শুন্য জোড় নাকি বিজোড়? প্রশ্নটি বেশ আনন্দ উদ্দীপক।
আমরা উপরের উদাহরণ থেকে অর্থাৎ শুন্য কি প্রকৃত পক্ষেই বা আসলেই শুন্য ? আলোচনা থেকে নিশ্চিত হতে পেরেছি যে শুন্য আসলেই শুন্য নয়। এর মধ্যে কিছু একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। উপরের ছবিতে বা সংখ্যারেখাটিতে দাগ কেটে পূর্ণ সংখ্যা বা ইনটিজারগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পূর্ণ সংখ্যাগুলোর মধ্যে ১,৩,৫,৭,৯,১১,১৩,১৫, ,… এগুলো বিজোড় সংখ্যা আর ২,৪,৬,৮,১০,১২ ,…. এগুলো জোড় সংখ্যা। এবার বলুন তো শূন্য জোড় না বিজোড়?
আমরা যদি উপরের সংখ্যা রেখা দেখি তাহলে দেখতে পারবো সংখ্যারেখায় কখনো পাশাপাশি দু’টি জোড় সংখ্যা বা দু’টি বিজোড় সংখ্যা নেই। প্রথমটি জোড় সংখ্যা হলে পরেরটি অবশ্যই বিজোড় সংখ্যা হবে। যেমন: ৩ বিজোড় আর ৩ এর পরের সংখ্যা ৪ জোড়, আবার ৬ জোড় আর ৬ এর আগের সংখ্যা ৫ বিজোড় বা তার পরের সংখ্যা ৭ বিজোড়।
আমরা যদি সংখ্যারেখার এই দিকটা দেখি তাহেলে ১ এর আগের সংখ্যা শূন্য কিন্তু জোড় সংখ্যা বলে বিবেচিত হয়। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে জোড় সংখ্যা বলতে আমরা কী বুঝি? দুইটি জিনিস যখন একত্রে মিলিত হয়, তাকে বলে জোড়। সে হিসেবে আমরা সিদ্ধান্তে গ্রহণ করতে পারি যে, শূন্য হলো n-জোড়া বিপরীত মান বিশিষ্ট বস্তুর সমষ্টি।
আমরা বিষয়টিকে সহজ করার জন্য আরও কিছু আলোচনা করব।
১। আমরা জানি, যে সকল সংখ্যা ২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য তাদেরকে জোড় সংখ্যা বলে।
০, ২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। অর্থাৎ, ০ কে দুই দ্বারা ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না, যেখানে ভাগশেষ শূন্য (০)
২। সকল জোড় সংখ্যাকে ২n২n দ্বারা প্রকাশ করা যায়, এবং শূন্যের ক্ষেত্রে সেখানে n=০ n=০
৩। সেট আকারে প্রকাশ করলে সকল জোড় সংখ্যার সেট ={…,−6,−4,−2,0,2,4,6,……,−6,−4,−2,0,2,4,6,…}
৪। সেট গঠন পদ্ধতিতে = {x|x,x=2n,n∈Zx|x,x=2n,n∈Z}
আলোচনাটিকে নিচের মতো করেও ভাবতে পারি।
একটি সংখ্যা জোড় হবার জন্য যা যা শর্ত মানা দরকার শূন্য সব কয়টি শর্তকেই মানে। যেমন-
১। জোড় + জোড় = জোড় , (২+২ = ৪ যা জোড়, তেমনি ২+০ = যা জোড় )
২। জোড় – জোড় = জোড়, (৪-২ = ২ যা জোড়, তেমনি ৪-০ = ৪ যা জোড় )
৩। বেজোড় + বেজোড় = জোড় (৩ + ১ = ৪ যা জোড়, কিন্তু ৩ + ০ = ৩ যা বিজোড় ),
৪। বেজোড় – বেজোড় = জোড় (৩ – ১ = ২ যা জোড়, কিন্তু ৩ – ০ = ৩ যা বিজোড় ),
৫। কোন বেজোড় সংখ্যার আগের সংখ্যাটি জোড় হয় (১ এর আগের সংখ্যাটি ০),
৬। কোন সংখ্যাকে ২ দিয়ে গুন করার পর যে সংখ্যাটি হয় তা হয় একটা জোড় সংখ্যা (২x২ = ৪ যা জোড় আবার ০x২=০ সুতরাং এটি জোড়)।
৭। একটি জোড় সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ অবশ্যই শূন্য হতে হবে। সুতরাং ০ কে ২ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ ০ হয়। তাই শূন্য(০) একটি জোড় সংখ্যা। যেমন ৪ ভাগ দুই সমান ২, যা জোড়।
৮। ০ জোড় সংখ্যা কারণ জোড় সংখ্যাকে 2n আকারে প্রকাশ করা হয়। বিজোড় সংখ্যাকে প্রকাশ করা হয় 2n+1 দিয়ে। ০ কে 2n দিয়ে প্রকাশ করতে হয়।
৯। আরেকটা কারণ হলো 1 এবং -1 দুটোই বিজোড় সংখ্যা দুটি বিজোড় সংখ্যা কখন পাশাপাশি বসতে পারেনা মাঝে অবশ্যই একটি জোড় সংখ্যা থাকবে।
১০। কোন সংখ্যাকে জোড় বলা হয় যদি তা পূর্ণসংখ্যা ২ এর গুণিতক হয়। শূন্য দুই এর একটি গুণিতক, অর্থাৎ ০ × ২, সুতরাং শূণ্য জোড়। উদাহরণসরূপ, ১০ জোড় হবার কারণ এটা ৫ × ২ এর সমান। 0<10^-99.99999999999999999…………………
সংখ্যাগুলো সব সময় একটি ছন্দ মেনে চলে … বিজোড়, জোড়, বিজোড়, জোড়, বিজোড়… এখন যেহেতু দুই একটি জোড় সংখ্যা এবং এর আগে এক বিজোড়, তাহলে যে কোন ঋনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার আগে প্রথম কোন পূর্ণসংখ্যা হল শূণ্য। তাই শূণ্যকে অবশ্যই জোড় হতে হবে।
যদি কোন ব্যক্তির শূণ্যটি বস্তু থাকে এবং সে সেটিকে দুই ভাগ করে তবে প্রত্যেক ভাগ শুন্য পড়বে, যা সমান।
কিছু সময় শূন্যকে জোড় বা বিজোড় কোন পক্ষেই যুক্তি দেখানো হয় না। শুন্যকে শুন্য হিসাবেই দেখানো হয়েছে। এর স্বপক্ষে ১টি হলো যুক্তি আর আরেকটি হলো গণিতের এতদিন ধরে চলে আসা রীতি। যেমন-
গাণিতিকভাবে জোড় সংখ্যা শব্দের অর্থ হলো জোড় এমন এক পূর্ণসংখ্যা যা ২ এর গুণিতক। “জোড়” শব্দটিকে সাধারণভাবে “দুই এর অশূণ্য গুণিতক” বলে ধরা যায়। যেহেতু এখানে ধরে নেয়া হচ্ছে এজন্য এ যুক্তিটি কম গ্রহণযোগ্য।
আরেকটি যুক্তি হলো-
গণিতে ‘ ০’ জোড় বা বিজোড় এ ধরনের কোন সংখ্যা হিসেবে দেখানো হয় নাই । “০ “সবসময় ০। কেননা এর যোগ বা বিয়োগে রাশির মানের পরিবর্তন হয় না। তাই “০” জোড় বা বিজোড় কোনটাই নয় ।
আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, জোড় সংখ্যাগুলির মধ্যে শূন্য কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। শূন্য জোড় পূর্ণসংখ্যার পরিচয়সূচক উপাদান, এবং এটি পর্যায়ক্রমে আসা সকল উপাদানের ভিত্তি কেস। শূন্যের জোড় হবার প্রবণতার সরাসরি প্রয়োগের প্রমাণ আছে এবং এর কাঠামো জোড় সংখ্যার অনুরুপ। সাধারণভাবে, ০ সকল পূর্ণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য, যার মধ্যে দুই এর সকল ঘাত আছে। ফলে, শূন্য সকল সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোড়।
Comments are closed.