Take a fresh look at your lifestyle.

গল্পোন্যাস ধারাবাহিক – ইংবাং (পর্ব-০১)

67

গল্পোন্যাস ধারাবাহিক – ইংবাং (পর্ব-০১)

একজন বৃদ্ধকে ওদের দিকে আসতে দেখেই মনটা বিষিয়ে উঠল।

মনের মধ্যে খিচুনী দিয়ে উঠল কারও কারও।

বলল একজন- আজকের দিনটা মনে হয় মাটি-ই হয়।

কারণ নয়াবাজার পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের যে জটিল সমস্যাটি তৈরি হয়েছে তার সমাধানের দায়িত্ব পড়েছে তাদের ঘারেই।

যার সমাধান করার জন্য  এদের এখানে বসা। কলেজ ও স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র/ছাত্রীদের বিপথগামী করার জন্য একটি চক্র কাজ করছে।

ভয়ংকর নেশার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

শিক্ষকগণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার পরে দায়িত্ব পরেছে হাই-স্কুলের কয়েকজন ছাত্র/ছাত্রীর উপর।

কিন্তু কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না। এরা একটি পড়াশুনা বিষয়ক মিশন নিয়েও ব্যস্ত।
আরেকজন ভাব নিয়ে বলল- উনি আসার আগ পর্যন্ত তোর কথাটিকে শতভাগ খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি ভাবতে আমার কোন দ্বিমত নাই।

ওরা লক্ষ্য করল, একজন বৃদ্ধ মাথা নিচু করে মাটিতে পড়ে থাকা এক টুকরা কাগজ তোলার আগে নিজের ডান হাতটি লুঙ্গিতে কয়েকবার ঘষা দিল।

কাগজ তুলে নিয়ে ঘারের গামছা দিয়ে কাগজটি মুছে কয়েকবার ফুঁ দিয়ে তাতে আবার বারকয়েক চুমু খেল।

চুমু খাওয়ার পর এদিক সেদিক তাকিয়ে রওনা দিল ওদের দিকে।

 

পুরো বিষয়টি খুবই ধৈর্য্যর সাথে যে কিশোরটি খেয়াল করছিল সে বলল- বয়স্করা বোঝা নয়।

ওরা আমাদের জন্য মঙ্গলই বয়ে আনে। আমরা তাদের সময় দেই না তাই তারা নিজেদের অসহায় ভাবে এবং সামান্য সুযোগ পেলেই বেশি কথা বলার চেষ্টা করে।

যেমনটা আমরা ছোট বেলায় করতাম। কথাগুলো বলছিল যে কিশোরটি তার নাম খালিদ মুহাম্মদ আল রাজি।

ওর কথা শেষ না হতেই একজন বলল-পন্ডিতের মতো কথা বলতে আমিও পারি।

অযথা একা একা পন্ডিত সাজার চেষ্টা করিস না। আমরা খুব ভাল করেই জানি তুই কতটা বেকুব!

 

আড্ডাবাজ কিশোরদের আড্ডা ভেঙ্গে গেল যখন বৃদ্ধটি তাদের সামনে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল, দেখতো বাবা এখানে আরবী দিয়ে কি লেখা আছে?

ওরা কয়েকজন কাগজের দিকে তাকিয়ে দেখল। এরপর একে অপরের মুখের দিকে মুখ চাওয়া চাইয়ি করল কিন্তু কেউ কিছু বলল না।

ওদের এক আড্ডাবাজ কিশোর যে কি-না জোর করে ওদের দলের সদস্য সে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, কেন চাচা আপনি পড়তে পারেন না?
বল্টুর কথায় বিব্রত হয়ে বৃদ্ধটি বলল, কি যে কও বাপুরে বাংলাই পড়তে পারি না আবার আরবি? পড়তে পারলে আবার তোমাদের জিজ্ঞাসা করতাম নাকি?

প্রথম বারের মতো মুখ খুলল আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ রাহী।

সে যেন ভাবনার সাগরে ডুব দিয়েছিল এতক্ষণ! অনেকটা ঘুম থেকে জেগে উঠার মতো আনমনা হয়ে বলল, মাফ করবেন চাচামী আমরা আসলে আরবী বুঝি না।

তবে রিডিং পড়তে পারি কয়েকজন। ওখানে লেখা আছে ‘ইকরা বিসমে রাব্বি কাল্লাজি খালাক’। বাংলা মানে বলতে পারব না।
আহমদ আব্দুল্লাহ বলল, আচ্ছা চাচামী ওখানে যে আরবী লেখা আছে তা আপনি বুঝতে পারলেন কি করে?

আহমদ আব্দুল্লাহ হলো এই দলের দলনেতা এবং স্কুলের সকল প্রোগ্রামে তাকেই দলনেতা হতে হয়। অনুষ্ঠানগুলোর উপস্থাপনা যেন তাকে ছাড়া বে-মানান।
কি কও বাপু, মুসলমান হয়ে আরবী চিনব না? এই যে আরবী দিয়ে লেখা আছে।
না চাচা, সেজন্য বলিনি। আচ্ছা আরবীর মতো বাংলা, ইংরেজীও কি চিনতে পারেন?
হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ল বৃদ্ধটি।
কিভাবে চিনেন?
কেন বাংলা দিয়ে লেখা থাকে আবার ইংরেজি দিয়ে লেখা থাকে। লেখা দেখলেই তো বুঝা যায়! পড়াশুনা কর না নাকি? তোমরা থাক- বলেই বৃদ্ধটি হন হন করে রওনা দিল, মনে হল এদের হাত থেকে বাঁচাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন!

ওদের অনেকেরই মুখে দুষ্টামীর হাসি। কিন্তু দুইজন তখনও চিন্তার সাগরে সাতার কাটছিল।

যে মানুষটি অক্ষর পড়তে পারে না সে কিভাবে লেখা দেখে ভাষা চিনে? এই প্রশ্নটিই সবার সামনে ছুড়ে দিল রাহী।

তার প্রশ্ন ছুড়ে দেয়ার মানেই ভেবে চিন্তে উত্তর দিতে হবে সকলকে।

 

শিক্ষা সংক্রান্ত সংবাদ দেখুন-

লেখকের ব্যক্তিগত লেখা দেখুন

Comments are closed.