বগুড়ায় গাছে চড়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী অনলাইনে জুম প্লাটফর্মে ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এমন অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. বেলাল হোসেন। লেখাটা আমাদের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলঃ
“গতকাল বগুড়া সরকারি শাহসুলতান কলেজে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ) চতুর্থ বর্ষ অনার্স বাংলা বিষয়ের মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলাম জুমপ্লাটফর্মে । পরীক্ষা চলাকালীন সময় হঠাৎ লক্ষ করি এক শিক্ষার্থী গাছে চড়ে ভাইভা দিচ্ছে ! বোর্ডের সকলের দৃষ্টি তখন তার দিকে ।
বোর্ডের অন্য সদস্যদের মতো আমিও তখন শঙ্কিত ! শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলাম- তুমি গাছে ওঠেছো কেন ? সে বললো, “স্যার আমার গ্রামে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না ! পরীক্ষা যদি মিছ যায় ! তাই বাধ্য হয়ে গাছে চড়েছি ” ! সকালে বেশ বৃষ্টি হয়েছে । গাছ ভেজা ছিল । যে কোনো সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো ! সবাই মিলে দ্রুত ওকে গাছ থেকে নামালাম । ওর কথা যে মিথ্যে নয় আরও কয়েকজনের ভাইভা নিতে গিয়ে তার প্রমাণ পাওয়া গেল ।
কেউ বাড়ির বাইরে খড়ের গাদায়, কেউ মাচাংয়ে বা ফাঁকা মাঠে, কেউ বা বাঁশ ঝাড় ও উঁচু ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চেষ্টা করেছে । ওদের কথা আমরা শুনি তো ওরা আমাদের কথা শুনতে পায় না ! যেটুকু পাওয়া যায় সেটাও ভাওয়াইয়া গানের সুরের মতো ভাঙা ভাঙা ! আমাদের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ও গতি কেমন আমরা সবাই জানি । আমরা ৫জির স্বপ্ন দেখছি কিন্তু ৪জির সেবাই ঠিক মতো দিতে পারি নি !
আমাদের ৬০/৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনও খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করে । কেউ পার্টটাইম চাকরি করে, কেউ টিউশনি, কেউ বা গার্মেন্টসে শ্রম দেয় ! অনার্সে ভর্তি হয় শত শত শিক্ষার্থী । কিন্তু ক্লাসে আসে হাতে গোনা কয়েকজন ! এদের আমরা না দিতে পারছি ঠিকমতো পাঠ, না পারছি জীবনের শিক্ষা দিতে ! আর দক্ষ মানবসম্পদ সে এক অধরা স্বপ্ন ! আমাদের শিক্ষার্থী আমাদের শিখিয়ে গেল, গাছে শুধু সে একা ওঠেনি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও উঠেছে !”
সূত্রঃ পুন্ড্র কথা (২২ জুন, ২০২১)
Comments are closed.