এসএসসি-এইচএসসির ফল তৈরির কাজ শুরু, বিকল্প পদ্ধতিতে
বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে আটকে থাকা ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বা নিয়ন্ত্রণে থাকলে নভেম্বরে দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাছাড়া এবারে অ্যাসাইমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষার একটা অংশ মূল্যায়ন করা হবে। সেই অ্যাসাইমেন্ট দেওয়ার শুরু রোববার (১৮ জুলাই) থেকে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোপাস না দিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরীক্ষা নেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার প্রাথমিক প্রক্রিয়া আজ থেকে শুরু। পরীক্ষার না হওয়ার পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে শেষ সময় পর্যন্ত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করা হবে। যদি সম্ভব না হয় অবশেষে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের সঙ্গে অ্যাসাইমেন্ট করে ফলাফল দেওেয়া হবে।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড থেকে জানা যায়, দেশব্যাপী প্রায় ২২ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে অ্যাসাইনমেন্ট আপলোড করা থাকবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেখান থেকে ডাউনলোড করে তা শিক্ষার্থীদের দেবে।
মূল বিষয় যেমন বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা, সাধারণ বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মতো আবশ্যিক এবং চতুর্থ বিষয়ে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পরীক্ষাও দিতে হবে না শিক্ষার্থীদের। বিভাগভিত্তিক তিনটি করে মোট ৯ বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এ কার্যক্রম চলবে ১২ সপ্তাহ ।
প্রতিটি বিষয়ে আটটি করে মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। মধ্য অক্টোবরে এ কার্যক্রম শেষ হবে। এরপর এক মাস থাকবে পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়। এর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে মধ্য নভেম্বরে নেওয়া হবে এসএসসি পরীক্ষা।
আবার, ২৬ জুলাই এইচএসসি ও সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। এ স্তরের শিক্ষার্থীদের ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এতেও গ্রুপভিত্তিক তিনটি করে বিষয়ে মোট ছয়টি পত্রে (প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র) এই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। প্রতিপত্রে পাঁচটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এদেরও সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইতোমধ্যে ছাপানো হয়ে গেছে। সেখান থেকেই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হতে পারে অ্যাসাইনমেন্ট। অন্যদিকে এইচএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধন কাজও শেষ হয়েছে। শুধু মুদ্রণ এর কাজ বাকি। এদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এবং প্রণীত প্রশ্নপত্র অগ্রাধিকার পাবে।
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গত বছরের মতো এবারও এসএসসি থেকে ৭৫ আর জেএসসি থেকে ২৫ শতাংশ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফল করা হবে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসির ফলের ওপর নম্বর প্রাপ্তির শতভাগই গুরুত্ব থাকবে । আর যদি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়, তাহলে নৈর্বাচনিক বিষয়ে আগের (জেএসসি ও এসএসসি) ফলে নজর দেওয়া হবে না। তখন অ্যাসাইনমেন্টের ওপর জোর দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আগের চেয়ে এখন ৫০ শতাংশ প্রশ্নের কম উত্তর লিখতে হবে। সব মিলে শিক্ষার্থীদের জন্য যতটা সহজ করা যায়, সেই দিকটি চিন্তায় রাখা হয়েছে। কিন্তু তাদের লেখাপড়া করতে হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের এবারের মূল লক্ষ্য অটোপাসের পরিবর্তে মূল্যায়ন করেই রেজাল্ট দেয়া। বর্তমানে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চলতে থাকবে। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। অন্য দিকে আবশ্যিক বিষয় কেন নেয়া হবে না তার কারণে তিনি বলেন, আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার কারণ দুটি। প্রথমত, সংক্রমণ রোধের চেষ্টা। কেননা আবশ্যিক বিষয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীই পরীক্ষার হলে আসবে।
সূত্র মতে জানা গেছে, যদি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলে এক বেঞ্চে একজন করে এবং ‘জেড’ আকৃতিতে বসানো হবে। একেক দিন একটি করে গ্রুপের পরীক্ষা থাকবে। এরপরও যদি কোনো কেন্দ্রে আসনব্যবস্থার সংস্থান না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে আসন ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রসচিবদের স্বাধীনতা দেওয়া হবে বলে জানান আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।- সূত্র-ঢাপো।
Comments are closed.