স্বরবর্ণ এবং স্বরধ্বনি, মৌলিক স্বরধ্বনি ৭ নাকি ৮টি ? (ধারাবাহিক গল্পঃ ইং বাং (পর্ব-০৮)
স্বরবর্ণ এবং স্বরধ্বনি। মৌলিক স্বরধ্বনি ৭ নাকি ৮টি ? (ধারাবাহিক গল্পঃ ইং বাং ( পর্ব-০৮) [Exciting part-01]
এখানে যা যা আছে একনজরে...
‘আমরা প্রতিনিয়ত অসংখ্য কথা বলি। কথা বলার জন্য বিভিন্ন শব্দ (Word but not sound) উচ্চারণ (Act of oral expression / Utterance / Pronunciation ) করি।
এই সব ভাষার উচ্চারণ করা শব্দগুলোকে যদি বিশ্লেষণ করি বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে খন্ড বিখন্ড করি।
যেমন চককে চাপ দিলে ভেঙ্গে গুড়া গুড়া হয়ে যায়, মোমকে চাপ দিলে গুড়ো হয়ে যায়, ধানের চাউলকে মেশিনের মধ্যে দিয়ে ময়দা বানালে যেমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা হয়ে যায় তেমনি শব্দকে ভাঙ্গলেও টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
এসব টুকরা টুকরা অংশকে ধ্বনি (Sound / Tone) বলতে পারি যদি তা মানুষের মুখ দিয়ে বের হয়। তবে মনে রাখতে হবে মানুষের মুখ দিয়ে যে ধ্বনি বের হয় তা কিন্তু সব ভাষা গ্রহণ করে না।
মানে সব ভাষাই সব ধ্বনি ব্যবহার করে না। অনেক ধ্বনি আছে যাদের কোন ভাষা গ্রহণ করে আবার কোনটি গ্রহণ করে না।
যেমন ‘প’ ধ্বনিটি আরবী ভাষা গ্রহণ করে না। আবার ইংরেজি ভাষায় নরম T এবং শক্ত T আছে। যা কখনও ট আবার কখনও ত উচ্চারিত হয়। যা অন্য একদিন বলব। কিন্তু আমাদের এমন কোন ধ্বনি নেই।
ময়দার টুকরা দেখে যেমন বুঝা যায় না সেটা চাউল ছিল, চকের গুড়া দেখে যেমন বুঝা যায় না সেটি কোন এক কালে চক ছিল।
তেমনি ধ্বনির সাথে সাধারণত অর্থের (মূল বিষয়ের) কোন সম্পর্ক থাকে না। এই ধ্বনি তৈরি হয় বাগযন্ত্রের সাহায্যে।
বাগযন্ত্র (Larynx) মানে মানুষের কথা বলার জন্য যে সকল বাক্-প্রত্যঙ্গ (বাক্ মানে মুখের কথা- Speech) ব্যবহৃত হয়।
যেমন- নাক বা নাসিকা, মুখবিবর, কন্ঠ্য, ঠোঁট, দাঁত, জিহ্বা, তালু, মাড়ি, জিহ্বা, গলনালি, ফুসফুস ইত্যাদি।
মজার ব্যাপার হলো- ধ্বনি উৎপাদনের মূল কেন্দ্র হলো ফুসফুস। কিন্তু ফুসফুস থেকে কোন ধ্বনি উচ্চারিত হয় না।
ফুসফুস হতে যে বাতাস নির্গত হয় সেই বাতাসই ধ্বনি সৃষ্টি করে। আর ভাষার মূল উপাদানই হলো এই ধ্বনি।

চিত্র: Lungs বা ফুসফুস
আমার মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। আমার মাতৃভাষা বাংলা। এই বাংলা ভাষায় যতগুলো ধ্বনিকে ব্যবহার করি তাদের প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যারা কারও সাহায্য নেয় না। ভিক্ষা চাওয়ার কোন ইচ্ছাই পোষণ করেন না। যদিও কিছু মানুষ আছে যারা একা একাই মস্তানি করে। এক কথায় কাউকে গুণেই না। আবার অনেক মানুষ আছে যারা অপরের সাহায্যে ছাড়া চলতেই পারে না। আবার অনেকে আছে প্রয়োজন না হলে সাহায্যে নেয় না। তবে সাহায্যে না বলে সহযোগিতা বললেই ভাল হয়।
কারণ কারও কাছ থেকে কিছু নিলে সেটা ভিক্ষা বা সাহায্যে অর্থেই শুধু ব্যবহার হয় না তা সহযোগিতা অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
সাহায্য অনেক সময়ই দান অর্থে ব্যবহৃত হয় যা সহযোগিতা বললে সচরাচর এরকম অর্থ ধরা হয় না।
যা হোক অর্থগত বিভিন্নতা আমাদের ভাষার বৈচিত্রতা। মানুষের আচরণ আর ধ্বনি বা অক্ষর বা বর্ণের বিষয়টি এক নয়।
কারণ মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, মানবতা, কঠোরতা, নমনীয়তা, কৌশলতা ইত্যাদি রয়েছে কিন্তু বর্ণের ক্ষেত্রে এসব বলা বাতুলতা এবং বেশ হাস্যকর হয়।
অবশ্য ইংরেজির ক্ষেত্রে কিন্তু কঠোরতা ও নমনীয়তা আছে।
আর আমাদের আছে কথা বলার সময়। সুতরাং মানুষের মতো এদের সকল বিষয় এক করা যাবে না। যেমন আমরা অনেক সময়ই ধ্বনি আর বর্ণের উচ্চারণ কে এক করে ফেলি। মানে কোন অক্ষর কিভাবে উচ্চারণ হবে তা কিন্তু ধ্বনি আর অক্ষরতো আলাদা। যা আমরা প্রায়ই এক করে ফেলি। যেমন ধর অ (এ) একটি অক্ষর যদিও এর উচ্চারণ এ্যা।
একটু বললাম আর কি!’ বলল আল রাজি।
আবার বলা শুরু করল সে। যে সকল বর্ণ বা অক্ষর বা লেটার একা একা উচ্চারণ হতে পারে। অন্য কারও সাহায্যে দরকার হয় না। সে সকল বর্ণকে বলা হয় স্বরবর্ণ। আমাদের বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ আছে এগারোটি। এই এগারোটি বর্ণের মধ্যে দশটির চিহ্ন বা প্রতিক আছে। মানে এদের লিখে প্রকাশ করা যায়। যাদের বলি স্বরচিহ্ন। তার অর্থ হলো স্বরচিহ্ন হবে দশটি।
এদের মধ্যে সাতটিকে বলা হয় মৌলিক স্বরধ্বনি। তুমি মুসা কালিমুল্লাহ মাহিন নিশ্চয়ই অবাক হবে, কারণ তুমি কয়েকটি বইতে পড়েছো স্বরধ্বনি আটটি। তাই না?
মাথা নাড়ল, মুসা কালিমুল্লাহ মাহিন। মাথা একবার উপর দিকে আর একবার নিচের দিকে। এটি সম্মতিসূচক অঙ্গভঙ্গি।
আচ্ছা মাহিন, তুমি বলোতো সেই আটটি স্বরধ্বনি কী কী?
মাহিন বলল, অ, আ, ই, ঈ, এ, এ্যা, উ, ঊ।
খালিদ বলল, ঈ আর ঊ উচ্চারণ করতো দেখি, তবে খুব ভেবে উচ্চারণ করবে কিন্তু।
মাহিন উচ্চারণ করার চেষ্টা করল। কিন্তু নিজেই চিন্তায় পড়ে গেলে। সত্যিইতো এদের উচ্চারণেতো একটা ধাক্কা লাগছেই।
খালিদ আল রাজি হেসে উঠে বলল, ঐ দুটো আসলে মৌলিক স্বরধ্বনিই নয়।
তাহলে, স্বরধ্বনি যে ৬টি হয়ে গেল? কিছুটা বিস্ময় আর বিরক্তির স্বর প্রকাশ করে বলল শ্রাবণী সরকার। সে আলোচনা শুনলেও তার দিকে কেউ সুক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলে বুঝতে পারত মেয়েটি এইসব আলোচনায় খুব বিরক্ত বোধ করছে।
মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি হলো অ, আ, ই, এ, এ্যা, ও, এবং উ ।
আল ফারাবী চট করে বলল, কত সহজ হিসেব। তাহলে যৌগিক স্বরধ্বনি বাকি থাকলো ৪টি।
মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি আর যৌগিক স্বরধ্বনি ৪টি মোট এগারোটি। ভালো জিনিস শিখলাম।
খালিদ মুহাম্মদ আল রাজি হেসে বলল, তুমি কিছুই শিখোনি দোস্ত এখনও লাইনে আছো মাত্র।
বাংলা ভাষায় মোট যৌগিক স্বরধ্বনি আছে ২৫টি। যেমন, ঐ (অ+ই), ঔ (ও + উ)।
এগুলোকে বলে দ্বিস্বর। এদুটি যৌগিক স্বরবর্ণ। অবশ্য অনেক যায়গায় এদুটিকেই যৌগিক স্বরধ্বনি বলেছে।
যদিও এরা আসলে দ্বিস্বর বিশিষ্ট যৌগিক স্বরধ্বনি।
এছাড়া আছে ত্রিস্বর (আইআ= আ+ই+আ->আইয়া-যাইয়া), চতুস্বর (আইআই =আ+ই+আ+ই->আইয়াই), পঞ্চস্বর (আওআইআ =আ+ও+আ+ই+আ-> খাওয়াইয়া) ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় মোটামুটি ১৭টি দ্বিস্বরধ্বনি আছে।
মোট চারটি ধ্বনি যাদের একটির অস্তিত্ব আর নেই এগুলো আসলে উচ্চারণের সময় স্বরধ্বনি হিসেবে উচ্চারিতই হয় না।
যেমন ঈ, ঊ, ঋ (উচ্চারণ রি), এবং ৯ (উচ্চারণ লি) আবার দেখ, বাংলা ভাষায় বলা চলে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত স্বরধ্বনি হলো এ্যা বা অ্যা।
অথচ বাংলা ভাষার বর্ণমালাতে এর স্থানই নেই। স্বরধ্বনির সামনে কোন বাধাই কাছে ভীড়তে পারে না। বা কোন বাধাই বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না। কারও ধারও ধারে না। এদের বাধা দেবারও কেউ নাই। অর্থাৎ এ সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতর কোথায়ও বাধা পায় না।
অন্য কোন ধ্বনির সহায়তাও নেয় না। স্বরধ্বনির লিখিত চিহ্ন বা সংকেতকে বলা হয় স্বরবর্ণ। এই একই কারণে ২৫টি যৌগিক স্বরধ্বনি আর ৭টি মৌলিক স্বরধ্বনি থাকলেও স্বরবর্ণ কিন্তু ঐ ১১টিই। যাদের কোন লিখিত রূপ নেই তারা কখনও বর্ণ হতে পারে না। ’ বলে খালিদ মুহাম্মদ আল রাজি তাকালো সেজান মাহমুদ অপূর্বর দিকে।
তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে আবার বলল, এত বড় বক্তৃতা দিচ্ছি একটু পানি খেতেও দিবি না?
শুনে হেঁসে সবাই উঠলেও বিরক্তি প্রকাশ করে শ্রাবণী সরকার বলল, তোদের বকবকানি থামাবি?
আচ্ছা আমরা যে কয়জন এসেছি তোদের মাথায় কি কিছু নাই?
মুখ খুলল আহমদ আব্দুল্লাহ অবশেষে।
বলল, খালিদ তোমার উচিৎ ছিল মেহমানকে সম্মান দেখানো।
অগত্য কয়েকটা আপেল, কমলা, বা পানীয় জাতীয় কিছু। বলে সে তাকালো শ্রাবণীর দিকে।
বলল, আসলে ওরা সম্মান দেখায়নি এমন না।
বরং তোমরা জানো যে, আমরা বিকালে বসি পড়াশুনা বিষয়ে আলোচনা করার জন্যই।
শ্রাবণী সরকার একটু মন খারাপ করল কিন্তু কিছুই বলল না। তবে তার মুখের অব্যক্ত কথার মধ্যেই হাজারো কথা লুকিয়ে ছিল।
বলল কিছুটা বিরক্তির ভাব নিয়ে, এগুলোতো বইয়েই আছে। বিকালে একটু বিনোদন করতে পারিস না?
খালিদ বলল, এটাই আমাদের বিনোদন।
আগের পর্ব: ভাষা কি শুধু মানুষের আছে নাকি…… :ধারাবাহিক গল্পঃ ইং বাং (পর্ব-০৭)
(————-চলবে————)