে একসাথে যদি মাথা খাটানো যায় তাহলে সচেতন জ্ঞানের পাশাপাশি আধাচেতন জ্ঞান ও সুপ্ত জ্ঞানও ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠে।

• মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল তার মেধা। মেধার কারণেই মানুষ অন্য প্রাণী ও প্রকৃতির উপর আধিপত্য করছে। ফলে একজন মানুষ যদি তার মেধার ব্যবহার ঠিকমতো করতে পারে তাহলে সে বহুধরনের প্রতিকূলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

• যৌথভাবে মাথা খাটালে সকলের আধা চেতন ও সুপ্ত জ্ঞান উদ্ধার করতে পারে। পাশাপাশি সকলের জানা বিষয়গুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ফলে নতনু নতুন জ্ঞান সৃজন করা সম্ভব হয়। নতুন এই সৃজিত জ্ঞান কোনো কোনো সময় কোন জনগোষ্ঠীর মূল সমস্যা সমাধানের জন্য নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

• প্রতিটি মানুষ যেমন স্বতন্ত্র তেমনই প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি জনগোষ্ঠী কিংবা প্রতিটি গ্রাম অন্য পরিবার, জনগোষ্ঠী বা গ্রাম থেকে স্বতন্ত্র। ফলে ব্যক্তি, পরিবার, জনগোষ্ঠী ও গ্রামের সমস্যাও হয় ভিন্ন ভিন্ন। ফলে যৌথভাবে যখন কোনো জনগোষ্ঠী বা গ্রামের লোকেরা নিজেদের সমস্যাকে অনুসন্ধান, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করেন ও সমাধানের উপায় বের করেন তখন বিষয়টি শুধু উক্ত জনগোষ্ঠী বা গ্রামের মানুষের জন্যই প্রযোজ্য।

অন্য জনগোষ্ঠী বা গ্রামের জনসাধারণ তা থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে মাত্র। তা নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য হুবহু ব্যবহার করতে পারে না। সে কারণেই কোন জনগোষ্ঠীর অনুসন্ধানের মালিকানা শেষ পর্যন্ত থেকে যায় উক্ত জনগোষ্ঠীর কাছে, এর যদি কোন লিখিত রূপ নাও থাকে তাহলেও তা থাকে সকলের মাথায় মাথায়।

উপরের এই সিদ্ধান্তুগুলোর ভিত্তিতেই গণগবেষণার কার্যক্রম শুরু হয়। এতোকাল বলা হতো, সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র, বঞ্চিত, ক্ষমতা ও মর্যাদাহীন মানুষেরা কিছু জানে না, বোঝে না, তাদের কোন জ্ঞান নাই। উন্নয়নের প্রশ্নে তাদের বিবেচনা করা হতো এক ধরণের নির্জীব নিস্ক্রিয় বস্তুর মতো। তাদের কোন মতামত, সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়া হতো না। এমনকি অনেকক্ষেত্রে তাদের কথা বলারই কোন অধিকার ছিল না।

বিষয়টি এরকম ছিল যে, গুটিকয় মানুষ উন্নয়নের চিন্তা করবে, দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, তারাই সিদ্ধান্ত নিবে কি করলে দরিদ্র সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে। ফলে উন্নয়ন সম্পর্কটি ছিল দাতা-গ্রহিতার (প্যাট্টন-ক্লায়েন্ট)। গুটিকয় মানুষ দান করবে আর একদল মানুষ হাত পেতে সে দান গ্রহণ করবে। সৃষ্টিশীল জীব হিসাবে মানুষের জন্য এটা চরম অবমাননাকর ব্যবস্থা। মানবতার চরম লঙ্ঘন।

কিন্তু গণগবেষণা বলছে, যে মানুষ যে কাজ করে সে মানুষ সে বিষয়ে জ্ঞানী। অর্থ্যাত যে কৃষি কাজ করে সে কৃষি কাজের ব্যাপারে জ্ঞানী। কামার, কুমার, জেলে, তাতী, কারখানার শ্রমিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, গৃহিনী যে যেই কাজ করে সে সেই কাজের ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানে। যে যেই কাজ কোনদিন করেনি সেই কাজের ব্যাপারে জানেন না।

আবার যে মানুষ যে অবস্থায় বসবাস করে সে সেই ব্যাপারে ভালো জানে, যেমন- যে দৈনিক ১০০ টাকা দিয়ে পরিবার চালায় সেই সবচেয়ে ভালো করে জানে কেমন করে এতো কম টাকা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে হয়। আবার যে বন্যাদূর্গত বা খরাপ্রবণ এলাকায় থাকে বা ভাঙ্গা কুটিরে বা শহরের নোংড়া বস্তিতে বসবাস করে তারাই সবচেয়ে ভালোভাবে বলতে পারবে সেখানকার প্রতিকুলতা ও সমস্যাগুলো কী কী এবং কী করলে এই সমস্যাগুলো দূর করা যাবে।

আবার যে মানুষ যে ধরণের সামাজিক সম্পর্কে সম্পর্কিত সেই সম্পর্কগুলোর ভেতরের বিষয় তারাই সবচেয়ে ভালভাবে বলতে পারবে। যেমন- কারখানার মালিক ও শ্রমিক বা জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিক এমন এক ধরণের সামাজিক সম্পর্কে সম্পর্কিত যে, এই দুয়ের মধ্যে সাধারণত বন্ধুত্ব হয় না। দুই জনের সমস্যা ও সুযোগ ভিন্ন ভিন্ন।

সমাজে এই দুই ধরণের মানুষের ক্ষমতা ও মর্যাদাও দুই রকম। সমাজে যাদের ক্ষমতা ও মর্যাদা কম বা নেই তারাই জানে মর্যাদাহীন হয়ে বেঁচে থাকার মনোবেদনা কতো কঠিন। ক্ষমতা না থাকলে নিজে কতটা অসহায় বোধ করে মানুষ। এবং এ সকল প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে কেমন করে টিকে থাকতে হয় তাও তারাই সবচেয়ে ভালোভাবে জানে।

কিন্তু তাদের এই জানার কোন স্বীকৃতি ছিল না। উচ্চশিক্ষিত পন্ডিত গবেষকরা গবেষণা করতেন, তারাই দরিদ্রদের সমস্যার সমাধান দিতেন। তারাই বলে দিতেন কি করলে দারিদ্র বিমোচন হবে? কিন্তু তাতে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে কি? হয়নি। অনেক সময় সমস্যা সমাধান না হয়ে বরং বেড়েছে।

মানুষের পুরোনো সমস্যার সাথে আরো নতুন নতুন সমস্যা যুক্ত হয়েছে এইসব গবেষণার মধ্য দিয়ে। আমাদের দেশে এরকম ভুরিভুরি উদাহরণ রয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচনের জন্য হাজার হাজার গবেষণা হয়েছে। সেসব গবেষণার জন্য লক্ষ্যকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে কিন্তু তাতে দারিদ্র তেমন কমেনি।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দরিদ্র ও সমস্যার মধ্যে থাকা মানুষ নিজেরা নিজেদের বিষয়গুলো নিয়ে কখনও গবেষণা করেননি। তেমন কোন সুযোগও তারা পাননি। অথচ মানুষ হিসাবে তার যে জ্ঞান রয়েছে তা ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেতো।

গণগবেষণা মানুষের সেই জ্ঞানের উপর আস্থা রাখে, সেই জ্ঞানকে পরিপূর্ণরূপে কাজে লাগায়। সেই জ্ঞানের পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে, উন্নয়নের বহুমুখী পথ আবিস্কারের মাধ্যমে সমাজের আমূল পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। (THP হতে)

শিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত সকল পোস্ট।

Comments are closed.