ধারাবাহিক গল্পঃ ইং বাং (পর্ব-০৬- এ পর্বে থাকছে, সুন্দরীর বর্ণনা অসম্ভব! এরা কী না পারে?)
ক্যাম্পাসের টিফিন পিরিয়ড চলছে। দশ মিনিটের মধ্যে আহমদ আব্দুল্লাহ নাস্তা শেষ করে বসল গাছের নিচে যে চৌকি করা আছে সেখানে। চৌকির উপর বসার পর পত্রিকা নিয়ে পাতা উল্টাতে থাকল। এমন সময় তার কাছে এসে বসল তার ক্লাসেরই ফুটফুটে মেয়ে শ্রাবণী সরকার। শ্রাবণী ছোট কাল হতেই সাজসজ্জায় যেমন অনন্য তেমনি তার কালো চুলের বাহার, রক্তিম আভায় ফুটে উঠা আপেলের মতো গাল দুটিতে যেন মায়ার মূর্ছনা, কচি লাউয়ের লতিকার মতো হাত দুটি যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন মানুষের জাগরণের হাতিয়ার, তার মুক্তা ছড়ানো হাসিতে যেন চাঁদও লজ্জায় মাথা নুয়ে থাকে। বাস্তবে বলতে গেলে অনেক বিশেষণই তার কাছে হার মানে।
সদা হাস্যেজ্জল শ্রাবণীকে আজ কেমন যেন মলিন আর অস্থির লাগছে। মুখে হাসি টেনে অনেক কাছের মানুষের মতো, কাছে বসে কথা শুরু করলেও কথায় কম্পন ছিল। বিষয়টি আহমদ আব্দুল্লাহর নজরে এলেও বুঝতে না দিয়েই বলল, স্কুল শাখাকে কলেজ শাখা মনে কর না। বলে আহমদ নিজেই একটু সরে বসল। আহমদের মুখে নির্মল হাসি।
শ্রাবণী একটু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, তুমি সেই রকমই থাকলে। আপডেট হও ইয়ার। মানুষ পুরাতন ভার্সন রেখে নতুন নতুন আপগ্রেড ভার্সনে অভ্যস্ত হচ্ছে। টাচ ফোনের এন্ড্রয়েড ভার্সন রেখে বাটন ফোন নিয়েই থাকলে।
আমার কোন ফোন মানে মোবাইল-ই নেই। তাছাড়া আপগ্রেড হয় মননে তা শারীরিকভাবে বা খোলামেলা দেখানোর বিষয় নয়।
শ্রাবণী সরকার বলল, যাই হোক আমি তোমাকে যে কথাটি বলতে এসেছিলাম ভূমিকা ছাড়াই বলছি। তোমাকে কমিটি থেকে বাদ দিল আর তুমি মেনে নিলে? প্রতিবাদ করলে না? নাকি তুমি আমাদের সাথে অভিনয় করছ?
মানে কি? একটু রেগেই বলল আহমদ। যিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি আমাকে সরিয়ে দিয়েছেন। আমিও চেয়েছিলাম ওসব বাদ দিতে। ওসব করে কোন লাভ নেই। আমার সামনে ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। আমার লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ভয় পাই না, সেটা ঠিক আছে, তবে ঐসব খারাপ লোকদের সাথে আমার শত্রুতা করে কি লাভ? বাবার বদলীজনিত চাকুরী। আমি আজ আছি তো কাল নেই।
তুমি চলে যাবে। এই কথা বাদ দিয়ে সব কথা বল। আমি কিন্তু ‘চলে যাবে’ এটা মেনে নিতে পারব না।
মানতে-তো হবেই। তোমার মানার সাথে আমার চলে যাবার কী সম্পর্ক?
আমি চাই না তুমি চলে যাও। তুমি চলে গেলে হয়তো কারও যায় আসে না। কিন্তু আমার তাতে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। বলে করুণ চাহনি নিয়ে তাকালো সে আহমদের দিকে। আমি তোমাকে পছন্দ করি। ভালো………
মানে কি? শেষ করতে দিল না আহমদ। ক্লাস নাইনে পড়। মাথা কি একেবারেই গেছে নাকি? হাসতে হাসতে আহমদ বলল, দেখ আমার যখন বিয়ের বয়স হবে তখন তুমি হয়তো চার সন্তানের জননী হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, এটা জীবন গঠনের সময়। এসব কথা যদি তুমি আর কখনও বল তাহলে তোমার সাথে কথা বলা আমার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সব বাদ দিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দাও। আমি লক্ষ্য করেছি তুমি বেশিরভাগ সময় অন্য মনস্ক থাক। স্যাররা এত অপমান করেন তবুও তুমি পড়ে আসো না। তোমার মতো স্মার্ট মেয়ের এটা করা ঠিক নয়। ছাত্র জীবনে সবচেয়ে বড় স্মার্টনেস হচ্ছে নিয়মিত স্কুলে আসা আর ঠিকমত লেখা পড়া করা। আর, তোমার চোখের কোণে হালকা একটু দাগ পড়েছে অশুভ লক্ষণ!
তার মানে তুমি আমার দিকে চেয়ে থাক। আসলে কি হয়েছে আমি রাত জাগি কিন্তু পড়া হয় না। মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন এসে ভীর করে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি কিন্তু কোন সমাধান পাই না। সমাধান পাই না তুমি কেন মাদক আর নেশাখোরদের সাথে লাগতে গেলে। তবুও ভাল তুমি তাদের খোঁজ পাওনি। আর ওরা জানতে পারলেতো তোমাকে মেরে ফেলবে। ওরা অনেক শক্তিশালী গ্রুপ।
তুমি কি তাদের চেন? অবশ্য আমাকে বলে লাভ নেই। যাদের নিয়ে নতুন কমিটি হয়েছে তাদের বলতে পার।
চমকে উঠা ভাব নিয়ে সে অন্য দিকে তাকালো। আহমদের নজর এড়ালো না বিষয়টি। আহমদ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে যে শ্রাবণী সেই চক্রকে চিনে অথবা জানে আবার এমনও হতে পারে সে নিজেই তাদের সদস্য! সেই দলে বা তাদের সাথে যারা কাজ করে তারা অধিকাংশই দেখতে সুন্দর। তারা বেছে বেছে তাদেরই যুক্ত করে যাদের কথা কোন যুবক ছেলে ফেলতে না পারে। ভাবতে গিয়ে কষ্ট লাগছিল আহমদের। এত সুন্দর একটা মেয়ে এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে?
(————চলবে———-)
কোটেশনঃ তোমার মতো স্মার্ট মেয়ের এটা করা ঠিক নয়। ছাত্র জীবনে সবচেয়ে বড় স্মার্টনেস হচ্ছে নিয়মিত স্কুলে আসা আর ঠিকমত লেখা পড়া করা।