শিশুদের অপরাধ যতই গুরুতর হোক না কেন, তাদের ১০ বছরের বেশি সাজা দেয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছেন বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিচারপতি মো. সওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দু ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর রায়টি প্রকাশিত হয়।
রায়ে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে-
১. শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জাবনবন্দি গ্রহণ জুবেনাইল বিচার পদ্ধতির ধারণার পরিপন্থি।
২. নিউরোসায়েন্স এবং সাইকোলজিক্যাল গবেষণা অনুযায়ী, শিশুরা তাদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নয়।
৩. শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বস্তুত, ব্রেনের যে অংশ আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় ব্রেনের সে অংশ পরিপক্ক হয় না।
৪. শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরিণতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে না। অনেক ক্ষেত্রে তারা অপরাধের দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।
৫. কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়ার প্রলোভনে শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক জাবনবন্দি দিতে রাজি হয়ে যায়।
হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের রায়ে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের একটি মামলার রায় পর্যালোচনাসহ বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালতের নজিরগুলো উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের লিখিত আর্টিকেল, বই, সায়েন্টিফিক রিসার্চের ফলাফল নিয়েও আলোচনা করে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
১. শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জাবনবন্দির কোনও সাক্ষ্যগত মূল্য নেই।
২. স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোনও শিশুকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
৩. অপরাধ যা-ই হোক না কেন, একজন শিশুকে ১০ বছরের বেশি সাজা প্রদান করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের ফৌজদারি কার্যবিধিতে সুনির্দিষ্ট কোনও বিধান নেই। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠন বিবেচনায় ১৯৭৪ সালের শিশু আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১৩ সালে নতুন শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে শিশুর বয়স, জবানবন্দি গ্রহণ, দণ্ড ও শিশু শোধনাগারসহ বিশেষ বিশেষ বিধান রাখা হয়। এ বিষয়ে দেশের উচ্চ আদালতের পক্ষে-বিপক্ষে রায় ছিল। সে কারণে ফুল বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতির বরাবর একটি আবেদন পাঠানো হয়েছিল।
ওই আবেদনের ধারাবাহিকতায় বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে তিন সদস্য বিশিষ্ট ফুলবেঞ্চ গঠন করে দেন।
যেহেতু আইনের জটিলতা ব্যাখ্যা জড়িত, সেহেতু হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এমআই ফারুকি এবং শাহদীন মালিককে এমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। সবার শুনানি শেষে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
সূত্র: ব্রেকিংনিউজ
Comments are closed.