Customize Consent Preferences

We use cookies to help you navigate efficiently and perform certain functions. You will find detailed information about all cookies under each consent category below.

The cookies that are categorized as "Necessary" are stored on your browser as they are essential for enabling the basic functionalities of the site. ... 

Always Active

Necessary cookies are required to enable the basic features of this site, such as providing secure log-in or adjusting your consent preferences. These cookies do not store any personally identifiable data.

No cookies to display.

Functional cookies help perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collecting feedback, and other third-party features.

No cookies to display.

Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics such as the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.

No cookies to display.

Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.

No cookies to display.

Advertisement cookies are used to provide visitors with customized advertisements based on the pages you visited previously and to analyze the effectiveness of the ad campaigns.

No cookies to display.

Take a fresh look at your lifestyle.

মাটি কী? মাটির গঠণ প্রক্রিয়া, মাটির প্রকারভেদ. দূষণ, দূষণরোধে করণীয়

6,520

মাটি কী? মাটির গঠণ প্রক্রিয়া, মাটির প্রকারভেদ. দূষণ, দূষণরোধে করণীয়

মাটি

মাটি  হলো  একটি  মিশ্রণ।

বিভিন্ন খনিজ বা অজৈব পদার্থ, জৈব পদার্থ,  পানি ও বায়ুর মিশ্রণই মাটি। মাটি  বলতে সাধারণত পৃথিবীর নরম ভূ-পৃষ্ঠ বা উপরিভাগকে বুঝায়।

মৃত্তিকা  বিজ্ঞানীদের মতে ভূ-পৃষ্ঠের যে নরম  উপরিভাগে  বা  যে  স্তরে  গাছপালা জন্মে এবং যেখান থেকে গাছ পুষ্টি শোষণ  করে  বড়  হয়  তাকে  মাটি বলে।

 

মাটির গঠন প্রক্রিয়া  

মাটির  বর্তমান  অবস্থা  লাভ  করতে  বহু  বছর  লেগেছে।

সূর্য  থেকে  বিচ্ছিন্ন  একটি  উত্তপ্ত গ্যাসপিন্ডরূপে পৃথিবীর সৃষ্টি। এ গ্যাসপিন্ড সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে ক্রমান্বয়ে ঠান্ডা হয় এবং এর উপরিভাগে অনেক বড় বড় শিলার উৎপত্তি হয়।

দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় তাপ, শৈত্য, তুষারপাত, বৃষ্টি, বন্যা, বায়ুপ্রবাহ, রাসায়নিক প্রক্রিয়া প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলাগুলো ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়।

আরো পরে গাছপালা ও জীবজন্তুর পচা দেহাবশেষ ক্ষুদ্র কণার সাথে মিশে মাটি গঠিত হয়েছে।

অতএব, মাটি হচ্ছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শিলাকণা, জৈবকণা, পানি ও বায়ুর সংমিশ্রণে গঠিত একটি মিশ্রণ।

বিভিন্ন স্থানের মাটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে। তাই বিভিন্ন স্থানের মাটি দেখতে ভিন্ন ভিন্ন, গঠনেও ভিন্ন।

তবে মাটির উপরিভাগ থেকে নিচের দিকে অনুসন্ধান করলে সাধারণভাবে কয়েকটি স্তর দেখা যায়।

চিত্রে যেমন দেখা যাচ্ছে তেমনি মাটির একদম উপরের স্তরটিতে পচা ও মৃত জীবদেহ মিশে থাকে।

পচা ও মৃত জীবদেহ মিশে তৈরি কালো বা অনুজ্জ্বল উপাদানকে হিউমাস বলে। মাটির উপরের দিকে হিউমাস বেশি থাকে।

এ হিউমাস থেকে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পায়। দ্বিতীয় স্তরে হিউমাস কমে আসে, এজন্য মাটি কম কালো বা কিছুটা উজ্জ্বল হয়।

তৃতীয় স্তর মূলত ক্ষুদ্র শিলাকণা দ্বারা গঠিত। সবশেষে নিচের স্তরটি কেবল শিলাখন্ড দ্বারা গঠিত।

বাংলাদেশের নদীর কাছাকাছি স্থানে বন্যা হয়। এসব স্থানের মাটির উপরিভাগ বন্যার পানি দ্বারা বয়ে আনা পলিমাটি দ্বারা গঠিত। এসব স্থানের মাটির উপরের স্তর সেজন্য খুব পুরনো হয় না।

এ মাটি ফসল চাষের জন্য খুব উপযোগী।

মাটি গঠনের উপাদান:  মাটির গঠন উপাদান মূলত চারটি। এ চারটি উপাদান মাটিতে বিভিন্ন্ পরিমাণে থাকে।

এর মধ্যে শতকরা ৪৫ ভাগ খনিজ বা অজৈব পদার্থ, ৫ ভাগ জৈব পদার্থ, ২৫ ভাগ পানি ও ২৫ ভাগ  বায়ু।

এছাড়া  ব্যাকটেরিয়াও মাটির অন্যতম উপাদান।

 

১। খনিজ বা অজৈব পদার্থ: মাটির খনিজ পদার্থের উৎস ভূ-পৃষ্ঠের আদি শিলা।  সূর্যের  তাপ,  বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ  ইত্যাদি  প্রাকৃতিক  শক্তির প্রভাবে আদি শিলা ক্ষয় হয়ে খনিজ পদার্থে পরিণত হয়।

মাটিতে খনিজ পদার্থের  পরিমাণই  সবচেয়ে  বেশি। বালিকণা,  কাদার  কণা,  পলিকণা ইত্যাদি খনিজ পদার্থ। খনিজ পদার্থ নানাভাবে  মিশে  মাটির  বুনট  সৃষ্টি করে।

২। জৈব পদার্থ: জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ। মৃত গাছপালা, জীবজন্তু মাটিতে মিশে জৈব পদার্থ সৃষ্টি হয়।

একে হিউমাসও বলে। জৈব পদার্থ মাটিকে উর্বর করে। যে মাটিতে জৈব পদার্থের উপাদান যত বেশি সে মাটি তত উর্বর।

জৈব পদার্থ মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। জৈব পদার্থের অণুজীব ক্রিয়াশীল হয়, ফলে কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি উদ্ভিদের গ্রহণ উপযোগী হয়।

৩। পানি: পানি মাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাটির কণার ফাঁকে ফাঁকে পানি জমা থাকে।

পানি উদ্ভিদের খাদ্য উপাদানকে দ্রবীভূত করে গ্রহণ উপযোগী করে। পানি মাটিকে রসালো রাখে। মাটিতে পানি থাকে বলেই বীজ অঙ্কুরিত হয়। বৃষ্টি ও সেচের পানিই মাটির পানির প্রধান উৎস।

৪। বায়ু: বায়ু মাটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাটির কণার ফাঁকে ফাঁকে বায়ুু থাকে। বীজের অঙ্কুেরাদগম ও মূলের শ্বাসপ্রশ্বাসে বায়ুর প্রয়োজন হয়।

বিভিন্ন অণুজীবের বংশবিস্তারেও বায়ু দরকার হয়। জমি চাষ দিলে মাটিতে বায়ুর পরিমাণ বাড়ে।

 

মাটির প্রকারভেদ

মাটিতে অজৈব  অংশের  পরিমাণ  সবচেয়ে  বেশি।  অজৈব  অংশের  বালিকণা,  সূক্ষ্মকণা,  পলিকণা মিলেমিশে মাটির বুনট তৈরি করে।

মাটির বুনটের ওপর ভিত্তি করেই মাটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা-বেলে মাটি, দো-আঁশ মাটি ও এঁটেল মাটি।

বেলে মাটি

বেলে মাটি: এ ধরনের মাটিতে বালিকণার পরিমাণ সবচেয়ে  বেশি থাকে।

এ  মাটির কণাগুলো আকৃতিতে বড় বলে মাটিতে যথেষ্ট ফাঁক থাকে এবং অনায়াসে পানি ও বায়ু প্রবেশ করতে পারে।

এ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা  কম  এবং  মাটির  উপরের  স্তর অনুর্বর।  সমুদ্র  উপকূল,  চর  এলাকা  ও মরুভূমিতে  এ  মাটি  দেখা  যায়।

তরমুজ, শসা, ফুটি, চীনাবাদাম, গোল আলু ও মিষ্টি আলু  ইত্যাদি  এ  ধরনের  মাটিতে  ভালো জন্মে।

দো-আঁশ মাটি: এ ধরনের মাটিতে বালি, পলি ও কর্দম কণা প্রায় সমান পরিমাণে থাকে।

দো-আঁশ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি।

এ মাটির পানি শোষণ ও ধারণ ক্ষমতা দুই-ই বেশি।

দো- আঁশ  মাটি কৃষিকাজের  জন্য  বেশি  উপযোগী। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের মাটিই দো-আঁশ মাটি।

কৃষিক্ষেত্রে দো-আঁশ মাটিকে আদর্শ মাটি বলা হয়।

দো-আঁশ মাটিকে আবার বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন- বেলে দো-আঁশ, পলি দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ। নিচে বিভিন্ন ধরনের দো- আঁশ মাটির পরিচয় দেওয়া হলো।

দো-আঁশ মাটি

ক) বেলে দো-আঁশ: এ ধরনের দো-আঁশ মাটিতে বালিকণার পরিমাণ বেশি এবং পলি ও কর্দম মিশ্রিত থাকে।

এ মাটি ঝরঝরে প্রকৃতির এবং শস্য জন্মানোর খুবই উপযোগী। তিস্তার অববাহিকায় এ মাটির আধিক্য লক্ষ করা যায়।

মুলা, তামাক, মরিচ ও কচু এ মাটিতে ভালো জন্মে।

খ) পলি দো-আঁশ: এ ধরনের দো-আঁশ মাটিতে পলিকণার পরিমাণ বেশি এবং জৈব ও খনিজ লবণ সমৃদ্ধ থাকে।

এ মাটি অত্যন্ত উর্বর ও সব ধরনের ফসলের উপযোগী।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে পলি দো-আঁশ মাটি দেখা যায়। ধান, পাট, আখ, নানাবিধ সবজি এ মাটিতে ভালো জন্মে।

গ) এঁটেল দো-আঁশ: এ ধরনের দো-আঁশ মাটিতে কর্দম কণার পরিমাণ বেশি থাকে।

পানি ও জৈব ধারণ ক্ষমতা বেশি। বেশি বৃষ্টিপাত ও অনাবৃষ্টি ছাড়া সহজে চাষ উপযোগী।

গঙ্গার অববাহিকা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ধান, তুলা, গম, ডাল, তেল ফসল ভালো জন্মে।

এঁটেল মাটি: এ ধরনের মাটিতে কর্দম কণার পরিমাণ বেশি  থাকে।

এঁটেল  মাটিকে  ভারী  মাটি  বলা  হয়।  এ  মাটিতে  বালিকণার চেয়ে পলিকণার পরিমাণ বেশি।

পানি ধারণ ক্ষমতা বেশী কিন্তু নিষ্কাশন ক্ষমতা কম। পানির সংস্পর্শে এঁটেল মাটি নরম হয়  আবার শুকালে খুবই শক্ত হয়।

ধান, পাট, আখ ও শাকসবজি এ মাটিতে ভালো জন্মে।

 

 

মাটি  ক্ষয়:

আমরা  পরিবেশের  চারপাশ পর্যবেক্ষণ  করলে  দেখব  বর্ষাকালে  নদীর পাড় ভেঙে যায় এবং মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে পানি প্রবাহের ফলে মাঠ/উঠান থেকে মাটি পানির সাথে মিশে যায় এবং মাটির কণা ভেঙে গিয়ে ক্ষয় হয়।

ঝড়ো হাওয়া, জলোচ্ছ্বাস ও সাগরের ঢেউ দ্বারা মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়।

অতিরিক্ত জমি চাষ, অতিরিক্ত পশুচারণ ও বনাঞ্চল ধ্বংস করে মানুষ মাটি ক্ষয় করে।

সুতরাং পানি, বায়ু ও  অন্যান্য  প্রাকৃতিক  কারণে  ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটি অন্যত্র চলে যাওয়াকে মাটি ক্ষয় বলে।

মাটি ক্ষয়ের  প্রভাব: মাটি ক্ষয়ের ফলে মাটির উপরিভাগের উর্বরতা ও পুষ্টি চলে যায়।

এভাবে ক্ষয় হতে হতে একসময় মাটি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মাটি ক্ষয়ের কারণে নদী-নালা ভরাট হয়।

নদীতে চর জাগে, বন্যা হয়। আমরা জানি যে, উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য নানাভাবে মাটির উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য মাটি প্রয়োজন।

মাটির ফাঁকে ফাঁকে যে পানি ও খনিজ লবণ থাকে তা উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির কাজে লাগে।

আমাদের মৌলিক চাহিদা যেমনÑঅন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার জন্য আমরা উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল।

শুধু মানুষ ও পশু-পাখি নয়, অন্যান্য ছোট জীবও মাটির উপর প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।

তাই মানুষসহ সকল জীবের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য মাটির ক্ষয় রোধ এবং মাটি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

 

মাটির ক্ষয়ের কারণ

মাটি হল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ও মানবীয় কার্যাবলীর দ্বারা মাটির উপরিভাগ যখন অত্যন্ত ধীরগতিতে বা দ্রুতগতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তখন তাকে সাধারণভাবে মাটি ক্ষয় বলে।

প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে মাটির উপরিভাগ ধীরগতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

কিন্তু মানুষের বিভিন্ন কার্যাবলীর দ্বারা মাটি ক্ষয় প্রাপ্ত হয় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। নিম্নে মাটি ক্ষয়ের কারণ গুলি আলোচনা করা হলো-

  1. A) প্রাকৃতিক কারণ-

১) জলপ্রবাহ-জলপ্রবাহ মাটি ক্ষয়কারী প্রাকৃতিক শক্তি গুলির মধ্যে অন্যতম।

বৃষ্টিপাত অপেক্ষা অনুপ্রবেশ কম হলে জলপ্রবাহের দ্বারা মাটি ক্ষয় প্রাধান্য লাভ করে।

জলপ্রবাহ প্রধানত  Sheet erosion, Gully erosion, Rill Erosion-এই তিনটি পদ্ধতিতে মাটির ক্ষয়সাধন করে।

২)বৃষ্টিপাত-বৃষ্টিপাত যে কেবলমাত্র জলপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই নয়, মাটি ক্ষয়েও সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে।

বৃষ্টির ফোঁটা মৃত্তিকার ওপর আঘাত করে তার দ্বারা দানাকৃতি গঠনকে ভেঙে মাটির কণাগুলিকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

মাটির এই বিচ্ছিন্ন কণাগুলি জল স্রোতে ভেসে যায়। ফলে মাটি ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।

এছাড়া বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি সিক্ত হয় বলে মাটির কণাগুলি সহজে শিথিল ও জলে  দ্রবীভূত হয়ে অপসারিত হয়। ফলে মাটির ক্ষয় ঘটে।

৩) বায়ুর কার্য-সাধারণত গাছপালা হীন মৃদু ঢাল যুক্ত শুষ্ক ভূমি ভাগে মাটি স্তর আলগা হওয়ায় বায়ুপ্রবাহ দ্বারা মাটি ক্ষয় সর্বাধিক হয়।

প্রবল বায়ু প্রবাহের দ্বারা শিথিল মাটি কণা একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবাহিত হওয়ার ফলে মাটি ক্ষয় ঘটে।

বায়ুর এই ক্ষয়কারী ক্ষমতা নির্ভর করে বায়ুর গতিবেগ, উদ্ভিদ বিরল অঞ্চল ও বায়ুবাহিত কোয়ার্টাজ কণার পরিমাণের ওপর।

৪)ভূমির ঢাল-ভূমির ঢালের মাত্রার ওপর জলপ্রবাহের দ্বারা মাটি ক্ষয় বিশেষভাবে নির্ভরশীল।

ঢালবিহীন বা মৃদু সমতলভূমিতে মাটি ক্ষয়ের পরিমাণ কম।

কিন্তু অধিক ঢাল যুক্ত ভূমিতে উদ্ভিদের আবরণ না থাকলে ভূমিক্ষয় খুব বেশি হয়।

৫)ভূমিধস-উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বা খাড়াই পাহাড়ি ঢালে ভূমিধসের ফলে প্রচুর পরিমাণে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল হিমালয় অঞ্চলে ভূমিধসের ফলে প্রতিবছর প্রায় 500 মেট্রিক টন মাটি ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।

৬)ঝড় ও বন্যা-ঝড়ের সময় মাটির শিথিল কণাগুলি একস্থান থেকে অন্য স্থানে অপসারিত হয় বলে মাটি ক্ষয় ঘটে। আবার বন্যার সময় জলের তীব্র স্রোতেও যথেষ্ট পরিমাণে মাটি ক্ষয় হয়ে থাকে।

B)মানবীয় কারণ-

১)অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষ ছেদন-উদ্ভিদের শেকড় একদিকে যেমন মাটিকে শক্তভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে, অন্যদিকে তেমনি জল ও বায়ু প্রবাহের গতিবেগকে প্রতিহত করেও তাদের ক্ষয়কারী ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

কিন্তু মানুষ কৃষি, শিল্প, রাস্তাঘাট ও বাসস্থানের ভূমি সংস্থানের প্রয়োজনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষছেদন করার ফলে মাটি স্তর শিথিল হয়ে মাটি ক্ষয় ত্বরান্বিত হয়।

২)অবৈজ্ঞানিক প্রথায় কৃষিকাজ-আদিম জনগোষ্ঠীর লোকেরা পাহাড়ি ঢালে বনভূমি পুড়িয়ে মাটি খনন করে কৃষি কাজ করে।

এক অঞ্চলের মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পেলে তারা অন্যত্র গমন করে এবং সেখানেও একই পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করে। ফলে পূর্বের পরিত্যক্ত জমির আলগা মাটি স্তর সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

৩) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ-তৃণ মাটির ওপর আচ্ছাদনের আকারে অবস্থান করে জলের পৃষ্ঠ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। এছাড়া তৃণের শেকর মাটিকে শক্তভাবে ধরে রাখে।

কিন্তু তৃণভূমি অঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পশুচারণ ক্ষেত্র গড়ে উঠলে ওই তৃণ দ্রুত অবলুপ্ত হয় এবং মাটি স্তর উন্মুক্ত ও আলগা হয়ে পড়ে।

পরবর্তীকালে বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহের দ্বারা ওই উন্মুক্ত স্তরের আলগা মাটি কণা সমূহ অন্যত্র অপসারিত হয়। ফলে মাটি ক্ষয় ঘটে।

৪) নির্মাণকার্য-মানুষ কৃষির প্রয়োজনে জলাধার ও বাঁধ নির্মাণ করে, ভূমি কর্ষণ করে কৃষি ক্ষেত্র তৈরি করে, যাতায়াতের প্রয়োজনে রাস্তাঘাট নির্মাণ করে এবং বসতির প্রয়োজনে গৃহ নির্মাণ করে।

এইসব নির্মাণকাজের প্রভাবে মাটির উপরিস্তর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ওই দুর্বল মাটি স্তর অন্যত্র অপসারিত হয়। ফলে মাটি ক্ষয় ঘটে।

 

মাটি সংরক্ষণের উপায়: নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করে মাটি সংরক্ষণ করা যায়।

১) বৃষ্টির পানি মাটি ক্ষয় করে।

পানির বেগ কমিয়ে দিলে মাটির ক্ষয় কম হবে। জমিতে পানি প্রবাহের দিকে বাঁধ/আইল দিয়ে, ছোট ছোট নালা সমান করে দিয়ে, বড় বড় নালার ধারে আগাছার বেড়া ও শেষ প্রান্তে তারের জাল দিলে পানিপ্রবাহের বেগ কমবে এবং নালাগুলো ভরাট হয়ে জমি সমান হবে। ফলে মাটির ক্ষয় হবে না।

২) বৃষ্টির পানির কারণে মাটির ক্ষয় রোধ করতে হলে পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা নিতে হবে। বৃষ্টির পানি সরার জন্য মাটির নিম্মস্তরে টাইল নালা করে দিতে হবে যাতে পানি ধীর গতিতে সরে যায়।

৩) জমিতে অধিক পরিমাণে জৈব পদার্থ প্রয়োগ করলে মাটির শোষণ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে কম পরিমাণ পানি নিচের দিকে গড়ায়। অর্থাৎ জৈব পদার্থের ব্যবহার বৃদ্ধি করলে মাটির ক্ষয় রোধ হয়।

৪) পাহাড়ি ঢালে ধাপে ধাপে কেটে জমি চাষ করলে বৃষ্টি দ্রুত গড়াতে পারে না। ফলে মাটি ক্ষয় কম হয়।

মাটির ক্ষয় রোধ

৫) পাহাড়ি  ঢালে  আড়াআড়ি  লাইন  করে দীর্ঘস্থায়ী ফসল চাষ করলে মাটির ক্ষয় কম হয়।

৬) পাহাড়ি  ঢালে  আড়াআড়িভাবে  ক্ষুদ্র  ক্ষুদ্র জমি তৈরি করে চাষ করলে মাটি ক্ষয় কম হয়।

৭) বন-জঙ্গল  সৃষ্টি  করে  পানি  ও  বাতাস প্রবাহের গতিরোধ করলে মাটি ক্ষয় কম হয়।

৮) অনিয়ন্ত্রিত    পশুচারণের    ফলে    মাটির উপরিভাগ ঘাসশূন্য হয় ফলে মাটি আলগা হয়ে পড়ে। এতে মাটির ক্ষয় বাড়ে। পশুচারণে পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করলে মাটি ক্ষয় কম হবে।

৯) বন্যার ফলে মাটির ক্ষয় হয়। ব্যাপক বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা হলে উল্লেখযোগ্যভাবে মাটি ক্ষয় রোধ হবে।

 

 

 

মাটি দূষণ: আমাদের জীবন ধারণের জন্য মাটি অত্যাবশ্যক।

মাটিতে বিভিন্ন ফসল ফলে যা আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি।

শুধু খাদ্যই নয় জীবনধারণের সবকিছুই আমরা যেমন- বাসস্থান, বস্ত্র, ঔষুধ ইত্যাদির জন্য আমরা যে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল তাও মাটিতেই জন্মায়।

উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবন  ধারণের  জন্যও  মাটি  অপরিহার্য। বর্তমানে মাটিকে আমরা বিভিন্নভাবে দূষিত করছি।

যার ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। প্লাষ্টিক, পলিথিন দ্রব্য ছাড়াও মাটিকে আমরা বিভিন্নভাবে  দূষিত  করছি।

এসবের  মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আবর্জনাসহ কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার এবং শিল্পকারখানার বর্জ্য ইত্যাদি।

 

মাটি দূষণের প্রভাব মাটি দূষণ রোধে করণীয়:

মাটি দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাটিতে বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

মাটি দূষণের জন্য দায়ী বিভিন্ন কঠিন ও রাসায়নিক বর্জ্য।

এসব বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলার কারণে পরিবেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাটিতে ফেলে দেওয়া কাঁচ, এলুমিনিয়াম, পলিথিন ইত্যাদি মাটিতে সহজে মিশে না।

ফলে মাটি তার উর্বরতা হারায়। তোমরা জেনে অবাক হবে এলুমিনিয়ামের মাটির সাথে মিশতে লাগে একশ বছর।

কাঁচের লাগে দু’শ বছর এবং পলিথিনের লাগে প্রায় সাড়ে চার’শ বছর। এছাড়াও এগুলো আমাদের নর্দমা, জলাশয়কে ভরাট করে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।

পরবর্তীতে এগুলো পুকুর, নদী, সাগর এসব স্থানেও স্থানান্তরিত হয়।

যার ফলে সকল জীবের বেঁচে থাকার জন্য এগুলো হুমকীর কারণ হয়। কৃষিজমিতে যে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় তা সকল জীবের জন্য ক্ষতিকর।

এসব রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্যের সাথে মিশে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

মাটি দূষণ রোধে প্লাষ্টিক, পলিথিন ইত্যাদি যেগুলো পঁচনশীল নয় সেগুলোর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

জমিতে কীটনাশক, রাসায়নিক সার ব্যবহার বর্জন করতে হবে। এছাড়াও যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ করা চলবে না।

 

মাটি নিয়ে আরও জানুন উইকিপিডিয়াতে

আমাদের সাইটটিতে ভিজিট করুন।

Comments are closed.