ধারাবাহিক গল্পঃ ইং বাং (পর্ব-০৫- এ পর্বে থাকছে, কোন ধরণের শিক্ষার্থীরা বিপথে যায় বেশি?)
আমার কোন আপত্তি নেই স্যার। কিন্তু আমি চাই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করুন। কাজ আমিই করব। যেহেতু মানুষজন জেনে গেছে আমার উপর দায়িত্ব ছিল তাই সবার নজর আমার দিক থেকে সড়ানোর এটা একটা কৌশলমাত্র। আমি আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ইয়াবা ও অন্যান্য নেশার মূলোৎপাটন করবই ইনশাআল্লাহ।
মুখ খুললেন প্রিন্সিপাল সাহেব, আমি জানি। তোমার উপর সে ভর———
কথা শেষ করতে পারলেন না প্রিন্সিপাল সাহেব। হন্তদন্ত হয়ে কমিটির নবীন সদস্য সবুজ আলী রুমে এসেই বললেন, সরি স্যার আমার কলমটা রেখে গিয়েছিলাম। সরি আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য।
বলেই কলমটি হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলেন। দড়জা দিয়ে বের হবার সময় তার মুখে বিজয়ের হাসি। সোজা সে কলমের আদলে তৈরি পেন ক্যামেরা নিয়ে একটি বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করল। তাকে দেখে সবাই হেঁসে উঠল। একজন বলল- গোপন মিটিং করার সাধ মিটাচ্ছি। আমাদের চোখকে ফাঁকি দেয়া অত সহজ! ক্যামেরা তাড়াতাড়ি চালু কর দেরি সহ্য হচ্ছে না।
ধৈর্য্য ধরুন, ধৈর্য্য ধরুন। আমাদের কাজকে কেউ আটকাতে পারবে না। তাছাড়া আমাদের উপর দায়িত্ব পড়ছে তদন্তের। শেয়ালের কাছে মুরগীর দায়িত্ব, হাহাহা ……
সবার চোখ ক্যামেরার দিকে। ল্যাপটপে কপি করে সবাই দেখতে শুরু করল। আগ্রহসহ দেখতে শুরু করলেও সবার মন খারাপ হয়ে গেল। কারণ প্রিন্সিপাল স্যারের বলা কথা- “আমারতো মনে হচ্ছে আজকে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে এক বা একাধিকজন… তারপর স্যার আমি একটা ছোট্ট কথা বলতে চাই ……” বলার পর থেমে গেল। উনি আমাদের সন্দেহ করছেন কি-না বুঝা যাচ্ছে না। তার কথা দ্বারা তিনি সন্দেহ করছেন নাকি আমাদের দায়িত্ব দিতে চাইছেন বুঝা মুশকিল হয়ে গেল।
সব নষ্টের মূল ঐ পুচকে ছেলেটা। ঐতো স্যারকে থামায়ে দিলেন। কত বড় অভদ্র ভাবেন স্যারের কথা কেড়ে নিল।
বিষয়টাকে আমি অত সহজ ভাবছিনা। গুরুত্বপূর্ণ কথা শুরু করার সময় থেকে আমাদের ক্যামেরা বন্ধ। এটাতো কাকতালীয় হতে পারে না। নিশ্চয়ই ক্যামেরা কেউ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি আহমদকে সন্দেহ করতে পারছি না কারণ সে ছোট হিসাবে এটা পেন ক্যামেরা তা ভাব াঅকল্পনীয় আবার বাদও দিতে পারছি না। কারণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেছি সে আমাদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়েছে। ক্যামেরা যদি তাদের কাছে ধরা পড়ে যায় তাহলে তারা তাদের কৌশল বদলাতে পারে।
ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শাবনুরের মা অভিভাবক শাকিলা বেগম বললেন, তারা কাকে কত দূর সন্দেহ করেছে তা বলা কঠিন এরপর থেকে আমাদের বিদ্যালয়ে যাওয়া যাবে না। গেলেও কারও সাথে কথা বলা ঠিক হবে না। আমাদের সাথে যেসব মেয়েরা কাজ করছে তাদেরকে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসতে হবে। কাজের গতি আরও বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে দাম কমানো হবে। আর বেছে বেছে ভাল ভাল ফ্যামিলির মেয়েদের টার্গেট কর। সেই সাথে খোঁজ কর সেই সব মেয়েদের যাদের বাবা মা মেয়েদের প্রতি দূর্বল। মানে বাবা-মা কথা না শুনতে চাইলে মেয়েটি আত্মহত্যা করতে চাইবে আর বাবা-মা সাথে সাথে মেনে নেবে এমন অবস্থা আর-কি!
ঠিকই বলেছেন, এখনকার ছেলে মেয়েদের কাছে বাবা-মা অনেকটাই জিম্মি। ছেলে-মেয়ে মরতে চাইলে আর কি-সের কি যা চাইবে তাই। আর এই সুযোগেই তো আমরা ! হেঁসে বললেন প্রতিষ্ঠানের পিয়ন রুবেল।
‘আসলে ছেলে-মেয়েদের দোষ দিয়ে লাভ নাই। আমরাইতো তাদের ছোট থেকে নৈতিকতা শিক্ষা দেই না। আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে ব্যক্তিগত বলে চালিয়ে দিয়ে নিজেও কর্তব্যর হাত থেকে বাঁচি আবার অন্যকেও চেঁচামেচির হাত থেকে বাঁচাই। পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষা মানে ধর্মীয় শিক্ষায় বড় করলে তারা যেমন বাবা-মাকে অমান্য করতে পারত না। তেমনি তাদের জিম্মিও করতে পারত না।’ বলে একটা বড় নিশ্বাস ফেললেন মিটিং এ বসা আব্দুল গফুর নামের এক লোক।
নীতি কথা রাখো গফুর। তোমার এই এক দোষ। তুমি কাজ করবে আমাদের লাইনে আর চিন্তা চেতনা অন্য লাইনের। তোমার এ লাইনে আসা উচিৎ হয়নি। যা হোক, আমি যা বলছি, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে তারা কত দূর কি জেনেছে। বিশেষকরে পেন ক্যামেরা নিয়ে কাজ করাটা বোধ হয় বুমেরাং হয়ে গেছে। যদি তারা বুঝে সেটি পেন ক্যামেরা তাহলে তারা অবশ্যই এমন পদক্ষেপ নেবে যা আমরা সহজে ধরতে পারব না।
চিন্তা করনা মা, আমি আমার এমন এক বান্ধবীকে তাদের পিছনে লাগিয়েছি যে, সব কথা হরহর করে আমার কাছে চলে আসবে। বিশেষ করে আহমদ আব্দুল্লাহর পিছনে লাগিয়েছি তাকে। ওর এমন ক্ষমতা যে, কোন ছেলেকে পটাতে সর্বোচ্চ তিন দিন লাগে।
—-চলবে—–
আগের পর্ব এখানে দেখুন