Customize Consent Preferences

We use cookies to help you navigate efficiently and perform certain functions. You will find detailed information about all cookies under each consent category below.

The cookies that are categorized as "Necessary" are stored on your browser as they are essential for enabling the basic functionalities of the site. ... 

Always Active

Necessary cookies are required to enable the basic features of this site, such as providing secure log-in or adjusting your consent preferences. These cookies do not store any personally identifiable data.

No cookies to display.

Functional cookies help perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collecting feedback, and other third-party features.

No cookies to display.

Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics such as the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.

No cookies to display.

Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.

No cookies to display.

Advertisement cookies are used to provide visitors with customized advertisements based on the pages you visited previously and to analyze the effectiveness of the ad campaigns.

No cookies to display.

Take a fresh look at your lifestyle.

গ্রন্থাগার কী? গ্রন্থাগারের প্রকারভেদ, প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব লিখুন।

11,995

১) গ্রন্থাগার কী? গ্রন্থাগারের প্রকারভেদ লিখুন।

২) ব্যক্তিগত ও গণ লাইব্রেরির বর্ননা দিন।

৩) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন। এ বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরুন।

৪) গ্রন্থাগার কীভাবে শিক্ষার কাজে সহায়তা করে?

৫) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার সংগ্রহ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ের উপর লক্ষ রাখা প্রয়োজন?

৬) গ্রন্থাগারের বিভিন্ন শিক্ষন-শিখন সামগ্রীর সংযোজন রেজিস্ট্রারের ব্যবহারবিধি আলোচনা করুন।

 

১) গ্রন্থাগার কী? গ্রন্থাগারের প্রকারভেদ লিখুন।

গ্রন্থাগার:

ইংরেজি প্রতিশব্দ ’Library’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ’Liber’ থেকে। ‘Liber’ শব্দটি থেকে এসেছে যার অর্থ ‘বই রাখার স্থান’। গ্রন্থাগার বলতে এমন একটি স্থানকে বোঝায় যেখানে সকল ধরণের ব্যবহারকারীর জন্য গ্রন্থ বা জ্ঞান সমৃদ্ধ অন্যান্য সংগৃহিত সামগ্রী পদ্ধতিগতভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যে কেউ তা ব্যবহার করতে পারে। গ্রন্থাগারে মানুষের তথ্যসেবা ও জ্ঞানার্জনের জন্য জ্ঞানসমৃদ্ধ বই ও অন্যান্য সামগ্রী পরিকল্পিত ও সুষ্ঠভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হয়।

এক কথায়, গ্রন্থাগার বলতে সাধারনত যেখানে তথ্য সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়, সংরক্ষণ করা হয় এবং চাহিদা
অনুযায়ী দ্রুত পাঠককে প্রদান করা হয় তাকেই বোঝায়।

ইউনেস্কো-এর সংজ্ঞানুসারে গ্রন্থাগার হলো-
“মুদ্রিত বই, সাময়িকী অথবা অন্য যে কোন চিত্রসমৃদ্ধ বা শ্রবণ-দর্শন সামগ্রীর একটি সংগঠিত সংগ্রহ হল গ্রন্থাগার। যেখানে পাঠকের তথ্য, গবেষণা, শিক্ষা অথবা বিনোদন চাহিদা মেটানোর কাজে সহায়তা করা হয়।”

C. C, Aguolu; I. E. Aguolu এর মতে- “গ্রন্থাগার হচ্ছে মানুষের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেরে নথিপত্রের সমষ্টি যেটি বিভিন্ন ফরমেটে ও ভাষায় সংগঠন ও ব্যাখ্যা করা হয়। গ্রন্থাগার মানুষের জ্ঞান, বিনোদন ও নান্দনিক উপভোগের নানা চাহিদা পূরণ করে।”

 

লাইব্রেরির প্রকারভেদ:

ঐতিহাসিক পরিক্রমায় সমাজে চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ব্যবহারকারীর ধরণ এবং উপাদানের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে লাইব্রেরিকে সাধারণত ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

১. ব্যক্তিগত লাইব্রেরি;

২. গণ লাইব্রেরি;

৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি;

৪. বিশেষ লাইব্রেরি;>

৫. জাতীয় লাইব্রেরি।

২) ব্যক্তিগত ও গণ লাইব্রেরির বর্ণনা দিন।

ব্যক্তিগত লাইব্রেরি:

ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগে যে লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়, তাকেই ব্যক্তিগত লাইব্রেরি বলে। অতীতে ধনবান ও বিত্তশালীরা তাদের নিজ পরিবারের সদস্যদের জ্ঞানচর্চার জন্য ব্যক্তিগত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাসে দেখা যায়, ব্যক্তিগত লাইব্রেরি দিয়ে লাইব্রেরির প্রথম যাত্রা শুরু হয়। আধুনিককালেও সমাজের শিক্ষিত ও মননশীল ব্যক্তিবর্গ তাদের পরিবারের জন্য এ ধরণের লাইব্রেরি গড়ে তোলেন।

 

ব্যক্তিগত লাইব্রেরির উদ্দেশ্য:

পরিবারের সদস্যদের জ্ঞান চর্চা ও পাঠ চাহিদা পূরণ করা।
সদস্যদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলে।
পারিবারিক জ্ঞানভান্ডার ও তথ্য কেন্দ্র সংগঠন করা।
পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষা করা।

 

পাবলিক লাইব্রেরি:

কোন অঞ্চলে বা দেশের সকল স্তরের মানুষের পাঠ চাহিদা পূরণের জন্য যে লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয় তাকে পাবলিক লাইব্রেরি বা গণ গ্রন্থাগার বলা হয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে সমগ্র জাতিকে পরিকল্পিত উপায়ে লাইব্রেরি সেবার মাধ্যমে মেধা বিকাশে সাহায্য করা। সকল স্তরের জনগণ এ লাইব্রেরির ব্যবহারকারী।

পাবলিক লাইব্রেরির উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী:

জাতীয় তথ্য জ্ঞানভান্ডার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা।
সকল ধরণের পাঠক ও ব্যবহারকারির পাঠ চাহিদা পূরণ করা।
জনগণের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলে।
বই প্রদর্শনীর আয়োজন করা।
সরকার ও জনগণকে তথ্যসেবা প্রদান করা।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় বই পৌঁছে
দেওয়া।

 

৩) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন। এ বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরুন।

ভূমিকা:

শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনের একটি মূল কেন্দ্র হলো গ্রন্থাগার। এটি শিক্ষা ব্যবস্থার হৃদপিন্ড স্বরূপ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সভ্যতা ও জাতির
ইতিহাস জানা যায়। গ্রন্থাগারের গুরুত্ব বুঝাতে টুপার বলেছিলেন, ‘বই হলো আমাদের বর্তমান ও চিরদিনের পরম বন্ধু। আর এই বন্ধুর সঙ্গে সখ্য গড়তে হলে যেতে হবে লাইব্রেরিতে।’ সৈয়দ মোস্তফা আলীর বইকেনা প্রবন্ধে বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’ সুতরাং প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পিপাসা মেটাতে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। গ্রন্থাগার শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশে এবং বুদ্ধিগত পরিপক্বতা অর্জনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যার ফলে তাদের বহুমুখী চাহিদা পূরণ হয়।

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব:

ক) গুণগত শিক্ষা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গ্রন্থাগার। শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পরিপূর্ণ শিক্ষালাভ কখনই সম্ভব নয়।  পাঠ্যবই শুধু পরীক্ষা পাসের সনদ দেয়, জীবনের জন্য অপরিহার্য পরিপূর্ণ শিক্ষা দেয় না। বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে বলা হয়েছে গ্রন্থাগার বিদ্যালয়ের হৃদপিন্ড স্বরূপ।

খ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার স্থাপনের অন্যতম লক্ষ্য হলো পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শৈশবে শিক্ষার্থীদের হাতে মনোরম বই তুলে দেয়া, বিভিন্ন বইয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ, বইয়ের প্রতি মর্যাদাবোধ তৈরি করা।

গ) গ্রন্থাগার শুধু বিদ্যালয়ের নয়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের হৃদপিন্ড স্বরূপ। হৃদপিন্ড ছাড়া যেমন দেহ অসার, তেমনি গ্রন্থাগার ব্যতীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অসার। সুতরাং পরিপূর্ণ ও যুগোপযোগী শিক্ষার জন্য আমাদের দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে সুসংগঠিত গ্রন্থাগার অপরিহার্য।

ঘ) কোন কোন শিক্ষাবিদের মতে, গ্রন্থাগারকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি বিকল্প সংস্করণ বলে অভিহিত করেছেন। যুগে যুগে গ্রন্থাগারের মাধ্যমে জ্ঞানের প্রবাহ সঞ্চিত হয়ে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারের সঞ্চিত জ্ঞানের প্রবাহকে চলমান করতে ভূমিকা রাখে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। সুতরাং শিক্ষায় গ্রন্থাগার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ঙ) শিক্ষা ও গ্রন্থাগার মূলত একই গন্তব্যের অভিযাত্রী যার উদ্দেশ্য হলো- মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনের গুণগত পরিবর্তন সাধন এবং প্রগতির দিকে ধাবিত করা। শিক্ষার মূল উৎস জ্ঞান সামগ্রী এবং সেগুলোর প্রাণকেন্দ্র হলো গ্রন্থাগার।

চ) বৈশ্বিক
প্রেক্ষাপটই শিক্ষাকে পরিপূর্ণ, সার্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। অন্যথায় শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা ও প্রয়োগ ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়ে। আর এজন্যই শিক্ষাক্রমের বাইরেও অনেক কিছু জানার থাকে, শেখার থাকে, নিজেকে গড়ে তোলার অনেক সুযোগ থাকে। তা সম্ভব হয় গ্রন্থাগার ব্যবহারের মাধ্যমে।

 

উপসংহার:

শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে, আত্মবিশ্বাস অর্জনে, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনের মাত্রা বৃদ্ধি করণে, পাঠাভ্যাস সৃষ্টি করণে, গবেষণা
ও সমীক্ষা পরিচালনা করতে, নৈতিক, মানসিক, সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করণে, যোগাযোগ স্থাপনে ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অর্জনে গ্রন্থাগারের ভুমিকা অপরিসীম।

 

৪) গ্রন্থাগার কীভাবে শিক্ষার কাজে সহায়তা করে?

শিক্ষা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে মানসিক ও দৈহিক উন্নতি সাধনই শিক্ষা। শিক্ষা ব্যক্তির কল্যাণ সাধন, ব্যক্তির বিকাশ ও তাত্ত্বিক উন্নতি সাধনই শিক্ষার লক্ষ্য। একটি জাতি উন্নত নাকি অনুন্নত তার মানদন্ড হচ্ছে শিক্ষা। যুগে যুগে যে জাতি যত শিক্ষার আলো পেয়েছে সে জাতি তত উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মূলত: গ্রন্থাগার হলো তথ্যভান্ডার। সুতরাং শিক্ষার সহযোগিতায় গ্রন্থাগারের কোন বিকল্প নেই।

 

গ্রন্থাগার নিম্নলিখিতভাবে শিক্ষার কাজে সহযোগিতা করে:

শিক্ষার্থীদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে। গ্রন্থাগারে বিভিন্ন লেখকের, বিভিন্ন সময়ের, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের, বিভিন্ন বিষয়ের, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের লেখা বই থাকে। ভিন্ন ভিন্ন ধরণের এইসব বই পড়ে একজন পাঠক বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ ও দৃষ্টিভঙ্গী অর্জন করে।

গ্রন্থাগার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভাস গড়ে উঠে। তাদের নিজস্ব রুচি ও চাহিদা অনুসারে জ্ঞানার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয় ফলে স্ব-শিখনে উৎসাহিত হয়।

শিক্ষকদের যথাযথ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি বিষয়জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে পারেন যা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করে।

শিক্ষামূলক সামগ্রী, উপাদান ও উপকরণ এবং রেফারেন্স সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা গঠনে সহায়তা করে। গ্রন্থাগারে রক্ষিত, চার্ট, মডেল, সহায়িকা, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এসবের সাথে পরিচিত হয় এবং এদের ব্যবহার শিক্ষার মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে পারে।

গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত বিভিন্ন সংস্কৃতির গ্রন্থাবলী, চলচ্চিত্র, মানচিত্র, ছবি ইত্যাদি ব্যবহার ও দর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে অন্য সংস্কৃতির একটি তুলনামূলক চিত্র নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে, ফলে শিক্ষার্থীর মাঝে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠাভ্যাস গঠনে সহায়তা করে ফলে পড়াশুনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গঠন হয়।

গ্রন্থাগারে ব্যবহারে ব্যক্তির শৃঙ্খলাবোধ তৈরি হয় পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শ্রেণির স্বাভাবিক কাজকর্মে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে না।

 

৫) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার সংগ্রহ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ের উপর লক্ষ রাখা প্রয়োজন?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারে গ্রন্থ নির্বাচনের উপর বিশেষ নীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের বয়স ও চাহিদার প্রতি লক্ষ রাখা প্রয়োজন। সুতরাং তাদের উপযোগী বই, ম্যগাজিন, পত্র-পত্রিকা, ম্যাপ, চার্ট, আকর্ষণীয় ছবি ইত্যাদি দিয়ে গ্রন্থাগার গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের মূল্যবোধ সৃষ্টি, নৈতিকতা গঠন, চরিত্র গঠন, সামাজিক এবং কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে এমন সব সংগ্রহ গ্রন্থাগারের সংযোজন করতে হবে। এজন্য যে সকল নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী সংগ্রহ গড়ে তোলা।
যেমন- শিশু-কিশোর পাঠকরা কোন ধরনের বই পড়তে আগ্রহী, তাদের চাহিদা কী এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

পাঠ্য বিষয়ের উপর সংগ্রহ গড়ে তোলা : শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন শ্রেণির উপযোগী পাঠ্য বই ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।

শিশুদের চরিত্র ও নৈতিকতা গঠনে সহায়ক বই সংগ্রহ করা। যেমন- বিখ্যাত ও আদর্শবান মনীষীদের জীবনী, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন বিষয়ক গ্রন্থাবলী।

সাংস্কৃতিক রীতি-নীত ও কৃষ্টি-কালচার বিকাশমূলক গ্রন্থ নির্বাচন করা। নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে সমুন্নত রাখা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।
দেশের প্রতিটি নাগরিককে এ বিষয়ে সচেতন করতে হলে শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে।

৬) গ্রন্থাগারের বিভিন্ন শিক্ষন-শিখন সামগ্রীর সংযোজন রেজিস্ট্রারের ব্যবহারবিধি আলোচনা করুন।

গ্রন্থাগারকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে গ্রন্থাগারের নিজস্ব রেজিস্ট্রার থাকা জরুরী। বিভিন্ন শিক্ষণ-শিখন সামগ্রীর সংযোজন রেজিস্ট্রার ব্যবহারবিধি নিম্নে আলোচনা করা হলো।

সংযোজন রেজিস্টার ব্যবহার বিধি

১। সংযোজন তারিখ: এখানে প্রথমে যে তারিখে বই সংযোজন করা হয় সেই তারিখ লেখতে হয় এবং এই তারিখই আবার শিরোনাম পৃষ্ঠার অপর পাতায় যেখানে সংযোজন সংখ্যা লেখা হয় তার নিচে লিখতে হয়।

২। সংযোজন সংখ্যা: এখানে যে বইটি সংযোজন করা হবে সে বইটির জন্য একটি সংখ্যা বরাদ্দ করা হয়। অর্থাৎ একটি বইয়ের একটি সংখ্যা। পর পর যে বইটি রেজিস্টারে এন্ট্রি করা হবে সে অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে সংযোজন সংখ্যা বসবে। এটা সব সময় শিরোনাম পাতার উল্টা পৃষ্ঠায় লেখতে হয়।

৩।লেখক: এখানে বইটির যে অথোরিটি বা কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ লেখক, সম্পাদক, অনুবাদক ইত্যাদি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হয়।

৪। শিরোনাম: শিরোনাম পৃষ্ঠা দেখে তবেই পুরো শিরোনাম লিখতে হবে। কোন কোন বইয়ে বিকল্প শিরোনামও থাকতে দেখা যায়। বিকল্প শিরোনামও লিখতে হবে।

৫। প্রকাশনার স্থান: বইটি যে স্থান থেকে প্রকাশিত হয়েছে সেই স্থানের নাম এই ঘরে লিখতে হবে। সাধারণত শিরোনাম পৃষ্ঠার নিচের দিকে প্রকাশকের নামের পরের পঙক্তিতে অথবা পার্শ্বে স্থানের নাম উল্লেখ থাকে।

৬। প্রকাশক: যিনি বইটি প্রকাশ করেছেন তিনিই প্রকাশক। এখানে প্রকাশক হিসেবে প্রকাশনা সংস্থার নাম লেখা হবে। যদি কোন ব্যক্তি কোন প্রকাশনা সংস্থার সাথে জড়িত না থেকে নিজের নামে বই প্রকাশ করে থাকেন, তবে এ ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির নামেই লেখা আইনসিদ্ধ।

৭। প্রকাশনার সন: বইটি যদি প্রথম সংস্করণের হয় তবে সন লেখায় কোন অসুবিধার সৃষ্টি হয় না। যদি প্রথম সংস্করণ ছাড়া অন্য কোন সংস্করণের (অথবা মুদ্রণের) হয় তবে সর্বশেষ মুদ্রিত তারিখটি রেজিস্টারে উল্লেখ করতে হবে। আর যদি মুদ্রণের সন উল্লেখ না থাকে তবে কপিরাইট তারিখ লিখতে হবে।

৮। উৎস/সরবরাহকারী: কোথা হতে বা কোন মাধ্যমে বইটি গ্রহণ করা হয়েছে তা এখানে উল্লেখ করতে হবে।

৯। বিল নং ও তারিখ: এখানে ক্রয়কৃত বইয়ের ক্ষেত্রে যে বিলের মাধ্যমে বই ক্রয় করা হয়েছে সে বিলটির স্মারক নং এবং বিলের উল্লিখিত তারিখ লিখতে হয়। চিঠির মাধ্যমে যদি দানকৃত বই সরবরাহ করা হয় তাহলে চিঠির স্মারক নং তারিখ লেখা যেতে পারে।

১০। সংস্করণ: বইটির সংস্করণ উল্লেখ করতে হয় এই ঘরে।

১১। পৃষ্ঠা: বইটি কত পৃষ্ঠা তা এখানে উল্লেখ করতে হয়।

১২। মূল্য: বইটির মূল্য বা দাম কত তা এ ঘরে উল্লেখ করতে হয়।

১৩। ক্লু বা গোপনীয় পৃষ্ঠা: সবার অগোচরে গ্রন্থাগারিক গ্রন্থের সংযোজন সংখ্যাটি এমন এক পৃষ্ঠায় লিখে রাখবেন যেটা গ্রন্থাগার কর্মী ছাড়া অন্য কেউ জানবে না। এর জন্য নির্ধারিত কোন পৃষ্ঠা নেই। গ্রন্থাগারিকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, তবে সকল পুস্তকে একই নং পৃষ্ঠায় থাকতে হবে। এই সংযোজন সংখ্যা কোথায় কত পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে তা এখানে উল্লেখ করতে হবে। যদি কোন কারণে শিরোনাম পৃষ্ঠার সংযোজন সংখ্যা হারিয়ে বা ছিঁড়ে যায় তাহলে এর মাধ্যমে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।

১৪। ডাক সংখ্যা: বইটির শ্রেণি নম্বর এবং লেখকের নামের দুই অক্ষর এবং শিরোনামের প্রথম অক্ষর মোট তিনটি অক্ষর একসংগে মিলে ডাক সংখ্যার সৃষ্টি হয়। যা এখানে উল্লেখ করতে হয়। যে কোন বই মজুত পরীক্ষাকালে না পাওয়া গেলে তৎক্ষণাৎ ডাক সংখ্যা দেখে শেলফে খোঁজা যায় বইটি যথাস্থানে আছে কিনা। নতুবা ক্যাটালগ দেখা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

১৫। মন্তব্য: কোন বই হারিয়ে গেলে, নষ্ট হলে, বাতিল করা হলে অথবা সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হলে এই ঘরে নোট লিখে রাখা হয়। এই ঘরের ব্যবহার বিবিধ বহুমুখী।

(শিক্ষা হোক সবার জন্য উম্মুক্ত ও সহযোগিতামূলক)

Comments are closed.