ধারাবাহিক গল্পঃ ইং বাং (পর্ব-০৪- এ পর্বে থাকছে, প্রতিষ্ঠানের দূর্যোগে শিক্ষার্থীর ভূমিকা)
নাস্তা চলে আসার পর প্রিন্সিপাল স্যার আহমদের দিকে তাকিয়ে বললেন- তোমার কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কারণ আমি বুঝছিনা। তবে ফোন আসার পর তোমার বাবা তোমাকে কী বলেছিলেন বলবে একটু?
অবশ্যই স্যার, আব্বু বললেন, ফোনে যা কথা হয়েছে তা তোমাকে বললাম। তুমি কি ভয় পেলে?
আমি বললাম- আমি কোনভাবেই ভয় পাইনি। তারপর আব্বু আর কিছু বলেননি।
হ্যাঁ তোমার বাবা আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে, আহমদকে এ দায়িত্ব কে দিয়েছেন? আমি উত্তরে বলেছিলাম, আমি, সভাপতি এবং মাধ্যমিক শাখার প্রবিণ শিক্ষক জনাব আলী আকবর খান। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আহমদের মা মারা গেছে ছোটকালে। আমি তাকে বাবা মায়ের আদর ভাল ভাবে দিতে পারিনি। আপনারা ওর বাবা আপনারা ওর মা। আপনারা যদি তাকে হত্যার উদ্দেশ্য সমুদ্রে ফেলে দিয়ে বলেন যে, তাকে সাঁতার শেখাচ্ছেন। আমি তাই বিশ্বাস করব। বিশ্বাসের শক্তি নিয়েই বেঁচে আছি। শিক্ষকরা একটু কড়া হলেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে হবে, রাস্তায় দাড়িয়ে অপমান করতে হবে বা স্কুলের ভিতরে গিয়ে সিনক্রিয়েট করতে হবে এমন অভিভাবক হিসাবে আমাকে কোনদিনই পাবেন না। আমার ছেলেকে শক্ত এবং বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। আমার আকাঙ্খা এমন নয় যে, সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা নিছক বড় গদি দখল করা বা গদিতে বসা অফিসার হবে। আমার আকাঙ্খা আমার ছেলে একজন মানুষ হবে, মানুষ হওয়ার পর সে যা হতে চায় হবে আমি কিছু চাপিয়ে দেব না। আপনারা আমার ছেলেকে যে কোন কাজে লাগাতে পারবেন এমনকি স্কুলে ঝাড়ু–দেওয়াতেও পারবেন। আমার কোন আপত্তি থাকবেনা। যদিও আইন, শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের আঘাত করা যাবে না, কিন্তু আমার কাছে কেন যেন মনে হয়, আজকের যে সামাজিক অবক্ষয়, অমর্যাদা তা এসেছে এই শাসনের অভাবে। হালকা অনুশাসনের পক্ষে আমি। তবে এটাও ঠিক এমন অনেক শিক্ষক আছেন যারা, অহেতুক আঘাত করেন বা এত আঘাত করেন যা শিশুর শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা তৈরি করে। যা একে বারেই অমানবিক। সবচেয়ে বড় কথা, ঘটনা যাই হোক, নাগরিক হিসেবে এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলতে হবে। আমি বাবা, আমি শিক্ষক নই। সুতরাং আমার কথাগুলোকে উপদেশ মনে করবেন না। মনে করবেন কথা উঠেছে তাই আমার মনের কথা বলেছি। বলে থামলেন প্রিন্সিপাল সাহেব।
প্রবিণ শিক্ষক বললেন, আমাদের প্রতি অভিভাবকদের যে বিশ্বাস, ভালবাসা, সম্মান এটা নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। বদলী জনিত কারণে উনি এখানে এসেছেন কয়েক বছর আগে। আমরা তার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে চাই। আমি চাই সাত দিনের মধ্যে মাদকের মূলোৎপাটন।
ঠিক আছে তাহলে আজকের মতো মিটিং এখানে শেষ করতে চাই। সবাইকে ধন্যবাদ। তবে যাবার সময় জনাব আলী আকবর খান, সম্মানীত সভাপতি এবং আহমদ এই তিনজনের সাথে একটু বসব। কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কথা যেহেতু উঠেছে তার সমাধান করে আপনাদের জানাচ্ছি।
সবাই উঠে যেতে শুরু করলেন। আহমদ খেয়াল করল স্কুল কমিটির নবীন সদস্য অস্বাভাবিকভাবে এবং দ্রুততার সাথে তার পকেটের কলমটি টেবিলে রেখে দড়জার দিকে রওনা দিল। এমনভাবে কলমটি রাখল যে কেউ দেখলে মনে করবে পকেটে হাত দেয়ার সময় পড়ে গেছে। আহমদও তাই ভাবত যদি শেষে লোকটি কলমের মুখটি প্রিন্সিপালের দিকে ঘুরিয়ে না রাখতো।
সবার যাওয়া শেষ হলে প্রিন্সিপাল স্যার নিজ আসনে বসে বললেন, আপনারা দেখছেন আমরা খুব বিপদে। তার উপর সাংবাদিকদের চাপ। অবশ্য চাপ আমি ভাবছিনা। আমি মনে করছি তাদের চাপেই আমার প্রতিষ্ঠানটি কলঙ্কমুক্ত হতে দ্রুততার সাথে কাজ করছে। বরং তারা প্রকাশ করে দিলেতো আরও অসম্মানের হতো। উপর থেকে তদন্ত হতো। আরও কত কি? আমার তো মনে হচ্ছে আজকে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে এক বা একাধিক জন…
কথা শেষ করতে পারলেন না প্রিন্সিপাল স্যার। স্যার, আমি একটা ছোট্ট কথা বলতে চাই। বলে আহমদ মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে সবাইকে চুপ থাকতে বলল। ছোট মানুষ হিসাবে এভাবে নির্দেশ করা বা অনুরোধ করতে তার কষ্ট হচ্ছিল। তারপরেও উপায় ছিলনা। আহমদ ইশারা করার পর টেবিল থেকে কলমটি নিয়ে একটু নেড়ে চেড়ে টেবিলের উপর রাখল। কলমটি যখন নাড়া চাড়া করছিল তখন আহমদের চোখের ভ্রু একটু কুচকে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। ব্যাপারটি খেয়াল করছিলেন রুমের অন্য তিনজনও। সভাপতি সাহেব দীর্ঘক্ষণ পর মুখ খুললেন, তোমার সম্পর্কে শুনেছি কিন্তু ইশারা করে থামতে বলা এবং কলম নিয়ে নাড়া চাড়া করতে দেখা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা।
সরি, আসলে কলমের মতো যেটি দেখছেন সেটি কলম নয়। ওটা একটা গোপন ক্যামেরা। দেখতে কলমের মতো। এটা ভিডিও রেকর্ডিং করতেপারে এবং সাথে সাউন্ডও। আমি সেজন্যই অসৌজন্যমূলকভাবে আপনাদের থামিয়ে দিয়েছিলাম। আমি খুবই দুঃখিত।
সভাপতি সাহেব আবার মুখ খুললেন, তোমার সম্পর্কে কিছু শুনেছি আজ দেখে বুঝলাম বয়সের তুলনায় তোমার চিন্তা খুবই দ্রুত চলে। আমরা গর্বিত তোমাকে পেয়ে তুমি জে এসসি’তে যেমন আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছিলে। তেমনি ভয়ংকর এই মাদকের ছোবল এবং ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করবে এটা আমাদের সবার দাবী।
—–চলবে —–