মূল্যবোধ এর (নৈতিক মূল্যবোধ এর) সংকট ও উত্তরণ
মূল্যবোধ এর (নৈতিক মূল্যবোধ এর) সংকট ও উত্তরণ
এখানে যা যা আছে একনজরে...
নৈতিক মূল্যবোধ এর অবক্ষয়/সংকট
কোন সমাজে স্বীকৃতি রীতি নীতি ও মূল্যবোধে বিরূদ্ধে সমাজের সদস্যবৃন্দ যখন কোনো কাজ করে তখন তাকে মূল্যবোধ এর অবক্ষয় বলা হয়, যাকে মূল্যবোধের সংকট হিসেবে গন্য করা হয়।
আমাদের যুব-সমাজের দিকে তাকালে এই অবক্ষয়ের এক করুণ চিত্র আমরা দেখতে পাই। তরুণ তরুণী, কিশোর-কিশোরী এই অবক্ষয়ের কারণে নিজেদেরকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারের পথে, আসক্ত হচ্ছে মাদকে, ছিনতাই, অপহরণ, গুম, খুন, হানাহানি, আর সন্ত্রাসে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে যাচ্ছে।
উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে গলা টিপে হত্যা করে মূল্যবোধ আর নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে সব বয়সী মানুষ আজ চলেছে ধ্বংসের পথে। যে ছেলেটির হওয়ার কথা শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা প্রশাসক সে আজ হয়ে যাচ্ছে চোরাচালানকারী, মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সন্ত্রাসী।
যারা দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সে আজ অন্যায় করে ব্যাহত করছে সমাজের/দেশের অগ্রযাত্রাকে।
এসব কিছুর জন্য আসলে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ই দায়ী।
নৈতিকতা বা মূল্যবোধের অবক্ষয় বর্তমানে আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
মানুষ সামাজিক জীব। ব্যক্তির যেমন চাহিদা আছে, তেমনি সমাজেরও কাঙ্খিত কিছু চাহিদা আছে।
প্রত্যেক সমাজে তার সদস্যদের আচরণ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি/মূল্যবোধ থাকে,তাই মূল্যবোধের সংকট তৈরি হলে সমাজ হয়ে উঠে উচ্ছৃঙ্খল, বিভ্রান্তিকর ও অনিশ্চিত।
মূল্যবোধ এর সংকট/অবক্ষয়ের কারণ
পৃথিবীতে কেউই পাপী কিংবা অপরাধী হয়ে জন্মায় না। মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা,পরিবেশ বা সমাজ ব্যবস্থাই তার আচরণকে প্রভাবিত করে, তাকে ভালো কিংবা খারাপ করে গড়ে তোলে। তাই বলা যায় মূল্যবোধ সংকটের নানাবিধ কারণ বিদ্যমান। যেমন-
পারিপার্শ্বিক বা সামাজিক কারণ: একসাথে চলতে গেলে একজন মানুষ খুব সহজেই আর একজনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। আর তাই অসৎসঙ্গে পড়ে কেউ কেউ তার নীতি নৈতিকতাকে, মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তরুণ-তরুণী বা কিশোর-কিশোরীরা অন্য বন্ধুর প্ররোচনায় মাদকে আসক্ত হয়, কেউ কেউ আবার ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কলহপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। পরিবারের সদস্যদের নেতিবাচক মনোভাব, নীতিহীনতা, মূল্যবোধের প্রতি অশ্রদ্ধা মানবসত্তার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে পরিবারের কাছ থেকে ব্যক্তি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা পায় না। আর যেটুকু সহজাত থাকে তাও হারিয়ে ফেলে।
অনেক সময় মানুষের উচ্চাকাঙ্খা, উচ্চাভিলাস তার নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়। অধিক সুখ আর বিলাসী জীবনের আশায় মানুষ যখন বিপথগামী হয় তখন সে মূল্যবোধকে অবলীলায় ভুলে যায়। এছাড়া নিরক্ষরতা, শিক্ষা সংকট এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষার ও চর্চার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকার কারণেও মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়।
অর্থনৈতিক কারণ: কথায় বলে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়’। সত্যিকার অর্থে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত একজন মানুষ নীতি ও মূল্যবোধে দৃঢ় থাকতে পারে না। কারণ দারিদ্র্য কখনো কখনো মানুষকে বিমূঢ় করে দেয়। নিজের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে, দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে মানুষ তাই অনেক সময় বেছে নেয় অসৎ পথকে। সে ভুলে যায় তার নীতি কথা ও মূল্যবোধকে।
শিক্ষার অভাব: শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। মেরুদ-হীন প্রাণি যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। শিক্ষাই শক্তি, যার মাধ্যমে মানুষ সবকিছু জানতে পারে, বুঝতে পারে। প্রকৃতার্থে জ্ঞান অর্জনের দ্বারাই মানুষ সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। পক্ষান্তরে যারা লিখতে, পড়তে জানে না তারা অন্যের ওপর নির্ভশীল হয় এবং সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে পারে না, ফলে অপরাধ জগতের সাথে মিশে যায় এবং তাদের মাধ্যমে সমাজে মূল্যবোধ সংকট সৃষ্টি হয়।
বেকারত্বের প্রভাব: বেকারত্বের কারণে আমাদের সমাজে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক চাহিদাগুলো এখনো অপূর্ণাঙ্গ রয়েছে, ফলে গ্রাম ও শহরে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ যখন স্বাভাবিকভাবে উপার্জন করতে পারে না তখন অপরাধের পথ বেছে নেয়। ফলে সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা ইত্যাদির মত অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাদকের প্রভাব: বর্তমানে আমাদের সমাজের সর্বাপেক্ষা সমস্যাবলির মধ্যে মাদক অন্যতম। সংবাদপত্রের জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, নেশাগ্রস্থ ও অবৈধ চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত অধিকাংশই যুবসমাজের সদস্য। যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ আর কী হতে পারে? ধনী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা অভিভাবকের কাছ থেকে পড়াশুনার খরচ বাবদ টাকা নিয়ে তা ব্যয় করছে নেশার দ্রব্য কিনতে। টাকা না পাওয়ার কারণে কন্যার হাতে বাবা-মায়ের হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। সমাজে মাদকতার এ রকম ভয়াবহ পরিণতি নৈতিকতা বা মূল্যবোধ কে সত্যিই আজ হুমকির সম্মুখীন করেছে।

চিত্র: মাদকের বৈচিত্র ব্যবহার
অশ্লীল বা পর্ণছবির সহজলভ্যতা: বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় টিভি চ্যানেল, স্যাটেলাইট, টেলিফোন, মোবাইল প্রভৃতি সহ ইন্টারনেটের যেমন ভাল দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে খারাপ দিকও।বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অশ্লীল
বা পর্ণছবির সহজলভ্যতার কারণে বর্তমানেবর্তমানেঅপরিণত বসসী তরুণ তরুণীরা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। সেই সাথে বেড়ে চলেছেইভটিজিং, যৌন- হয়রানি, ধর্ষণের মত অপরাধ যা সামাজিক মুল্যবোধের অবক্ষয়কে প্রকাশ করে।
দুর্নীতির প্রভাব – শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি: শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের মত অনৈতিক ও ঘৃণ্য কাজ যে সমাজে সংগঠিত হয় সে সমাজকে কি সভ্য সমাজ বলা যায়? শিক্ষকের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, শিক্ষায় নকল প্রবনতা, প্রক্সি দেওয়াসহ অসংখ্য দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে শিক্ষার মুল লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মূল্যবোধ সংকট আরও ঘণীভুত হচ্ছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুর্নীতি: চিকিৎসা ক্ষেত্রের ন্যায় সামাজিক সেবা খাতে দুর্নীতির হিংস্র থাবা আমাদের সমাজকে যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলছে, মেডিকেলের ছাত্ররা যখন পড়াশুনা করতে যায় তখন তাদের শ্লোগান হিসাবে বলা হয়, ‘এসো শিক্ষার জন্য, বেরিয়ে যাও সেবার জন্য’। অথচ দেখা যাচ্ছে একজন ছাত্র পড়াশুনা শেষ করে এই নীতিবাক্যকে ভুলে যাচ্ছে এবং সে অর্থের মোহে অনৈতিক/দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে।
এভাবে পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাব আমাদের সমাজের সেবাখাত সহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির কালো থাবা আমাদেরকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে যা মূল্যবোধ সংকট সৃষ্টি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতি
মূল্যবোধ সংকটের প্রভাব
নৈতিকতা মূল্যবোধের অবক্ষয়ে মানুষের মধ্যে আসছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। সমাজ ও পরিবারে বেজে উঠছে ভাঙনের সুর। নষ্ট হচ্ছে পবিত্র সম্পর্কগুলো। চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান হয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি। ফলে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধপ্রবণতা। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবসহ সম্পর্কের এমন নির্ভেজাল জায়গাগুলোতে ফাটল ধরেছে। ঢুকে পড়েছে অবিশ্বাস।
সাম্প্রতিক সময়ের শিশুহত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, সন্ত্রাস, নকলপ্রবণতা, খাদ্যে ভেজাল, নকল ওষুধ ইত্যাদি সমাজের করুণ রূপ। সমাজের মানুষ কেউ কারো বন্ধু থাকছে না। প্রত্যেকে পরোক্ষভাবে একে-অপরের ক্ষতিসাধনে মগ্ন। সামান্য মুঠোফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বয়োবৃদ্ধ থেকে শিশু-কিশোরকে পিটিয়ে বা গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। কোমলমতি শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা শারীরিক-মানসিক এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

শিশুহত্যা, ধর্ষণ
যদিও শিশু, কিশোর বা কিশোরীদের নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। বর্তমানে হত্যাকা- সমাজকে চরমভাবে ভাবিয়ে তুলছে। যা সামাজিক অবক্ষয়ের খ-চিত্র। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ক্রান্তিলগ্নে সমাজরক্ষা নিয়ে চিন্তিত সমাজের সব বিবেকবান মানুষ। যথার্থ জীবন আর্দশের অভাবে পরিবারগুলো এখন ভোগবিলাস ও পরশ্রীকাতর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা ও ধনবাদী ধ্যান-ধারণায় গড়ে উঠেছে ভারসাম্যহীন সমাজ। আমাদের আজকের সমাজ পরিচালিত হচ্ছে নৈতিকতার ভিত্তিতে নয়, বরং স্বাথ্রের মোহে।

শিশু, কিশোর বা কিশোরীদের নির্যাতনের
তদুপরি বর্তমান বিশ্বে মানুষের সঙ্গে মানুষের অসম প্রতিযোগিতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মানুষে মানুষে দূরত্ব। ব্যক্তিজীবনে কমে আসছে ধৈর্যশীলতা। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কিংবা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভও বিরাজ করছে মাত্রাতিরিক্ত। দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবার ক্রমেই ধাবিত হচ্ছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একজন মানুষের চরম নৈতিক মূল্যবোধের ধাক্কায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অন্য মানুষ। তৈরি হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। এক কথায় দিন দিন মানুষের মানসিক বিকৃতি বাড়ছে। হতাশা বা অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে বেঁচে থাকার প্রতিটি ধাপে। মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষ পাশবিক হয়ে উঠছে।
সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে অবলীলায় হত্যা করছে। সমাজে সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে বাবা-মেয়ে, মা-মেয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। নিজ স্বার্থ ও অর্থ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা,নিঃসঙ্গতা, অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে।
অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে মানুষ নিজের সন্তানকে পর্যন্ত হত্যা করছে। আর যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যা তো নিত্যদিনের ব্যাপার। পারিবারিক বন্ধন, স্নেহ- ভালোবাসা, মায়ামমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। কেবল তাই নয়, সমাজের উচ্চবিত্তের তরুণরা বিপথগামী হয়ে পড়েছে। তারা জড়িয়ে পড়ছে খুন, ধর্ষণ ও মাদকাসক্তিসহ নানা অপরাধে। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খানের মতে, যে সন্তানরা তাদের মা-বাবাকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে কিংবা যে অভিভাবকরা তাদের সন্তান হত্যা করছে, তাদের অনেকেই আর্থিক কারণে এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। অনৈতিক লোভ, প্রতিযোগিতা, পরচর্চা ও পরকীয়ার কারণেই পারিবারিক এই হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো ঘটছে।
মূলকথা, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ দিন দিন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠছে। নিজের একক কর্তৃত্ব ও জিদকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষ প্রিয়জনকে হত্যার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে। মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া বিষন্নতা ও মাদকাসক্তি সমাজের এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডগুলোর জন্ম দিচ্ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এক ধরনের মানসিক বিকৃতির লক্ষণ। সচেতনতা ছাড়া সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়। এই অস্থির, নিয়ন্ত্রণহীন বিরূপ সমাজব্যবস্থার দায় কারো একার নয়, বরং সব নাগরিকের।
শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প ও প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বসভ্যতা। আধুনিক সভ্যতার দৌড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রচলিত নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। ক্রমশই বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয় বা সংকট। নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা এবং ছিন্ন হচ্ছে সামাজিক সম্পর্ক। অস্থির হয়ে উঠছে সমগ্র সমাজব্যবস্থা। এই প্রেক্ষাপটে পরিবার-সমাজ, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিন্তা-চেতনায় বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাস প্রায় শূন্যের কোঠায়। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের উপাদান তথা সততা, কর্তব্য, ধৈর্য, শিষ্টাচার, উদারতা, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, দেশপ্রেম, পারস্পরিক মমত্ববোধ, সহমর্মিতা, আত্মত্যাগ ইত্যাদি মানবীয় গুণের চর্চা বর্তমান সমাজে প্রায় অনুপস্থিত। সমাজে চলছে বিপরীত স্রোতের জোয়ার, সামাজিকশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে কিংবা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অপরাধীরা দিন দিন যেন আরো সাহসী হয়ে উঠছে।
সংকট থেকে উত্তরণের উপায়
অবক্ষয় রোধে নৈতিক শিক্ষার প্রসার
এই চলমান অবক্ষয়কে থামাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা। যে ব্যক্তির মধ্যে নৈতিক শিক্ষা থাকে, মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে সে ব্যক্তি সকল অপরাধ থেকে বিরত থাকে। বরং সে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যে ব্যক্তির নৈতিক শিক্ষা নেই, যে মূল্যবোধের মর্ম বোঝে না তার কাছে এগুলো শুধুই ‘পুঁথিগত শব্দ’ সে এগুলোর মূল্য দিতে জানে না। তাই অবক্ষয়কে রুখতে নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য। শুধুমাত্র অবক্ষয় রোধের জন্যই নয় বরং জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্যও নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি তার নীতিতে অটল থাকে, মূল্যবোধের ওপর আস্থা রাখে। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন একজন মানুষকে সঠিক ও শুদ্ধ মানুষ রূপে গড়ে তোলে তেমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ থাকার কারণেই মানুষ তার নিজের, পরিবারের, সমাজের ও রাষ্ট্রের প্রতি সকল দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ অন্যকেও উৎসাহিত করে নীতিবান হতে, মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখাতে। যার মধ্যে নৈতিক শিক্ষা থাকে পারিপার্শ্বিকতার দোহাই দিয়ে সে অন্যায়-অপরাধ করে না। বরং সে নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করে।

শিশুর ধর্মীয় শিক্ষা
মূল্যবোধের চর্চা
বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ গুলো চর্চার মাধ্যমে চলমান সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে । যেমন-
নৈতিক মূল্যবোধ চর্চা : নৈতিক মূল্যবোধ যেহেতু মানুষের অন্তস্থ এক শক্তি যা-
(ক) ভাল-মন্দ
(খ) ন্যায়-অন্যায়
(গ) উচিত-অনুচিত এর মধ্যে পার্থক্যবোধ সৃষ্টি করে
তাই নৈতিক মূল্যবোধগুলো আমারা সঠিকভাবে চর্চা করার মাধ্যমে সংকটের উত্তরণ ঘটাতে পারি ।
পারিবারিক মূল্যবোধ চর্চা: এ ক্ষেত্রে করণীয় কার্যাবলি হল –
১. আপনার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে।
২. আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কমন মূল্যবোধগুলো বিবেচনা করুন।পরিবারের সকল সদস্যের সাথে বসুন,কথা বলতে হবে।
৩. প্রধান প্রধান পারিবারিক মূল্যবোধগুলোর অনুশীলনকরা প্রয়োজন ।
৪. পারিবারিক ভাবে সংযুক্ত থাকতে হবে ।
৫. আপনার নিজস্ব মূল্যবোধ অনুশীলন করতে হবে।
৬. আপনার পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য মূল্যবোধগুলো ব্যবহার করতে হবে।
৭. আধুনিক ও সনাতন মূল্যবোধের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে সঠিক ও অসঠিক কী তা আলোচনা করতে হবে।
৮. মূল্যবোধ সম্পর্কে কেবলমাত্র মুখে বলা নয় বরং সেগুলোর অনুশীলন করতে হবে।
৯. অন্যদের সাথে পরিবারের ভেতরে ও বাইরে সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে।
১০. পারিবারিক প্রতিটি কাজে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিযোজিত করতে হবে।
১১. পোষা প্রাণির প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে।
১২. অন্যের সহায়-সম্পত্তির প্রতি সযতœ ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে।
১৩. সকল গুরুত্বপূর্ণ মতামত ধৈর্য সহকারে শুনতে হবে।
মানুষের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো তার পরিবার। তাই মূল্যবোধের শিক্ষাও শুরু হয় পরিবারে। পরিবারের উচিত তার শিশুকে পারিবারিক এবং সামাজিক মূল্যবোধগুলো জানতে ও চর্চা করতে সহায়তা করা।
সামাজিক মূল্যবোধ চর্চা: সামাজিক জীবনযাপন ও কর্মকা- পরিচালনার জন্য সমাজের সদস্যদের নানা ধরনের মূল্যবোধ লালন ও অনুশীলন করতে গুর”ত্ব দেওয়া হয়। সমাজের সদস্যরা তাদের জীবনের পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে এ ধরনের মূল্যবোধের অভিজ্ঞতা লাভ করে। সামাজিক মূল্যবোধের সাধারণ চর্চাগুলো হচ্ছে:
১. অন্যকে আঘাত না করা এবং অসহায়ের পাশে থাকা।
২. কথা-বার্তায় সংযত, শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং সৌজন্যবোধ বজায় রাখা।
৩. স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে সমাজের জন্য সময় দেওয়া ও দক্ষতা কাজে লাগানো।
৪. অপরের সাথে সৎ থাকা।
৫. দলগত কাজে অংশগ্রহণ করা।
৬. সমতা ও সমাজের কল্যাণ সাধন করা।
এক সমাজের সদস্যদের থেকে আরেক সমাজের সদস্যদের কোন বিশেষ ধরনের মূল্যবোধের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে সততা, শান্তি, ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা, সমতা, সেবা, শৃঙ্খলা, সহাবস্থান, সম্মান বা শ্রদ্ধা, সহনশীলতা, স্নেহ-ভালবাসা, সাহায্য-সহযোগিতা, ন্যায়পরায়ণতা, দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রগতি, নম্রতা, ভদ্রতা, স্বাাধীনতা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং এরকম আরও অনেক মূল্যবোধ প্রায় সকল সমাজে অভিন্নভাবে গুরুত্ব পায়। মৌলিক অধিকারসমুহ, দেশপ্রেম, মানুষের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, যৌক্তিকতা, স্বার্থত্যাগ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, সমতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি মূল্যবোধ আমাদের আচরণকে নানাভাবে পরিচালিত করে। তাই সংকট হতে উত্তরণের জন্য আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ গুলো সঠিক ভাবে চর্চা করা উচিত।
সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ চর্চা: বিভিন্ন দল, সমাজ বা সংস্কৃতির মুল্যবোধ আছে যেগুলো বেশিরভাগ তাদের সদস্যরা পারস্পরিক বিনিময় করে। যেমন. আমাদের সংস্কৃতিতে সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা করা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করা, বয়জ্যেষ্ঠদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করা, আতিথেয়তা, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করা, অন্যান্য সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা, নানা সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন করা, যে কোন বিপর্যয়ে অন্যের পাশে দাঁড়ানো, খেলাধুলাসহ যে কোন বিজয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে আনন্দ-উল-াস করা ইত্যাদি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এর মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হল – পরিবার প্রথা, সামাজিক নিয়ম-কানুন, খাদ্যাভ্যাস, পোষাক-পরিচ্ছদ ,ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসাংস্কৃতিক উৎসব ইত্যাদি । এ সকল বিষয়ে উপ-সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকে, এসব উপ-সংস্কৃতি ও তাদের পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যাবলির প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করার মাধ্যমে সংকট উত্তরণে ভূমিকা পালন করা সম্ভব।
পেশাগত মূল্যবোধ চর্চা: পেশাগত মূল্যবোধ সাধারণত ব্যক্তির ব্যক্তিগত মূল্যবোধের চর্চার প্রতিফলন কেগুরুত্ব দিয়ে থাকে,এমন কিছু মুখ্য মূল্যবোধ আছে যেগুলো সচরাচর সকল পেশায় ধারণ ও চর্চা করা বাঞ্ছনীয়। যেমন-
১. সততা
২. দায়বদ্ধতা
৩. চারিত্রিক দৃঢ়তা
৪. সেবা দেওয়া
৫. যত্ন নেওয়া
৬. পরহিতব্রত বা স্বার্থহীনতা
৭. সহৃদয়ত
৮. উপযোগিতা
৯. বিশ্বাস
১০. স্বাধীনতা
১১. নিরাপত্তা জ্ঞান
১২. মনবীয় মর্যাদা
১৩. সামাজিক ন্যায়বিচার
১৪. অব্যাহত উন্নয়ন
১৫. উৎকর্ষ
১৬. সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য
– সর্বদা মনে রাখা যে, আপনার কাজ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখছে।
– সহকর্মী, শিক্ষার্থী, ক্রেতা ও কর্তৃপক্ষীয় লোকজনের সাথে প্রত্যাশিত আচরণ করা।
ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চাঃ মূল্যবোধ, বিশেষ করে নৈতিকমূল্যবোধের অন্যতম প্রধান উৎস হলো ধর্ম। মানুষ পািরবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন যাপনে, কাজ-কর্ম করার ক্ষেত্রে, খাদ্য গ্রহণে, পোশাক-পরিচ্ছেদে, কোথায় কীভাবে আচরণ করবে অর্থাৎ আমাদের কোথায় কেমন আচরণ করতে হবে ধর্ম তার দিক-নির্দেশনা ও শিক্ষা শিক্ষা দেয়। প্রতিটি ধর্মে যা কিছু সুন্দর, কল্যাণকর, উপযোগী ও কাম্য তা সেই ধর্ম থেকে জানা যায়। বিপরীত মূল্যবোধ বা নেতিবাচক মূল্যবোধকে কখনো কোন মানব ধর্মই সমর্থন করে না। ধর্ম আমাদের নিয়মের মধ্যে চলতে শিক্ষা দেয়। ধর্ম সমাজে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে অবদান রাখে। ধর্ম সমাজ ও রাষ্ট্রে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো নিজ নিজ ধর্মের আদর্শ ও মূল্যবোধ অর্জন করা এবং সঠিকভাবে চর্চা করা। ধর্মীয় যে সকল মূল্যবোধআমাদেরচর্চা করা প্রয়োজন তা হল-
১. স্রষ্টার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যপ্রদর্শন।
২. নিয়মিত প্রার্থনা করা।
৩. সকল সৃষ্টির প্রতি সহানুভুতিশীল থাকা।
৪. সৎ থাকা।
৫. অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা।
৬. নিজে যেমন আচরণ প্রত্যাশা করি অন্যদের সাথে অনুরূপ আচরণ করা।
৭. আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অব্যাহতভাবে শিখন ও বিকাশ সাধন করা।
৮. অন্যের সাথে ভদ্রোচিত সম্পর্ক বজায় রাখা।
পরিশিষ্ট:
সর্বপরি সমাজ বা রাষ্ট্রে নানা বিশ্বাসের লোক বাস করে, এদের একজনের চরিত্র অন্যজনের সঙ্গে মেলে না। তাই চলমান মূল্যবোধ সংকটাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাই সর্বাগ্রে পরিবারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবারের উচিত শিশুদেরকে নৈতিক ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া। অন্যের সংস্কৃতি অন্ধভাবে অনুকরণের যে চেষ্টা তা সচেতনভাবে পরিহার করতে হবে। গণমাধ্যম থেকে আমরা অনেক কিছু শিখে থাকি। তাই গণমাধ্যমগুলোতে এমন বিষয় প্রচার করা উচিত যেগুলো থেকে মানুষ নৈতিক শিক্ষা পাবে এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে জানবে। মানুষের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার বিস্তার ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজে থেকে সচেতন হতে হবে। একটি জাতির নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সেই জাতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক গতি- প্রকৃতি ও অবস্থানকে তুলে ধরে। যে জাতি যতো বেশি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং নিজস্ব মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সে জাতি ততো বেশি সুসংহত। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মানুষকে ন্যায়ের পথে, কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। অন্যায়-অবিচার করা থেকে মানুষকে দূরে রাখে। তাই বলা যায় সংকট উত্তরণে একযোগে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে যথার্থ ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।