Take a fresh look at your lifestyle.

বার্ষিক পরীক্ষা, না অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়ন: প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে

171

 

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছেন। করোনার প্রকোপ অনেকটা কমে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ের ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণি ও মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সীমিত পরিসরে ক্লাস হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিটে বাড়ির কাজ ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন এসেছে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি সমাপনী বা বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে। এ পরীক্ষা হবে কি না তা জানতে চান অভিভাবকরা।

প্রচলিতভাবে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা হলেও চলতি বছর এ সময়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে কেন্দ্র বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ১৯ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলেও এ শিক্ষাবর্ষে তেমন ক্লাস হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ঘোষণা আসতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা আসতে পারে। শিক্ষার্থীরাও বার্ষিক পরীক্ষা না দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বা ওয়ার্কশিটে মূল্যায়ন চান।
এদিকে শিক্ষাবিদরা শ্রেণি সমাপনীতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের বিরোধিতা করছেন। শিক্ষকরাও চাচ্ছেন বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন না করে বার্ষিক পরীক্ষা নিতে। তারা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার করার পরামর্শ দিয়েছেন।

শ্রেণি সমাপনীতে অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়নে ঘোষণা আসতে পারে :

মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে না বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে- জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসেন গতকাল বুধবার বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন না বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে আমরা দ্রুত জানিয়ে দেবো।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শ্রেণি সমাপনীতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের ঘোষণা আসতে পারে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পরিস্থিতিতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে।’

এদিকে শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘শ্রেণি সমাপনীতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে কিছু অংশ অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর থেকে নেয়া হতে পারে।’

বার্ষিক পরীক্ষা দিতে চান না শিক্ষার্থীরা :

চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে গত মার্চ মাস থেকেই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে। আর এপ্রিল মাস থেকে প্রাথমিকের ওয়ার্কশিট বিতরণ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট ও ওয়ার্কশিটে বাড়ির কাজ করে স্কুলে জমা দিচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখন ১৯তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট করছে। এ পরিস্থিতিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে চাচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে রাজধানীর একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রামিম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, পরীক্ষা দিতে চাই না। আমরা অ্যাসাইনমেন্ট করছি অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে বা গতবছরের মত আমাকে ক্লাস এইটে উঠিয়ে দেওয়া হোক সেটাই আমি চাই। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কথা এটাই।

শ্রেণি সমাপনীতে অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়নে শিক্ষাবিদদের না :

এদিকে শ্রেণি সমাপনীতে অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়নের বিরোধিতা করেছেন শিক্ষাবিদরা। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির সাথে সরাসারি সম্পৃক্ত ছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের মতে অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে মূল্যায়ন কোন সমাধান হতে পারে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গতকাল বুধবার বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে, এর মূল কারণ ছিল যখন তাদের ক্লাস হচ্ছিল না তখন তাদের পাঠদানের সাথে কিছুটা সম্পৃক্ত রাখা। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষকদের কোনো প্রশিক্ষণ দিইনি। শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে বিষয়টি বুঝে নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা ভুল করলেও শিক্ষকদের নির্দেশনা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট করছে। এর মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে না। সরকার যদি অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শ্রেণি সমাপনীতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্তও নেয়, সেটি হওয়া উচিত ১০ শতাংশ নম্বরের ক্ষেত্রে। বাকি অংশ অন্য কোনো মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা আগে পাবলিক পরীক্ষায় অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চাইনি। শ্রেণি সমাপনীতে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নও আমরা চাই না। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে। পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করাই উচিত কাজ হবে। অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। এতে শিক্ষকদের কষ্ট কম হবে তা সত্য, তবে সার্বিকভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ ব্যহত হবে।’

বার্ষিক পরীক্ষা নিতে চান শিক্ষকরা :

প্রচলিতভাবে নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু চলতি বছর এ সময়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে কেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা আছে। পরীক্ষা নিতেও বেগ পেতে হবে শিক্ষকদের। যদিও শিক্ষকরাও বার্ষিক পরীক্ষা নিতে চাচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই পরীক্ষা নিতে চাই। গতবছরও শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের একটি অংশ ও করোনা শুরুর আগের ক্লাস টেস্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে দূরে আছে। পরীক্ষা নেওয়া হলে তাদের পড়ার টেবিলে ফেরানো যাবে। পরীক্ষা নিতে কষ্ট হলেও আমরা পরীক্ষা নিতে চাই।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মেজবাহুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নিতে চাই। পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের বইমুখী করা যাবে।’
অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাস বা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ :

এদিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বা বিষয় কমিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। প্রধান শিক্ষক নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের কষ্ট হলেও পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দেবো। যদি খুব অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে সিলেবাস কমানো যেতে পারে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হলেও পরীক্ষা নেয়া ঠিক হবে। আবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। ধরুন ৭ম বা ৮ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী যদি গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে বিষয়গুলোতে পাস করা সাপেক্ষে তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যেতে পারে।

এদিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষক নেতা মেজবাহুল ইসলাম প্রিন্সও। তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। পরীক্ষা নিয়েই মূল্যায়ন ঠিক হবে। শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও পড়ার টেবিলে বসবে।

শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা ও কিছুক্ষণ পর প্রত্যাহার :

আজ সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু গতকাল বুধবার বিকেলে সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়।

বুধবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন মন্ত্রী মহোদয়। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া শিক্ষার দুর্নীতি নিয়েও কথা বলতে পারেন তিনি।

তবে এর কিছুক্ষণ পরই জনসংযোগ কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, সংবাদ সম্মেলনটি অনিবার্য কারণবশতঃ স্থগিত করা হয়েছে। সূত্র: দৈনিক আমাদের বার্তা

Comments are closed.