ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা বঞ্চনা ও ভাইভা বর্জনের ঘোষণা

ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা বঞ্চনা ও ভাইভা বর্জনের ঘোষণা

কেউ কথা রাখেনি- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর এ অমর সৃষ্টি যেন আষ্টেপিষ্টে বেঁধেছে শিক্ষা ব্যবস্থাপনাতেও।

নানা বঞ্চনা, গঞ্জনা আর কথা দেয়া-নেয়ার ফুল ঝুড়ি যেন শিক্ষা খাতে আজ নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ ভাতার টাকা।

বারবার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আর প্রতিশ্রুতির মায়াকথায় সময় অতিবাহিত করছেন কর্তৃপক্ষ।

এর আগে বিভিন্ন পিটিআইতে এ বিষয়ে মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি দেয়ার সময় আশ্বাসের বাণী ‍শোনা যায়।

 

নিয়ম অনুযায়ী ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি ইডুকেশন- ডিপিএড কোর্স বা প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীগণ গ্রহণ সময়ের ভিত্তিতে মাস হিসাবে একটি নির্দিষ্ট ভাতা পেয়ে থাকেন।

যা মূলত বিভিন্নভাবে ব্যয় হয়ে যায়।

 

২০১৯-২০ সেশন হতে চলমান সেশন অবধি বিভিন্ন মেয়াদের টাকা আটকে রয়েছে নানা জটিলতায়।

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনেকেই এ পেশাকে পর্যন্ত অবহেলিত একটি অংশ মনে করা শুরু করেছেন।

 

সারাদেশের পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে চলমান অসন্তোষ প্রকাশ্য চলে এসেছে যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক ।

আর লজ্জাস্কর পরিস্থিতি তৈরির জন্য নেপের দিকে ইঙ্গিত করছেন সকলে।

ন্যায্য পাওনা কেন তাদের দেয়া হবে না মর্মে এ আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে। তারা ভাইভা বর্জনের মতো কঠোর সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে চলছে।

 

বিষয়টিকে চরম অপমানজনক বলে মনে করছেন, ময়মনসিংহের প্রশিক্ষণার্থী পাতা ফাতেমা।

তিনি তার ফেসবুক লেখায় তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, নেপ আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তাঁর মতে, এতে শিক্ষকগণ অনলাইন কার্যক্রমের প্রতি উৎসাহ হারাবেন।

 

ভাইভা বর্জনের ঘোষণা মাইজদি পিটিআইয়ে

ভাতা’র টাকা না পাওয়ায় নোয়াখালী জেলার মাইজদী পিটিআইয়ের প্রশিক্ষাণার্থীগণ ২০২১-২১ সেশনের ভাইভা পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

আর তাদের এ ঘোষণার প্রতি একাত্বতা ঘোষণা করেছেন অনেক পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণার্থী।

এমনকি কর্তৃপক্ষ থেকে ভাতার বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসলে তারা সম্মিলিত অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।

তবে অনেক প্রশিক্ষণার্থী তাদের এ ধরণের কাজকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে তারা ৪০টি পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর সম্বলিত জেলা প্রশাসক, পিটিআই সুপারিনটেন্ডেন্ট ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন।

 

 

শিক্ষক শিপন ঘোরামীর ‘র ওয়াল থেকে জানা যায়, এর আগে ভাতার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান ছিল এখনও আছে।

কেননা ২০১৯-২০ সেশনের টাকা না দেয়ায় সকলের মধ্যে সন্দেহ ও উৎকন্ঠার জম্ম হয়।

কোভিড-১৯ অর্থাৎ করোনার প্রভাবের কারণে ঢাকায় যাওয়া আসায় বিঘ্ন ঘটায় তারা দ্রুত আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না তবে শীঘ্রই তারা আইনী লড়াইয়ে যাবেন বলে জানা যায়।

তিনি ঢাকার আশেপাশের পিটিআেইয়ের প্রশিক্ষণার্থীদের সহযোগিতা চান।

 

মোঃ আব্দুস সালাম নামের একজন লিখেন, দেশপ্রেম, বড় কর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা এসব বিষয় এমন হলে কমতে থাকবে।

আর এমন প্রভাব যদি শিক্ষক মনে গেঁথে যায় তাহলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে গোটা জাতীর প্রতি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

হিসাব মতে, বাংলাদেশের ৬৭টি পিটিআইতে প্রশিক্ষণার্থীগণ অংশ নিয়েছেন।

২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রতি পিটিআইতে ৪০০জন করে রয়েছেন।

সে হিসাবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১২মাস এবং ২০২১-২২ সেশনে ৬মাসের প্রশিক্ষণ ভাতা এবং ২০২১-২২ সেশনের প্রশিক্ষণার্থীরা কীট অ্যালাউন্স বাবদ ২০০০ টাকা করে পাবার কথা ছিল।

মোটামুটি হিসাবে মোট প্রায় ১৬০-১৭০ কোটি টাকার মতো।

 

উল্লেখ্য, প্রতিটি পিটিআইয়ের ইন্সট্রাক্টরগণের দুই শিফট পরিচালনা করার জন্য তাঁদের মূল বেতনের ৩০% অতিরিক্ত ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা তা পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে কয়েকটি পিটিআইতে ২০১৯-২০ সেশনের প্রশিক্ষণার্থীদের তিন মাসের বকেয়া ভাতা’র টাকা এখনও দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

 

প্রশিক্ষণার্থীদের পাওনা ভাতা’র টাকা পরিশোধ করার জন্য মানবিক আবেদন জানিয়েছেন তারা।

এই ভাতার টাকার উপর ভরসা করে অনেকে ল্যাপটপ কিনেছেন, অনেকে দামী মোবাইল কিনেছেন, অনেকে অনেক প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করেছেন, খরচ করেছেন অনলাইন ডাটা কেনার জন্যও।

 

প্রশিক্ষণার্থী সনজিদা খাতুন বলেন, প্রশিক্ষণ ভাতা দিবেন বলে আমাদের কর্তৃপক্ষ অনেক খরচ করিয়েছেন।

অনলাইনের ক্লাসের জন্য ভালোমানের ফোন কিনিয়েছেন।

ভাতার টাকার দাবী জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের যেন ভাইভা পরীক্ষার আগেই আমাদের ন্যায্য পাওনা দিয়ে দেয়া হয় এই দাবী জানাই।

 

এজন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি নিবেদন জানিয়ে বলেন- তাদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে ছিনিমিনি না খেলে যথাসময়ে প্রদান করে শিক্ষার মতো এক মহান পেশায় আত্মনিয়োগে মনোযোগ আনতে সহায়তা করতে।

 

ডিপিএড সংক্রান্ত আরও সংবাদ বা লেখা দেখতে ক্লিক করুন

১৬ হাজার সদস্য বিশিষ্ট ডিপিএড সংক্রান্ত আমাদের ফেসবুক গ্রুপ