প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি ক্লাস্টারে আইসিটি পুল গঠন করে ‘গুগল মিট’ প্লাটফর্মে অনলাইন ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। প্রতিটি ক্লাস্টারে নির্বাচিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে ৩০ জন করে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনলাইন স্কুল ব্যবস্থাপনায় এ ক্লাস নেওয়া হবে। করোনার প্রকোপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরির কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘সারাদেশে প্রতি ক্লাস্টারে গুগল মিটে ক্লাস হবে। আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছে তারা ক্লাস নেবেন। যদি প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে নেবো। প্রতি বিদ্যালয়ে থেকে একজন করে শিক্ষার্থী অংশ নিলে একটি ক্লাস হিসেবে পরিচালনা করা যাবে। যদি কোনও ক্লাসে ৩০ জনের বেশি হয় সে ক্ষেত্রে আমরা আলদা করে আরেকটি অনলাইন ক্লাস চালু করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিভাবকের যদি ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা স্মার্টফোন থাকে তা হলে শিক্ষার্থীরা তা ব্যবহার করে গুগল মিটের ক্লাসে অংশ নিতে পারবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণমূলক এই ক্লাস নেওয়া হবে প্রায় ৩ হাজারের কাছাকাছি ক্লাস্টারে। গ্রাম অঞ্চলের ক্লাস্টারভিত্তিক একটি কেন্দ্র করে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হলেও শহরের প্রতিটি বিদ্যালয়ে গুগল মিটে ক্লাস হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল গুগল মিট ক্লাসের গাইডলাইনসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা নীতিমালা পাঠানো হয়।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে আইসিটি পুল করে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার সেটার নেতৃত্ব দেবেন। ক্লাস্টারের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইতোমধ্যে যারা গুগল মিটে কাজ করেছেন তারা আইসিটি পুলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কোনও ক্লাস্টারের কোনও শিক্ষকের গুগল মিট অরিয়েন্টেশন না হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষককে অরিয়েন্টেশন দিতে হবে। আইসিটি পুলের সদস্য ও অরিয়েন্টেশন নেওয়া শিক্ষকরা অভিভাবকদের মধ্যে যাদের স্মার্টফোন বা ডিভাইস আছে তাদের গুগল মিট ব্যবহার শেখাবেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, পিটিআই ইনস্ট্রাকটর (কম্পিউটার সায়েন্স), উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাকটরদের নিয়ে জেলাপর্যায়ে একটি কমিটি থাকবে। এই কমিটি অনলাইন ক্লাস বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। বিভাগীয় উপপরিচালক সার্বিক দ্বায়িত্বে থাকবেন।
বর্তমানে দেশের সকল বিদ্যালয়ে (যেখানে ইন্টারন্টে সুবিধা রয়েছে) ডাটা সরবরাহের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন ফোর-জি ডাটা সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে। এটি চালু হওয়ার আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন পাঠদানকারী শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে ডাটা সংগ্রহ করবেন। পিটিআই ইনস্ট্রাকটররা ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবেন।
পাঠের কনটেন্ট কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ করা হবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া একই পাঠ পরিকল্পনা অনুসরণ করে সারাদেশে অনলাইন ক্লাস হবে। একটি ক্লাসে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী হলে একাধিক ক্লাসের আয়োজন করতে হবে। অনলাইন ক্লাসের সময়সূচি সংসদ টিভি, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে পরিচালিত ‘ঘরে বসে শিখি’ পাঠ সম্প্রচারের সময় বাদ দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পাঠের অগ্রগতির খোঁজ নেবেন। এ ছাড়াও তিনি সংশ্লিষ্ট অনলাইন পাঠদানকারী শিক্ষকের কাছ থেকে মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংগ্রহ এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করবেন।
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কোনও একটি বিদ্যালয়ে কেন্দ্র স্থাপন করে গুগল মিট-এ ক্লাস নেওয়া হবে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এভাবে ক্লাস করানো হবে। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু হবে। প্রতিটি স্কুলকে ওয়াইফাইয়ের আওতায়ও আনা হবে। শিক্ষার্থী বেশি হলে কেন্দ্রও বাড়ানো হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হয়। তবে গুগল মিট-এ সারাদেশে সব ক্লাস্টারে একই ক্লাস নেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকরা ক্লাস করাবেন। এ নিয়ে অভিভাবকদেরও প্রশিক্ষণ দেবো।’
৩০ লাখ শিক্ষার্থী
গুগল মিট-এ সারাদেশে কতো শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার টার্গেট রয়েছে জানতে চাইলে আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘গ্রামে গুগল মিটে ১০ লাখ এবং শহরে ২০ লাখ মিলেয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া টেলিভিশন, রেডিও ও মোবাইল ফোনেও ক্লাস করার সুযোগ পাবে। যেসব এলাকায় অনলাইন নেই, সেখানে টেলিভিশন বা রেডিওর মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকরা সরাসরি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে সামজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠ সরবরাহ করবেন।’
উল্লেখ্য, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে ২২ মে পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা হয়। এ ছাড়া ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা করা হয়েছে এবং হল খুলে দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে ১৭ মে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। প্রাইমারি বার্তা
Comments are closed.