প্রথমেই আমরা শূন্যের ধারণা নিয়ে আলোচনা করব।
নিচে যে সংখ্যারেখাটি আঁকা রয়েছে তা ভালো করে একবার দেখুন। এর মধ্যে সংখ্যা পদ্ধতির বাস্তব সংখ্যা বিদ্যমান।
এই রেখার সবচেয়ে ডানে রয়েছে তীর চিহ্ন। এই তীর চিহ্ন দিয়ে বুঝানো হয়েছে পজিটিভ ইনফিনিটি আর সবচেয়ে বামের তীর চিহ্ন দিয়ে বুঝানো রয়েছে নেগেটিভ ইনফিনিটি।
এখানে একটা বিষয় আমরা লক্ষ করতে পারি তা হলো-, ইনফিনিটি বলতে বাস্তবে কিছুই নেই। বাস্তব সংখ্যাগুলোর মধ্যে ডানদিকে সর্বোচ্চ সম্ভাব্য সংখ্যাকে আমরা ধরি পজিটিভ ইনফিনিটি, আর বাম দিকে সর্বনিম্ন সম্ভাব্য সংখ্যাকে ধরি নেগেটিভ ইনফিনিটি।
পজিটিভ ইনফিনিটি আর নেগেটিভ ইনফিনিটি প্রকাশক উক্ত সংখ্যারেখার মাঝখানে রয়েছে শূন্য। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে, পজিটিভ ইনফিনিটি আর নেগেটিভ ইনফিনিটির সমষ্টি হলো শূন্য। অর্থাৎ, সংখ্যাপদ্ধতির সকল বাস্তব সংখ্যাগুলোকে একত্রে মিলালে যা পাওয়া যায় তা হলো শূন্য। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, শূন্য আসলে শূন্য নয়, এর তাৎপর্য আরও অনেক গভীর।
আমরা প্রথমে বিজ্ঞানের দুটি বিষয় টেনে এনে শুন্যের এ বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করব তারপর ভিন্ন বিষয় দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।
এবার আসি একটু ভিন্ন বিষয়ে। আমরা সবাই বিগব্যাং থিয়োরি সম্পর্কে কমবেশি জানি। বিগব্যাং থিয়োরির সৃষ্টিতত্ত্বে বলা হয় স্রষ্টা শূন্য থেকে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
অবাক করার বিষয় সংখ্যাপদ্ধতির শূন্যের সাথে মহাবিশ্বের শূন্য মিলে যায়। সংখ্যাপদ্ধতির শূন্য যেমন শূন্য হয়েও শূন্য নয়, বরং সকল বাস্তব সংখ্যাকে ধারণ করে। ঠিক একইভাবে বাস্তব জগতের সকল কিছুর সমষ্টিও শূন্য।
এবার আসি কোয়ান্টাম ফিজিক্স বিষযে, কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে মহাবিশ্বের সবকিছুকে ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটার এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। প্রতি এক অণু ম্যাটারের জন্য রয়েছে এক অণু অ্যান্টিম্যাটার।
মডার্ন ফিজিক্সের বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে এক অণু ম্যাটারকে যদি তার করেস্পন্ডিং অ্যান্টিম্যাটার এর সংস্পর্শে আনা যায় তারা নিজেদেরকে বিলীন করে দিবে। এইভাবে মহাবিশ্বের সবকিছু শূন্যে মিলিয়ে যাবে।
তাই, আবারো প্রমাণিত হয়, শূন্য আসলে শূন্য নয়, শূন্য এর চেয়েও বেশি কিছু, হয়তো শূন্যই সকল সৃষ্টির সমষ্টি। বিষয়টি নিশ্চয়ই অবাক করার মতো তাই নয় কি?
শুন্য আসলেই শুন্য কি-না তা সহজে বুঝার জন্য দুটি উদাহরণ উল্লেখ করা হলো।
১. মনে করুন আপনার কাছে ৫ টি আপেল আছে আর আপনি সেই ৫ টি আপেলই খেয়ে ফেললেন। আপনার কাছে আর কতগুলো আপেল আছে? নিশ্চয়ই আপনি স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিবেন ০ (শুণ্য) টি।
২. এবার আসুন ভিন্ন প্রশ্নে আপনার ব্যাংক একাউন্টে ৫০,০০০/- টাকা ছিলো কিন্তু আপনি ৫০,০০০/- টাকা তুলে নিয়ে খরচ করে ফেললেন। এবার বলুনতো, আপনার কাছে আর কত টাকা রয়েছে। নিশ্চয়ই আপনি এবারও স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিবেন ০ (শুণ্য)।
উদাহরণগুলোর ব্যাখ্যায় আসি-
আপনি কি কল্পনা করতে পারছেন যে আপনার কাছে শূন্যটি আপেল আছে। এখানে আমি কিন্তু শূন্যটি আপেলের কল্পনা করতে বলেছি, শুন্য সংখ্যক আপেলের হিসাব করতে বলছি না।
ভেবে দেখুন আপনার পক্ষে এটি কল্পনা করা অসম্ভব কারণ শূন্যটি আপেলও বাস্তব এ থাকতে পারেনা। অনুরুপভাবে যদি ব্যাংকের ব্যালেন্স নিয়ে কল্পনা করেন তাহলেও দেখতে পারবেন যে, শুন্য টাকা আছে এমন কল্পনা করতে পারবেন না। হয়তো কল্পনা করতে পারবেন কিছু একটা আছে যা আপনি প্রকাশ করতে পারছেন না।
প্রকৃত পক্ষে, শুন্যকে শুধু গাণিতিকভাবেই শূন্য বলা বা চিন্তা করা সম্ভব বাস্তবে আপনি শূন্য কে কল্পনাও করতে পারবেন না।
হইতো এইজন্যেই বলা হয় শূন্য আসলে শূন্য নয়।
Comments are closed.