‘মিতু বালা’ অতি আদরের নাম, ভালোবাসার নাম। দাম্পত্য জীবনে সুখের ফুল ফুটলে আদর করে নাম রাখে মিতু বালা কিন্তু আদর আর ভালোবাসার সে নামে মেয়েকে ডাকতে পারল না বেশিদিন স্কুল শিক্ষক মা লতিফা হেলেন। মেয়ে যখন নবম শ্রেণির ছাত্রী, মা লতিফা হেলেন তখন সাবেক স্বামীর হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। সেই হত্যাকান্ডের সাক্ষী হওয়ায় মেয়ে মিতু বালার প্রাণ সংশয়ে পড়েছে।
মিতু বালা অভিযোগ করে, অনেকটা শুষ্ক চঞ্চুতে অবলীলায় কথাগুলো ব্যক্ত করে বলেন, দিনটি ছিল ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই। শ্রাবণের আকাশজুড়ে ঘন কালো মেঘের ভয়ানক গর্জন। বৃষ্টিও নেমেছিল মুষলধারে। সেই প্রতিকুল আবহাওয়াতেই দোকানে যাওয়ার অজুহাতে বন্ধু হামজা ও আহসানের সাথে ঘর থেকে বের হন বাবা মমিনুল। ঘন্টাখানেক পর যখন ফিরে আসেন, মমিনুলের সাদা শার্টজুড়ে তখন তাজা রক্তের ছাপ। বৃষ্টিভেজা শরীরেও ঘামের চিহ্ন। মনে হচ্ছিল উম্মাদ! উদ্ভট সব আচরণ করতে করতে গরুর খাবার খাচ্ছিলেন। পুলিশের কাছে এমন স্বাক্ষ্য দেওয়ায় এখন আপন বাবা মমিনুল তাকে খুন করতে চাইছেন!
শুধু যে মিতু বালাকেই খুন করতে চাইছেন তা নয়। মামলার বাদি নিহত লতিফা হেলেনের মাকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন আসামীরা। আসামিদের অব্যহত হুমকিতে বাস্তুহারা হয়েছেন নানী এবং নাতনী। এখন একদিকে খুনের সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে যেমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রাণে বেঁচে থাকা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। এই মিতু বালাদের বাড়ি নাটোর জেলাধীন গুরুদাসপুরের নাজিরপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে।
মামলার বাদি অশ্রসিক্ত মনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন তিনি। মামলায় অভিযুক্ত মমিনুলের এক আত্মীয় পুলিশের ওসি হওয়ায় এই হত্যা মামলাটির তদন্ত প্রভাবিত করা হয়েছে। এমনকি হত্যাকান্ডের বিভিন্ন আলামত নষ্ট করার অভিযোগও উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের কারণে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে মামলাটি তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই রাতে সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় তার স্কুল শিক্ষক মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করে পাশের পুকুরে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। মামলায় অভিযুক্তরা একই গ্রামের মমিনুল, হামজা ও আহসান এখন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলা তুলতে তাদেও ভয়-ভীতিও দেখাচ্ছেন। অভিযুক্তদের ভয়ে সহায় সম্বলহীন নানী-নাতনী এখন আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। মিতু বালা এখন উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। খেয়ে না খেয়ে কাটছে তাদের দিন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিতুর বাবা-মায়ের যখন বিচ্ছেদ ঘটে তখন মিতু মাত্র আড়াই বছরের শিশু। তারপর থেকে মিতু বাবার সাথে সৎমায়ের সংসারেই ছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলেও নিহত লতিফা হেলেন আর দ্বিতীয় সংসারে জড়াননি। বৃদ্ধ মা’কে নিয়েই ছোট্ট একটা টিনের ছাপড়া ঘরে বাস করতেন।
স্থানীয়রা জানান, লতিফা হেলেন স্নাতকোত্তর শেষে ২০০৯ সালে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন। চাকরির বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারেননি সাবেক স্বামী মমিনুল ইসলাম। তিনি প্রায়ই লতিফা হেলেনকে কটূক্তি ও গালমন্দ করতেন। এমনকি হত্যার হুমকিও দিতেন। তবে হুমকি যে বাস্তবে রুপ নেবে তা কেউ ভাবেননি।
তবে এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (পিবিআই) নাছির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, তদন্তে আশানুরুপ অগ্রগতি হয়েছে। খুব দ্রুত চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে। অপরাধীরা ছাড় পাবেন না।
তথ্য সূত্র: মুক্তপ্রভাত
শিক্ষা সংক্রান্ত অন্য সংবাদ পড়তে ক্লিক করুন
অনলাইন থেকে ইনকাম করতে চাইলে নিয়মিত পড়ুন এই পাতাটি
Comments are closed.